পাত্র হিসেবে ভার্সিটির সিনিয়র ভাই “রাদ শাহমাত” কে দেখে চক্ষু বিস্ফোরিত হয় নজরাতের! মিনিট খানেক হয়েছে পাত্র পক্ষ এসেছে নজরাতকে দেখতে। এদিকে হালকা সাজগোজ করে বসেছিল নজরাত। পাত্র পক্ষ আসার পর নজরাতের বান্ধবী হুমাইসা লুকিয়ে দেখতে যায় পাত্র দেখতে কেমন। দেখে এসে হুমাইসা জানায় পাত্র আর কেউ নয় তাদের ভার্সিটির বড় ভাই রাদ শাহমাত। হুমাইসার কথা বিশ্বাস হয় না নজরাতের। তাই নিজ চোখে দেখতে পর্দার আড়ালে থেকে উঁকি দেয়। যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ।
দ্রুত দরজা বন্ধ করে হুমাইসাকে গিয়ে বলে,
—” দোস্ত আমার এখন কি হবে? আজকে তো আমার ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে।
হুমাইসা হাসতে হাসতে বলল,
—” তোর বদলে আমি না হয় পাত্রী হিসেবে যাই! কি বলিস?
হুমাইসার কথায় সায় দিয়ে নজরাত বলল,
—” দারুন আইডিয়া। চল তোকে রেডি করে দেই?
—” এই একদম না। ওটা তো আমি এমনিতেই মজা করে বলেছি। তুই সিরিয়াস নিয়ে নিবি কে জানে? শোন ভয় পাস না কিছু হবে না।
কিন্তু নজরাত কিছুতেই যাবে না ওই দাম্ভিক, অহং কার মানুষটার সামনে। সবচেয়ে বড় কথা নজরাত, রাদ শাহমাত এর সামনে গেলেই তাকে চিনে ফেলবে। কারণ গতকাল ভার্সিটিতে রাদ শাহমাত এর সাথে কথা বলতে গিয়েছিল নজরাত কিন্তু রাদ শাহমাত তাকে পাত্তা দেয়নি। এরপর থেকে বান্ধবীদের সাথে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারেনি নজরাত। নজরাতকে তার বান্ধবীরা মিলে ডেয়ার দিয়েছিল, তাদের ভার্সিটির বড় ভাই রাদ শাহমাতের সাথে আলাপ করে বন্ধুত্ব করার।
ভার্সিটির টিচার থেকে শুরু করে স্টুডেন্টদের কাছে খুবই পরিচিত একটা মুখ রাদ শাহমাত। রাজনীতিতে তার জুড়ি নেই তাছাড়া খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট রাদ শাহমাত।
স্কুলে থাকাকালীন প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রতিজ্ঞা করেছে জীবনে আর কোন দিন প্রেম নামক সম্পর্কে জড়াবে না। একেবারে বিয়ে করবে। তাই ভার্সিটির কোন মেয়েদের পাত্তা দেয় না রাদ শাহমাত। এমনকি মেয়েদের সাথে কথা বলতেও ঘৃনাবোধ কাজ করে নিজের মধ্যে।
কিন্তু নজরাত রাদ শাহমাতের সম্পর্কে জানতো না।
তাইতো বান্ধবীদের পাল্লায় পড়ে রাদ শাহমাত এর সাথে বন্ধুত্ব করতে যায়। নজরাতের বান্ধবীরা জানতো রাদ শাহমাত কোন মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করে না। তাই ইচ্ছে করেই এই ডেয়ার দেয়। যদিও হুমাইসা সাবধান করেছিল নজরাতকে কিন্তু নজরাত শুনে নাই, জেদ ধরে বন্ধুত্ব করে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিল তার বান্ধবীদের। লম্বা দম নিয়ে এগিয়ে যায় রাদ শাহমাত এর কাছে। গিয়ে বলে,
—” হাই ভাইয়া!
নজরাত আচমকা এসে কথা বলায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় রাদ শাহমাত। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
—” কি চাই?
—” বন্ধুত্ব! আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই ভাইয়া।
রাদ শাহমাত তখন মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
—” সরি।
তারপর রোদ চশমা চোখে দিয়ে এক প্রকার ভাব দেখিয়ে বন্ধুদের নিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করে। আশেপাশে যতজন দেখেছে সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়েছে। শেষে বড়া ক্যাম্পাসে অপমানিত হয়ে ফিরে আসে নজরাত। এরপর থেকে যখনই রাদ শাহমাত এর কথা মনে পড়ে তখনই গাল মন্দ করতে ভুলে না নজরাত। যাই হোক এখন রাদ শাহমাত এর সামনে থেকে পালাবে কিভাবে তার উপায় খুঁজতে ব্যস্ত দুই বান্ধবী। তখনই নজরাতের নানু মনি এসে বলল,
—” নজরাত পোলা তো চান্দের লাহান সুন্দর। আমার তো তোরে নিয়া হিং সা হইতাছে।
নজরাত আছে নজরাতের জ্বালায় এর মধ্যে তিনি এসে রাদ শাহমাতের গুন গান গাইতে শুরু করে দিয়েছেন। তাই নজরাত কিঞ্চিত রে গে বলল,
–” বুড়ি তোমার যেহেতু এত পছন্দ হয়েছে, তুমি ওই দাম্ভিক অহং কার ছেলেকে বিয়ে করে নাও।
নজরাতের নানু সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
—” তুই কেমনে জানলি ওই ছেলের দাম্ভিক
অহং কার আছে?
–” সুন্দর ছেলেরা ওইরকমই হয়। তাই আমি ঠিক করেছি কালো আর বেটে দেখে বিয়ে করবো তাহলে আমাকে রাজরানীর মত করে রাখবে। যাই হোক বুড়ি তুমি এখান থেকে এখন যাও আমি রেডি হচ্ছি দেখতে পাচ্ছ না?
—” হ যাই। তুই ভালা কইরা সাইজ্জা আয়।
নানু চলে যাওয়ার পর হুমাইসা বলল দোস্ত একটা আইডিয়া পেয়েছি বলবো?
নজরাত দরজা বন্ধ করে এসে বলল,
–” তাড়াতাড়ি বল?
–” চল তোকে ভারি মেকআপ করে দেই, তাহলে ওই ব্যাটা তোকে আর চিনতে পারবে না।
তারপর হুমাইসা খুব ভারি মেকআপ করে দিল নজরাতের। যার দরুন আপন মানুষ ছাড়া, একবার দুবার যারা নজরাতকে দেখেছে তারা চিনতেই পারবে না। এরমধ্যে অনেকবার তাদেরকে ডাকাডাকি করে গেছে নজরাতের মা তরিকা বেগম।
তারপর যখন নজরাতকে পাত্র পক্ষের সামনে নিয়ে যেতে পাশের বাসার ঘটক, কলি আন্টি রুমে আসেন তখন নজরাতকে দেখে বললেন,
—” একি এত সাজ দিয়েছো কেন?
এ কথা বলতে হুমাইসা আর নজরাত ভয় পেয়ে যায়। এই মহিলা যদি এখন বলে যাও এমন সাজ চলবে না। মুখ ধুয়ে হালকা সেজে এসো তখন কি হবে? তাই হুমাইসা জটপট বলে ওঠে,
—” আন্টি এই সাজ এখন ট্রেন্ডে আছে, তাই এটাই ভালো হবে।
মিসেস কলি আর ঘাটলেন না বললেন,
—” ঠিক আছে। তোমরা আজকালকার পোলাপান তোমরাই ভালো বোঝো সাজগোজের আমরা অত শত বুঝি না। তারা বারবার বলছিল এখানো মেয়ে নিয়ে যাচ্ছি না কেন। এখন চলো চলো অনেক সময় হয়ে গেছে।
দুই বান্ধবী হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেন। তবুও মনের মধ্যে একটা ভয় রয়েই গেছে।
পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে সালাম দেয় নজরাত। রাদ শাহমাতের মা আমেনা বেগম সালামের জবাব দিয়ে বললেন,
—” বসো।
নজরাত বসার পর রাদ শাহমাতের বোন জিজ্ঞাসা করলো নাম কি তোমার?
নজরাত জবাব দেয়,
—” রূপকথা
—” আগে পরে কিছু নেই?
নজরাতের বুক ধড়ফড় করতে লাগলো ভ য়ে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
—” রূপকথা ইসলাম।
—” মা শা আল্লাহ সুন্দর নাম তোমার।
পাত্রী দেখতে রাদ শাহমাত তার মা, খালা আর বড় বোন এসেছেন। রাদ শাহমাতের খালা বোনদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ। অনেকটা সেকেলের মানুষদের মতো। তাই নজরাত কে বললেন তোমার ঠিকানাটা লিখে দেখাও তো মা। নজরাতের ছোট ভাই রাফি তখন দৌড়ে গিয়ে খাতা কলম নিয়ে এসে বোনকে দেয়। রাফির কান্ড দেখে রাদ শাহমাত হাসে। রাফিকে নিজের পাশে বসিয়ে নাম আর কোন ক্লাসে পড়াশোনা করে এসব জিজ্ঞাসা করে। এদিকে নজরাত ঠিকানা লিখতে গিয়ে কলম ভেঙে যাওয়ার অবস্থা। মনে হচ্ছে এই প্রথম সে লিখতে বসেছে। হাত কাঁপছে তার। এমনিতে নজরাতের হাতের লেখা ভীষণ সুন্দর কিন্তু ভয়ে এখন খুব বি চ্ছিরি হয়ে যাচ্ছে। তবুও কোনরকম লিখে দেয়। রাদ শাহমাতের খালা মনি খাতাটা নিয়ে পড়ে। তারপর বাবার কথা জিজ্ঞাসা করলে নজরাত এর চোখ ছলছল হয়ে উঠে। নজরাতের এস এস সি পরীক্ষা চলাকালীন তার বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। তারপর ও বাঁচা নো যায়নি নজরাত এর বাবাকে। বাবার মৃ ত্যুর দুদিন পরেই বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছে তাকে।
নজরাতকে কেউ বাবার কথা বললে কান্না করে দেয়। তাই মিসেস কলি বললেন,
—” ওর বাবা বেঁ চে নেই। প্রায় তিন বছর আগে
মা রা গেছেন।
এ কথা শুনে সবাই দুঃখিত হলেন। নজরাত কে শান্তনা দিলেন রাদ শাহমাতের খালা মনি। তারপর তরিকা বেগমের সাথে আরো কিছু গল্প করে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন তারা।
সন্ধ্যার সময় মিসেস কলি এসে হায়হুতাশ করতে করতে বললেন,
—” ভাবী আমি আগেই আপনার মেয়েকে বলেছিলাম এমন সাজ দিতে না। এখন পাত্র বাসায় গিয়ে বলছে মেয়ে নাকি মেকআপ সুন্দরী। পাত্র ন্যাচারাল সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে চায়।
আমিও এই পাত্র হাতছাড়া করবো না দরকার হলে আবারো নিয়ে আসবো!….
#চলবে?
#অনুপম_ভালোবাসা(১)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(আসসালামু আলাইকুম।
বহুদিন পর গল্প দিলাম। গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন। তাহলে সামনে আগাবো ইনশা আল্লাহ।)