অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী (সিজন২) পর্ব ২৯

0
650

#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#পর্ব_২৯
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। মামা পুরোদমে সুহাকে এড়িয়ে চলছেন। তবে মনে একটা আশার আলো আছে, যে রাগ পড়লে মামা তাকে কাছে ডাকবেন। মামিকে বলে মামাতো বোন তন্নিকে নিয়ে অবনির বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো সে।
ঝামেলার কারণে দুদিন অফিস কামাই দিতে হয়েছে।
বেল দিতেই অবনির মা এসে দরজা খুলে দিলেন। সুহা চোখমুখ উজ্জ্বল করে শুধালো,
“কেমন আছো আন্টি?”

“আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। হুট করে বাড়িতে গেলে। ওদিকে সবটা ঠিকঠাক?”
অবনির মা শঙ্কিত মনে প্রশ্ন ছুড়তেই সুহার অধর কোণ আরেকটু প্রসারিত হলো। বলল,“সব ঠিক আছে। অবনি কোথায়? অফিস থেকে তো অনেক আগেই ফেরার কথা।”

“ঘরেই আছে।” অতঃপর তন্নির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করার পূর্বেই সুহা বুঝতে পেরে বলল,“আমার মামাতো বোন।”

“আচ্ছা তোমরা অবনির ঘরে যাও, আমি চা নিয়ে আসছি।”

অবনি অফিস থেকে ফিরে জামাকাপড় না ছাড়িয়েই শুয়ে পড়েছে। হাতে ফোন।
সুহা ধপ করে বিছানায় বসতেই অবনির টনক নড়লো। এলোমেলো হাত-পা গুটিয়ে উঠে বসলো। হামলে পড়ে সুহাকে প্রশ্ন করার জন্য প্রস্তুত হতেই চোখ পড়লো তন্নির উপর। অবনি আঙ্গুল উঁচিয়ে ভাবুক হয়ে বলল,“চেনা চেনা লাগছে।”

সুহা হেসে বলল,“আমার মামাতো বোন তন্নি। ভার্সিটিতে পড়াকালীন ওঁর আরো ছোটোবেলার ছবি দেখেছিস আমার ফোনে।”

সুহার চোখমুখ ঝলমল করছে। দীর্ঘ দু’বছরে এতটা প্রাণবন্ত দেখেনি মেয়েটাকে। অবনি শুধালো,“হঠাৎ বাসায় গেলি। ওদিকের খবর কী?”

সুহা ঝলমলে মুখশ্রী নিয়ে গদগদ ভঙ্গিতে বলল,“আমি এখন থেকে বাড়িতেই থাকবো। মামার অনুমতি পেয়েছি।”

অবনি এতক্ষণে সুহার হাস্যজ্জ্বল চেহারার আড়ালে থাকা কারণ ধরতে পারলো। তার ঠোঁটেও হাসি ফোটে। বলল,“তোর মামা কীভাবে মানলেন?”

“আমি বলে দিয়েছি আর মামার কথার অবাধ্য হবো না। যেভাবে বলবেন, সবটা মেনে নেব।”

চা-নাস্তা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন অবনির মা। তিনি মুচকি হেসে বললেন,“তোমার মামার যে রাগ ভেঙেছে, এটাই বেশি। তুমি যে ভুল করেছো, তাতে এতটুকু রাগ কিছুই না।”

দীর্ঘশ্বাস ফেললো সুহা। অবনির মা আর দেরি করলেন না। নিজের কাজে চলে গেলেন। অবনি কিছুক্ষণ যাবত ছটফট করে উঠছে সুহাকে কিছু বলার জন্য। তন্নি সামনে থাকায় কিছু বলতে পারছে না। সুহার চোখে চোখ পড়তেই তাকে ইশারা দিল। সুহাও একই রকমভাবে বোঝালো পরে যা বলার বলবে।
অধৈর্য হয়ে পড়লো অবনি। তন্নির উদ্দেশ্যে বলল,“তুমি একটু বসো মিষ্টি আপু। আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলা হয়েছে। সে ব্যাপারে সুহার সাথে একটু পারসোনাল কথা আছে।”

তন্নি মৃদু হেসে বলল,“সমস্যা নেই আপু। আপনারা কথা বলুন, আমি বরং আপনাদের বাসা ঘুরে দেখি।”

“আচ্ছা।”
তন্নি বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই বাইরে চেক করে দরজা চাপিয়ে দিল অবনি। সুহা ফোঁস করে উঠলো।
“কী এমন জরুরী কথা তোর, যে তন্নিকে বের করেই বলতে হবে? আরে বাবা পরেও বলতে পারতি।”

অবনি দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বলল,“তুই কীভাবে এতটা রিল্যাক্স আছিস? আমার তো সবটা না জানা পর্যন্ত ভাত হজম হবে না।”

“কী জানতে চাস?”

“তোর মামা কি ইবতেসামের ব্যাপারে জানে?”

এতক্ষণে টনক নড়লো সুহার। ধপ করেই মসৃণ হাসি টুকু নিভে গেল। ভেতরে ভ*য় দানা বাঁধলো। সে তো ইবতেসামের কথা ভুলেই বসেছে। তার ভয়কাতুরে চোখ জোড়া দেখে অবনির আর কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না। গম্ভীর স্বরে বলল,“তুই কি অ*ন্যা*য় করছিস না? বিয়েতে মত দিয়ে এখন মামার উপর সব ছেড়ে দেওয়া কোন ধরনের ভদ্রতা, সভ্যতা? তোর মামা যদি না মানেন? তখন কী করবি? আর ইবতেসাম যদি ক্ষে*পে গিয়ে তোকে তুলে নিয়ে আসে? ভেবে দেখ্, সেই ক্ষমতা কিন্তু তাঁর আছে। বিরাট বড়ো ঝা*মে*লা হতে পারে সুহা।”

শঙ্কায় সুহার মুখের কথা উড়ে গেল। তার শব্দভাণ্ডার যেন শূন্য হয়ে এলো। গলা রোধ হয়ে আসতে চাইছে। দলা পাকানো কান্না হুঁ হুঁ করে আছড়ে পড়তে চাইছে। চোখ দুটো ভরে এলো টলটলে জলে। অবনি বলল,“কী দরকার ছিল এখন বাসায় যাওয়ার? একেবারে বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে যেতে পারতি। তখন নাতিনাতনির মুখ দেখে তোর মামা আর রাগ ধরে রাখতে পারতেন না।”

সুহা চোখ রাঙিয়ে বলল,“আমি আছি নিজের চিন্তায়, আর সে বসে আছে বাচ্চাকাচ্চার চিন্তায়।”

অবনি হেসে ফেললো। সুহাকে দুহাতে ঝাপটে ধরে বলল,“এত চিন্তা করিস না তো। ইবতেসামকে বল তোর মামার কাছে প্রস্তাব রাখতে। যেমনটা আমাদের বাসায় রেখেছিল, তেমনি। উনাকে তোর ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললে উনি বুঝবেন। কতটা ভালোবাসেন তোকে, সেদিন আমি টের পেয়েছি। আমাদের বাসার সামনে এসেছেন তোকে দেখার জন্য। বারান্দায় আমি দাঁড়ানো ছিলাম। বললাম তুই বাড়িতে গিয়েছিস। আমার কাছে তোর মামা বাড়ির ঠিকানা চাইলো। আমি দিতে চাইছিলাম না। এক প্রকার যুদ্ধ করে আমার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়েছে। সেদিন গিয়েছে ওখানে?”

সুহা মাথা হ্যাঁ সূচক মাথা দুলিয়ে জানালো মিঠু সেদিন গিয়েছে। অবনি বলল,“তাহলে উনাকে বুঝিয়ে বল।”

সুহা ভাবলো ব্যাপারটা। কিন্তু ইবতেসামকে কীভাবে বলবে ভেবে পেল না! প্রস্তাব পাঠানোর ব্যাপারে কথা বলবেই বা কীভাবে? ভাবতেই তো তার লজ্জা পাচ্ছে। এক আকাশ সমান অস্বস্তি ঝেঁকে ধরছে। অবনি মিটিমিটি হেসে বলল,“বাবাহ্! আমাদের সুহাও দেখি লজ্জা পায়। এতদিন লজ্জা কোথায় ছিল গো?”

অবনির মজা করা বুঝতে পেরে কিশোরীর মতো তেতে উঠলো সুহা।
“বয়ফ্রেন্ডের সাথে প্রথম দেখা করতে যাওয়ার দিন অতি আবেগে আপ্লুত হয়ে যে বাথরুমে পড়ে কোমর ভেঙেছিলেন, সেটা কি আপনার বয়ফ্রেন্ডকে বলতে হবে?”

অবনির দু-ঠোঁট এক হয়ে গেল। মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে বসে রইলো। সুহা দরজা খুলে তন্নিকে খুঁজে বের করলো। টুকিটাকি নিজের কিছু জিনিসপত্র নিয়ে বাসায় চলে আসলো।

মিঠু কাজের ফাঁকে গতদিন সুহার খোঁজ নিতে ভুলেই গেল। তাছাড়া একটু ঠান্ডাও লেগেছে। একটুখানি অবসর পেতেই সবার থেকে আলাদা একটা জায়গা বসলো। মুঠোফোন চেপে কানে তুললো। রিসিভ হলো প্রথমবারেই।
“কেমন আছেন?”

সুহা মৃদুস্বরে জবাব দিলো,“ভালো। আপনি কেমন আছেন?”

মিঠু এর মাঝে দু-বার হাঁচি দিয়ে ফেলেছে। নাক টে*নে বলল,“আমি ভালো নেই।”

বিচলিত হলো সুহা। কন্ঠস্বরে ব্যাকুলতা টের পেল মিঠু।
“সে-কি! আপনার ঠান্ডা লেগেছে না-কি?”

মিঠু চোখ বুজে হাসলো। কন্ঠ খাদে নামিয়ে কাতর গলায় বলল,“কষ্ট হচ্ছে সুহা!”

সুহা উৎকণ্ঠিত গলায় শুধালো,“কোথায় কষ্ট হচ্ছে?”

“বুকে, ” অতঃপর থেমে বলল,“ ভীষণ কষ্ট হচ্ছে সুহা। একবার এসে হাত দিয়ে দেখবেন? ”

সুহা চুপ করে গেল। মিঠুর ঠাট্টা বুঝতে পেরে গরম স্বরে বলল,“কেন ফোন করেছেন? কী প্রয়োজন?”

“উষ্ণতা।”
মৃদু ঠোঁটে তিন অক্ষরের শব্দ আওড়ালো মিঠু। সুহা অস্বস্তিতে পায়ের নখ খুঁটছে। কিছু বলা প্রয়োজন, অথচ সে বলতে পারছে না লজ্জায়। নিজের এই আমূল পরিবর্তন দেখে নিজেই ভীষণ অবাক হয়! ওপাশে নিস্তব্ধতার বুক ছিঁড়ে আবারও মিঠু আওড়ালো,“ কী হলো সুহা?”

সুহা জবাব না দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বলল,“আমি এখন থেকে বাড়িতেই থাকবো।”

“হু, তাতে কী? আপনি পরিবারের সাথে থাকছেন, এটা তো আনন্দিত হওয়ার মতো সংবাদ।”

সুহা মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল, “আমি মামাকে কথা দিয়েছি উনার সব কথা শুনবো।”

“হু, কিন্তু সমস্যা কোথায়?”

“মামা বা আমাদের কেউ আপনার বা আপনার পরিবারের কথা জানেন না।”

মিঠু বিচলিত হলো না। বরং হেসে ফেললো। বলল,“আপনার বাসায় আমার পরিবার যাবে। এসব নিয়ে টেনশন করবেন না।”

সুহা করুণ গলায় বলল,“আপনি বুঝতে পারছেন না। মামা আমায় সন্দেহ করবেন। আপনার প্রস্তাব ফিরিয়েও দিতে পারেন।”

এ পর্যায়ে এসে মিঠুর চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। এতক্ষণের ফুরফুরে মেজাজ মুহূর্তেই খিটখিটে হয়ে উঠলো। চোয়ালের হাড় থেকে শুরু করে রগ গুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। তবুও শান্ত স্বরে শুধালো,“আপনি কী চান?”

সুহার শরীরে শীতল শ্রোত বয়ে গেল। ঠান্ডা স্বরেও মানুষ কতখানি হিং*স্র*তা ঢেলে দিতে পারে, আজ তার প্রমাণ পেল সুহা। মিঠুর সরল এক প্রশ্ন যেন তীরের মতো এসে বিঁধেছে তার বুকে। মুখ ফোটে কিছুই বলতে পারলো না। মিঠু ফের বলল,“আমার প্রশ্নের জবাব দিলেন না যে? আপনি কী চান? আপনার মামা প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে উনার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে নেবেন?”

সুহা তড়িৎ উত্তর দিল। আর্তনাদ কন্ঠে বলল,
“নাহ্!”

মিঠুর অধর কোণ প্রশস্ত হলো। চোখের পাতা আবেশে নিভে গেল তার। দু-ঠোঁট গোল করে লম্বা শ্বাস ফেলে বুক ফুলিয়ে বলল,“ভাগ্যিস আপনি না বলেছিলেন সুহা। নয়তো আমি সেটাই করতাম, যেটা আপনার খুবই অপছন্দ।”

সুহা ভীত গলায় শুধালো, “কী করতেন আপনি?”

মিঠুর বেপরোয়া জবাব,“ আপনাকে বিয়ে করে নিতাম। তারপর সি*গা*রে*ট ফুঁকে ওই ঠোঁটে রোজ রোজ আপনাকে চুমু খেতাম।”

সুহা লজ্জা আর ঘৃ*ণা*য় চোখমুখ কুঁচকে বলল,“ছিঃ!”

মিঠু হাসলো। তার শরীর দুলে হিসহিসি শব্দ হলো। পরক্ষণেই নিজেকে কঠিন খোলসে আবৃত করে বলল,“আপনি আমায় বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুহা। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে এতটুকু আমি করতেই পারি।”

সুহা মৃদুস্বরে আওড়ালো,“আপনি ভীষণ অ*ভ*দ্র!”

মিঠু লাগামহীন গলায় বলল,“একদিন এই অ*ভ*দ্রে*র বুকেই আপনাকে মুখ লুকাতে হবে।”

“আমি রাখছি।”
মিঠুর জবাবের অপেক্ষা না করেই খট করে ফোন কে*টে দিল সুহা। সে নিজেকে যতই আড়াল করতে চায়, ততই মিঠুর কাছে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই যে, মিঠুর বেপরোয়া ভাবভঙ্গি তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়, তবুও মনেপ্রাণে এই বেপরোয়া লোকটিকেই কামনা করে। তবে মুখে বলার সাধ্যি তার নেই।

★★★

অমি ফোনে কার্টুন দেখছে। তরী তাকে খাবার খাওয়াচ্ছে। অরু এসে পাশে বসলো। অমির হাত থেকে ফোন কেঁ*ড়ে নিয়ে বলল,“কীরে চো*রে*র পোলা!”

অমি খাবার মুখে নিয়েই ক্ষে*পে গেল। প্রথমত তার কাছ থেকে ফোন কেঁ*ড়ে নিয়েছে, দ্বিতীয়ত তার পাপাকে চো*র বলেছে। অরুর উপর হামলে পড়ে ফোন নিয়ে নিল। মুখের খাবার দ্রুত গিলে বলল,“আমার পাপা চো*র না।”

অরু সূঁচালো চোখে তাকিয়ে বলল,“আমি তো দেখলাম রাস্তায় লোকজন তোর পাপাকে বেঁধে রেখেছে। সে না-কি চু*রি করেছে।”

অমি গলা ফাটিয়ে তার পাপাকে নিয়ে সাফাই দিল। “মিথ্যা কথা। আমার পাপা চু*রি করেনি। তোমার বাবা চো*র।”

অরু এবার ক্ষে*পে গেল।
“এ্যাই পুঁচকে, আমার বাবা কী করেছে হ্যাঁ? কী চু*রি করেছে? বল।”

রামি পাশে এসে ধপ করে বসে পড়লো। অরুকে পাত্তা না দিয়ে অমিকে কোলে নিয়ে বলল,“বাবা, এদের বংশটাই চো*র। পারে তো শুধু মানুষের মন চু*রি করতে।”

প্রথম কথায় তরীও ক্ষে*পে গেল। পরক্ষণে শেষদ কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসলো। এটা মূলত অরুকে ক্ষে*পা*নো*র জন্যই বলা। অরু বিদ্রুপ করে বলল,“কী একটা জিনিস, আমরা চু*রি করার জন্য বসে থাকবো। কেউ নিতে চাচ্ছে না বলেই তো জোর করে আমাদের গছিয়ে দিয়েছে। এখন খুব সাধু সাজা হচ্ছে।”

“দু-বোন যে হারে আমাদের দু-ভাইের মন চু*রি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমাদের আবার দয়ার শরীর, তাই চু*রি*তে পা*প না বাড়িয়ে স্বেচ্ছায় পুরো নিজেকেই সঁপে দিয়েছি। তবুও জাতির কাছে আমাদের কদর নেই।”

দুটোর ঝগড়ার মাঝে তরী অমিকে খাইয়ে ওঁকে নিয়ে উঠে গেল। রামি খপ করে অরুর হাত চেপে ধরে বলল, “পেয়েছি।”

চমকে হাতের দিকে তাকালো অরু। হাত ঝাড়ি দিয়ে না ছাড়াতে পেরে বলল,“কী? হাত ছাড়ো!”

রামি অরুকে টে*নে*হিঁ*চ*ড়ে ঘরের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল,“কোন ছাড়াছাড়ি নেই। কাল আমার শার্টে থুতু মিশিয়েছিস। আজ আমার শার্ট ধুয়ে দিবি। শুধু শার্ট না, আমার একগাদা কাপড় ময়লা হয়েছে, সব ধুয়ে দিবি আজ।”

আৎকে উঠলো অরু। নাক ফুলিয়ে ত্যাড়াস্বরে বলল,“আমি পারবো না। তোমার কাপড় তুমি ধোও গিয়ে।”

“ইশ! তোর কথাটা মানতে পারলাম না। যদি না কাল আমার শার্টের এত বড়ো অপমান করতি, তবে ভেবে দেখা যেত।”

অরু ভেংচি কে*টে বলল,“তোমার শার্টের আবার মান-অপমান আছে না-কি!”

“কথা না বলে চুপচাপ কাজে নেমে পড়।”

অরু গাল ফুলিয়ে থেকে পরক্ষণেই লাজুক হাসলো। রামির কাছে ঘনিয়ে বলল,“তোমার কাজ তো আমিই করবো। শোন না, আমার না আজ তোমার সাথে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে।”

রামিও মিটিমিটি হেসে আরেকটু এগিয়ে এলো। অরুর কোমল হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে হাতের উল্টোপিঠে চুমু খেয়ে মোহাবিষ্ট কন্ঠে বলল,“যাবো তো, তার আগে তোমার এই নরম হাত দিয়ে আমার জামাকাপড় ধুয়ে দেবে।”

অরু ঝট করে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কটমট চোখে তাকালো। দরজার দিকে চোখ দিয়েও হতাশ হলো। দরজা লক করা। রামি ওঁর দিকে তাকিয়ে জ্বালাময়ী হাসি দিচ্ছে। অরু বাধ্য হয়ে জামাকাপড় সবগুলো নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। দরজার সিটিকিনি আটকে দিয়ে জামাকাপড় না ধুয়ে দরজায় পিঠ লাগিয়ে বসে রইলো। ঘন্টাখানেক পর না বের হলে এমনিতেই রামি ডাকাডাকি করবে। তখন অজ্ঞানের মতো পড়ে থাকবে। সবাই এসে দরজার ভাঙার ব্যবস্থা করে রামিকে দু-চারটে কথা শুনিয়ে দেবে। ভেবেই মনে লাড্ডু ফুটেছে। সময় পেরচ্ছে, মনে হচ্ছে ঘন্টার বেশি হলো। অথচ রামির সাড়াশব্দ নেই।
অরুর মনে ভয় ঢুকলো, না -জানি ওঁকে ওয়াশরুমে আটকে দিয়ে মীরজাফরের খালাতো ভাই বাইরে চলে গিয়েছে।
এদিকে রামি দরজার সিটকিনি আটকানোর শব্দ শুনে বাইরে দিয়ে দরজা লক করে দিল। পায়ের উপর পা তুলে ফোন টিপছে আর ঠোঁট কামড়ে হাসছে। মনে মনে বলছে,“শিরায় শিরায় র*ক্ত, আমি বউয়ের ভক্ত।”
পরক্ষণেই জিহ্বে কামড় দিয়ে বলল,“বউ যদি চল ডালে ডালে, তোমার বর চলে পাতায় পাতায়।”

#চলবে…….

(রি-চেইক করা হয়নি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here