#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#পর্ব_৩১
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)
অরু ভাইকে ভাবতে দেখে পিঠ চাপড়ে বলল,“তুমি বসে বসে ভাবো, আমি যাচ্ছি।”
মিঠু নিরুত্তর থেকে ফোন হাতে নিলো। পরপর স্ক্রিনে আঙ্গুল চালিয়ে তাকিয়ে রইলো নিমেষহীন। রিং হয়ে ফোন কে*টে গেল। উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট পিষ্ট করে চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ করলো। দ্বিতীয়বারের মতো কল কে*টে যাওয়ায় ঠোঁট গোল করে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বিছানায় এক প্রকার ফোন ছুড়ে রাখলো। শরীর আবারও উত্তপ্ত হয়ে আসছে, সাথে সহ্য করতে হচ্ছে দু-চোখের জ্বলুনি। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে মুখ দিয়ে ‘চ’ সূচক শব্দ করলো মিঠু। মেয়েটা কল ধরলো না কেন? থম ধরে বসে থেকে আরও একবার সুহার কথার মর্মার্থ বিশ্লেষণের চেষ্টায় নামলো। হঠাৎ কিছু একটা চিন্তা মাথায় খেলে যেতেই রুগ্ন ঠোঁটে তীর্যক হাসলো। হাঁক ছেড়ে তরীকে ডাকলো।
“আপু!”
তরী তড়িঘড়ি করে মিঠুর ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এলো৷
“কীরে কিছু লাগবে?”
মিঠু ঠান্ডা গলায় বলল,“এখানে বসো।”
তরী ধীরস্থিরভাবে মিঠুর পাশে বসলো। গায়ের সাথে গা ঘেঁষে যেতেই তরী মুঠোয় তুলে নিলো মিঠুর হাত।
চিন্তিত কন্ঠে বলল,“তোর তো দেখছি আবার জ্বর আসছে।”
“জ্বর কমে যাবে। তুমি টেনশন করো না-তো। আগে আমার কথা শোন।”
“বল্।”
ভাইবোন কিছু একটা নিয়ে পরামর্শ করলো। রামি দুপুর পর্যন্ত এখানেই ছিলো। বিকেল পর্যন্ত কয়েক দফা এসে দেখে গিয়েছে মিঠুকে। এখন আবার এসে যোগ হলো। অরুও বেরিয়ে এলো। রামির দিকে নজর পড়তেই ভড়কে গেল। সকালের কথা সে ভুলেই বসেছিল। রামি কটমট চোখে তাকিয়ে আছে। অরু ভেংচি কে*টে বসে পড়লো তরীর পাশে।
মিঠু আর তরীর আলাপের মাঝে তরী বলে উঠলো,“তোর ভাইয়াকে আগে জানাই।”
মিঠু গম্ভীর স্বরে বলল,“সে তুমি যেভাবে পারো, ম্যানেজ করো। আমি এখন একটু ঘুমাবো।”
“তুই তাহলে ঘুমা, আমি যাচ্ছি।”বলে তরী উঠে গেল। মিঠু শুয়ে পড়েও মাথা উঁচিয়ে রামি আর অরুর দিকে তাকালো। দুজনের চেহারা বলে দিচ্ছে এক্ষুণি কোন একটা কাণ্ড ঘটাবে। মিঠু ধমক দিয়ে বলল,“তোদের দুজনকে কি আলাদা করে যেতে বলতে হবে?”
রামি দমে গেল না। সে-ও তেতে উঠে বলল,“দুই ভাইবোন পেয়েছিস কী আমাকে, হ্যাঁ? যা ইচ্ছে করে বেড়াচ্ছিস।”
মিঠু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,“যাবি তোরা? ক্লান্ত লাগছে আমার।”
রামি অরু দুজনই বেরিয়ে গেল। দরজার বাইরে পা রাখার সাথে সাথেই অরুর মাথায় চপেটাঘাত পড়লো। মাথা ধরে ‘উঁহ্’ শব্দ করে পেছন ঘুরলো। রামি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,“বে*য়া*দ*ব, আমার জামাকাপড় ভিজিয়ে রেখেছিলি কেন? তুই জানিস, সকালে আমি শুধু তোয়ালে পরে ঘরে বসেছিলাম।”
অরু মাথা ঘষা বাদ দিয়ে আফসোস করে বলল,“ইশ্! মিস করে গেলাম। ফেসবুকে আপলোড দিয়ে হেব্বি রিচ কামাতে পারতাম।”
রামির হতাশ হলো। এছাড়া আর কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছে না। এই মেয়েকে দিয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। ভাগ্যিস অরু দেখেনি! নিউজ চ্যানেলে “পাইলট বরের ইজ্জত লু*টে ফেসবুকে রিচ কামাই করছে মেডিকেল ছাত্রী” হেডলাইন কল্পনা করে আৎকে উঠলো রামি। ত্রস্ত মাথা ঝাঁকিয়ে অরুর ঘরে গিয়ে বসলো। সাদা টি-শার্ট খুলে রেখে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল। অরু অমিকে নিয়ে বাড়ির সামনে হাঁটতে বের হলো। অমিকে বলল,“শোন্ তোকে আজ বস্তা ভরে বেচে দেব। আর আমাদের বাড়িতে আসতে পারবি না।”
অমি ঘাড় কাঁত করে তাকালো অরুর দিকে। গলার স্বর উঁচু করে বলল,“তোমাকে বেচে দেব আমি।”
“কীভাবে? তুই আমাকে বস্তায় ভরতে পারবি?”
“আমার আম্মু, পাপা, মা, চাচ্চু, দাদুআপু, ঈশু মিলে তোমাকে বস্তায় ভরে বেচে দেব।”
অরু মুখ আড়াল করে হেসে অমির দিকে তাকালো। চোখজোড়া ছোটো করে বলল,“আমাকে তোর কাছ থেকে কিনবে কে?”
অমি গালে হাত দিয়ে ভাবলো। সত্যিই তো, কার কাছে বেচে দেবে? হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার এদিক-ওদিক তাকিয়ে একজন মধ্যবয়সী লোককে দেখে অরুর হাত ছেড়ে ছুটে গেল। হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপিয়ে যাওয়া গলায় লোকটিকে বলল,“আমার কাছ থেকে একটা জিনিস কিনবেন?”
লোকটি চারপাশে তাকিয়ে বাচ্চাটির মা বা বাবাকে খুঁজে চলেছে। রাস্তায় অনেকেই যাতায়াত করছে। বাচ্চার অভিভাবক কে, সেটা চেনা মুশকিল। ভদ্রলোক নিচু হয়ে ঝুঁকে বললেন,“তুমি কী বিক্রি করবে?”
অমি আঙ্গুলের ইশারায় তাদের দিকে এগিয়ে আসা অরুকে দেখিয়ে বলল,“আমার খালামনিকে নিয়ে যান। টাকা দিতে হবে না। এমনিতেই বেচে দিয়েছি।”
লোকটি হেসে বললেন,“কেন? তোমার খালামনি কী করেছে?”
অমি গাল ফুলিয়ে বলল,“খালামনি পঁচা, আমাকে বেচে দেবে বলেছে। তার আগেই তাঁকে আমি বেচে দিয়েছি।”
লোকটি উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন। ততক্ষণে অরু এগিয়ে এসে অমির পাশে দাঁড়ালো। ভদ্রলোক মৃদু হেসে বললেন,“আপনার ভাগ্নে তো দেখছি বেশ পাঁকা! আপনাকে বেচে দিয়ে গেল।”
অরুও সৌজন্যতার খাতিরে হেসে অমিকে কোলে নিয়ে চলে এলো। লোকটিও আর দাঁড়িয়ে থাকলেন না। চলে গেলেন নিজ গন্তব্যে।
অমিকে নিয়ে হেঁটে এসে নিজের ঘরে ঢুকলো অরু। রামি ঘুমিয়ে আছে। সে পাশে বসে কিছুক্ষণ রামির ফোন ঘাঁটল। তারপর ফোন রেখে দিয়ে পা নাচিয়ে দুষ্ট বুদ্ধির সন্ধান করলো। অনেক ভেবেচিন্তে মিটিমিটি হেসে রামির টি-শার্ট হাতে নিলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে টকটকা লাল রঙের লিপস্টিক বের করে খুব যত্ন করে টি-শার্টের পেছন দিকে ছাপ বসিয়ে দিল। রামি যেভাবে রেখেছিল, ঠিক সেভাবেই টি-শার্টটি রেখে দিল অরু। অপেক্ষা করলো রামির ঘুম ভাঙার। রামি ঘুম থেকে উঠলো সন্ধ্যার পর। অরু ততক্ষণে বাইরে থেকে ঘুরে এসে বই নিয়ে বসেছে। রামিকে আড়মোড়া ভেঙে উঠতে দেখে এগিয়ে এসে টি-শার্ট হাতে নিলো। বলল,“এটা খুলে ঘুমাতে হয়? নাও পরে নাও।”
পরপরই টি-শার্টে চোখ দিয়ে আৎকে উঠলো যেন অরু। মৃদু চেঁচিয়ে বলল,“এসব কী?”
রামি বুঝতে পারলো না। সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে। মাথা ঝিঁঝিঁ করছে। ঘুম ভাঙা গলায় শুধালো,“কী?”
অরু অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রামির সামনে এসে দাঁড়ালো। লিপস্টিকের ছাপ দেখিয়ে বলল,“দেখ, এসব কী? কার সাথে দেখা করে এখানে এসেছো?”
কপাল কুঁচকে গেল রামির। টি-শার্ট হাতে নিয়ে বলল,“আমি বাসা থেকে এটা পরে এখানেই এসেছি। আর আজ আমি বাসা থেকে অন্যকোথাও যাইনি। তাই উল্টাপাল্টা চিন্তা বাদ দে।”
অরু বলল,“তারমানে তুমি বলতে চাইছো, আজ যাওনি কিন্তু অন্যসময় মেয়েদের সাথে দেখা করতে যাও, তাইতো?”
“আমার এই টি-শার্ট কাল তুই ধুয়েছিস। তাহলে?”
“তাহলে কী?”
রামি সূঁচালো চোখে তাকিয়ে থেকে তীর্যক হাসলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে লিপস্টিক হাতে নিয়ে বলল,“তাহলে আমাকে ফাঁদে ফেলার জন্যই এই ফন্দি!”
অরু লিপস্টিক কেঁড়ে নিয়ে বলল,“কীসের ফন্দি?”
রামি মৃদু হেসে অরুর কাছে এগিয়ে গেল। চিকন ওষ্ঠজোড়া অরুর কান ছুঁয়ে দিতেই শিউরে উঠলো অরু। রামি ফিসফিস শব্দে হেসে বলল,“সকাল থেকে বড্ডো জ্বালিয়েছেন ম্যাডাম, এবার আমার পালা।”
অরুর গালদুটো ফুলেফেঁপে উঠছে। দৃষ্টি নত তার। সুযোগ খুঁজছে রামির কাছ থেকে পালানোর। রামি দূরত্ব বাড়িয়ে দরজা লক করে দিল। অধর প্রশস্ত করে বলল,“পালানোর সুযোগ খুঁজে লাভ নেই। আজ আপনি ছাড়া পাচ্ছেন না।”
অরু চোটপাট দেখিয়ে বলল,“যাও তো এখান থেকে। আমি এখন পড়তে বসবো।”
“পড়তে তো নিষেধ করিনি। পড়া শেষ হলেই আমি গুণে গুণে শোধ তুলবো।”
বলেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো রামি।
সকালে ঘুম ভাঙলো অরুর। নিজেকে আবিষ্কার করলো রামির শক্ত বুকে। একে অপরের সাথে লেপ্টে আছে। রামির একহাত অরুর পিঠে। জেগে গিয়েও বিছানা ছাড়ার তাড়া দেখালো না অরু। নিখুঁত চোখে পর্যবেক্ষণ করলো রামিকে। নাক, চোখ, গাল, ঠোঁট। চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে তাকে। অরু মাথা উঁচু করে রামির গালে তপ্ত চুমু খেল। আবারও দুষ্টুমি মাথায় চেপে বসলো। রামির থুতনিতে সজোরে কামড় বসাতেই রামি চোখমুখ কুঁচকে নিলো। খানিক সময়ের মাঝেই তার কুঁচকানো চোখমুখ শীতল হয়ে গেল। চোখের পাতা টে*নে খুলে অরুকে আরেকটু আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। বিবশ কন্ঠে বলল,“কাল কী শা*স্তি কম পড়ে গিয়েছিল, যে সকাল সকাল নিজের শা*স্তি*র ব্যবস্থা করছিস।”
অরু জবাব দিলো না। তার দৃষ্টিতে ঘোর। রামি জবাবের অপেক্ষা করলো না। ক্রমশ ঝুঁকে এলো অরুর দিকে।
★★★
বিকেল নাগাদ দু-বাড়ির লোকজন সেজেগুজে বেশ পরিপাটি। সেবার রামি উপস্থিত ছিলো না। আজ রামিসহ যাচ্ছে সুহাদের বাসায়। অথচ এ খবর সুহার কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। অরু আর তরী আজ আর গেল না। বড়োরা কথা বলে সব ঠিক করে আসবে। মিঠুর শরীর এখন খানিকটা সুস্থতার দিকে। তবে তাকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ সুস্থ আছে সে। কালো রঙের পাঞ্জাবি পরে কনুই পর্যন্ত হাতা গুটিয়ে চুলে আঙ্গুল চালিয়ে পেছন দিকে ঠেলে দিল। হাতঘড়ি পরে বেরিয়ে পড়লো সবার সাথে।
সকলে উপস্থিত হলো সুহার মামার বাড়ি। দরজা খুলে সুহার মামি অপরিচিত কয়েকটি মুখ দেখে প্রশ্ন করলেন,“জি কাকে চাই?”
তরীর বাবা সুহার মামার নাম সম্বোধন করে বললেন, “এটা কি জনাব খালেকুজ্জামানের বাসা?”
“জি।”
“আমরা উনার কাছেই এসেছি।”
সুহার মামি দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে পড়লেন।
“ক্ষমা করবেন! আমি তো আপনাদের চিনতে পারিনি, ভেতরে আসুন।”
মেহমানদের বসার জায়গা দেখিয়ে দিয়ে স্বামী খালেকুজ্জামানকে ডাকতে চলে গেলেন সুহার মামি। বেশি সময় লাগেনি। দুই মিনিটের মাথায় খালেকুজ্জামান চশমা মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে সামনের সোফায় বসলেন। তরীর বাবা সালাম দিতেই খালেকুজ্জামান জবাব দিয়ে বললেন,“চিনলাম না আপনাদের।”
তরীর বাবা কথা না ঘুরিয়ে সোজাভাবে বললেন,“আপনার একটা ভাগ্নি আছে, নাম সুহা।”
কপাল কুঁচকে গেল খালেকুজ্জামানের। গম্ভীর স্বরে বললেন,“তাকে আপনারা কীভাবে চেনেন?”
তরীর বাবা বললেন,“অফিস থেকে যাতায়াতের সময় প্রায়ই আপনার ভাগ্নিকে দেখতে পেত আমার ছেলে। এখন ছেলেকে বিয়ে করাবো, মেয়ে দেখা প্রয়োজন। ছেলে জানালো আপনার ভাগ্নিকে তার পছন্দ। তাই আমরা আপনার কাছে প্রস্তাব রাখতে এসেছি। আপনার মতামত জানালে উপকৃত হতাম।”
সুহার মামা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে সকলকে পর্যবেক্ষণ করে বললেন,“আপনার ভাগ্নি সম্পর্কে কতটুকু জানেন আপনারা?”
“একটা মেয়ের বাড়িতে প্রসৃতাব পাঠাতে হলে যতটুকু জানতে হয়, ততটুকুই।”
“আপনার ছেলে কী করে?”
“রাজনীতি।”
“কীহ্!”
#চলবে……
(রি-চেইক করা হয়নি। ১৩০০+ শব্দ লিখেছি। আজ তুলনামূলক ছোটো হয়েছে। আপনাদের আগে আমিই বলে দিলাম।)