#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#পর্ব_২৭
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)
শীতের রাত। কনকনে ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে আছে শরীরের লোমকূপ। ফোনের ওপাশে নিস্তব্ধতার অবসান ঘটিয়ে রিনরিনে কন্ঠ ভেসে ওঠে,
“কেন এত পাগলামি করছেন?”
মিঠু হাসলো। তার হাসির ফিসফিস শব্দে শরীরে শীতল শ্রোত বয়ে যায় সুহার। সময়টা তাকে টে*নে*হিঁ*চ*ড়ে ঘোরের মাঝে নিয়ে যায়। কোথাও একটা মাদকতা আছে। চোখ দুটো স্থির হয় দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সৌষ্ঠব পুরুষের উপর। মিঠুর কাছ থেকে পরপরই জবাব আসে,
“আমার ভালোবাসাকে পাগলামি বলে তুচ্ছ করবেন না, সুহা।”
সুহা জবাব দেয় না। উল্টো প্রশ্ন ছোড়ে,“পুরুষের সৌন্দর্য কীসে?”
সুহার প্রশ্নের জবাবে ছোটোখাটো জবাব মিললো,“জানি না তো।”
সুহা মিইয়ে যাওয়া স্বরে বলল,“পুরুষের সৌন্দর্য দু’টো জিনিসের উপর নির্ভর করে। প্রথমটি তার চরিত্র, দ্বিতীয়টি তার ভালোবাসা।”
মিঠুর হৃদয়ে বয়ে গেল তুমুল ঝড়। সুহার কন্ঠস্বর অদ্ভুত শোনালো তার নিকট। মনে হলো মেয়েটি নিজের মাঝে নেই। নতুন কোন সত্তার বাস ঘটেছে লতানো দেহে। মিঠু মোহাবিষ্ট কন্ঠে বলল,“আমি কেমন পুরুষ?”
সুহা এবারও জবাব দিলো না। দীর্ঘ নিরবতা পালনে যেন মরিয়া হয়ে উঠলো। অথচ তার ছোট্ট একটি জবাবের আসায় মিঠুর হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হলো। চাই একটুখানি শান্তি। তুমুল উৎকণ্ঠায় ফের শুধালো,“বলবেন না, আমি কেমন পুরুষ?”
সুহা ফের কথা ঘোরানোর চেষ্টা করে বলে,“ঠান্ডা পড়ছে ভীষণ। বাড়ি যাচ্ছে না কেন?”
“আপনি আমার প্রশ্নের জবাব কেন দিচ্ছেন না?”
সুহা কেমন জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ায়। ভেতরের অভিব্যক্তি ঠিকঠাক প্রকাশ করার সাধ্য হয় না। মিঠু বিষন্ন ঠোঁটে হাসে। অস্থিরতায় ভেতর থেকে নিংড়ে আসে কিছু শব্দ।
“আমি অপেক্ষা করবো। চাইবো শীঘ্রই আমার দীর্ঘ অপেক্ষার মৃ*ত্যু হোক।”
সুহার ধীর কন্ঠ,“যদি আপনার অপেক্ষা না ফুরায়?”
মিঠু সুদৃঢ় কন্ঠে বলল,“আমি মৃ*ত্যু*র আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। হুমায়ূন ফরীদি স্যারের মতো শেষ বয়সে বলবো ‘আমি এখনো একটি মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসি’।
সুহা থমকে গেল। মুখ দিয়ে শব্দ বের হতে চাইছে না। রোধ হয়ে আসা ঠোঁট দুটো অল্প ফাঁক করে শুধালো,“আমিই কেন?”
“সে তো উপরওয়ালা জানেন।”
“আমার সৃষ্টি যদি আপনার জন্য না হয়?”
মিঠু হাসলো না। অদ্ভুত এক ঘোরে নিমজ্জিত হয়ে নিবিষ্ট কন্ঠে সুহার মনে ঝড় তুললো।
“শীতের সকালে আপনি আমার এক চিলতে মিষ্টি রোদ। আমি জানিনা আপনি আমার জন্যই সৃষ্টি কি-না! তবে আপনাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার সারাজীবন থেকে যাবে।”
সুহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,“আমার গায়ে ক*ল*ঙ্ক আছে। আপনি নতুন কাউকে জীবনে ঠাঁই দিন।”
মিঠুর ওষ্ঠদ্বয় মৃদু বেঁকে গেল।
“দিলাম জীবনে নতুন কাউকে ঠাঁই, তবে মনে কেবল আপনিই থেকে যাবেন। পবিত্র সম্পর্কে জড়িয়েও যখন আপনাকে ভেবে আমি পা*প করবো। সেই পা*পে*র দায়ভার যদি আপনি নিতে রাজি হোন, তবে আমি নতুন কাউকে ঠাঁই দেব।”
সুহার শরীর শিউরে উঠলো। কাঁ*টা*র মতো মনে বিঁধে গেল প্রতিটি কথা। চোটপাট দেখিয়ে স্বর কঠিন করতে গিয়েও পারে না। দিনকে দিন দুর্বল হয়ে পড়ে। ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে আসে একটি বাক্য।
“আমি এখন ঘুমাবো।”
“আমার ঘুম কেঁড়ে নিয়ে আপনি কীভাবে ঘুমাবেন সুহা? আমার জন্য মায়া হয় না?”
সুহা খট করে ফোন কে*টে দিল। দ্রুত সরে পড়লো বারান্দা থেকে। তার বুক ধড়ফড় করছে। আর বেশি কিছু শোনার সাধ্য তার নেই। মিঠু যেতে নিয়েও পেছন ঘুরলো। বারান্দার দরজায় একটি ছায়া দেখা যাচ্ছে। তা দেখে আপনমনে হাসলো মিঠু। পরপরই ফোন চাপলো।
টুংটাং শব্দে সুহার ফোনের আলো জ্বলে উঠতেই চমকে উঠলো সে। এতক্ষণ গভীর মনোযোগে মিঠুর প্রস্থান দেখছিল। স্ক্রিন অন করতেই চোখে পড়লো ছোট্ট একটি বার্তা।
“আর দরজায় দাঁড়াতে হবে না, সুহা। ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি জানি আপনি আমাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত।”
সুহা অস্বস্তিতে পড়লো। লোকটি কীভাবে দেখলো তার অবয়ব? সে তো আড়াল হয়েই দাঁড়িয়ে ছিল। লজ্জারা দু’চোখের পাতা ছুঁয়ে দিতেই চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো সুহা। অধর কোণে লজ্জা রাঙা হাসি। নিজেকে দমন করতে যেয়েও বারবার ওই স*র্ব*না*শা পুরুষের কথার জালে ফেঁসে যায়। লোকটির নয়, বরং শীঘ্রই তার স*র্ব*না*শ হতে চলেছে।
★★★
এমদাদুল হক আজ জনসাধারণের সেবায় বিরাট আয়োজন করেছেন। গরিবদুঃখীদের বস্ত্র বিতরণের পাশাপাশি উনাকে ভোট দিলে কী কী সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে, সেসকল বিষয়ে লম্বা ভাষণ দিচ্ছেন। রিয়াজ ফোঁস করে উঠলো। রাগত স্বরে বলল,
“দেখেছেন ভাই, এমদাদুল হক মানুষের কাছ থেকে ভোট নেওয়ার জন্য কী আয়োজন করেছে। আপনি কেন কিছু করছেন না?”
মিঠু গম্ভীরমুখে বসে নেই। তার মুখভঙ্গি স্বাভাবিক। যেন কিছুই ঘটেনি। রিয়াজ ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে পড়লো।
“আপনি কি এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন ভাই?”
মিঠু রিয়াজের কাঁধে হাত রেখে ভারিক্কি স্বরে বলল,“ তাঁকে তাঁর মতো জনগণের সেবা করতে দে। আমি আমার মতো এগিয়ে যাব।”
রিয়াজ সন্তুষ্ট হলো না। বলল,
“সেবা করলো কই? সারাবছর কোন খোঁজ থাকে না, অথচ ইলেকশনের সময় ঘনিয়ে এলেই আয়োজন? মানে লাভে লোহার বোঝা টা*না*র মতো।”
মিঠু উত্তেজিত রিয়াজকে ঠান্ডা মাথায় বোঝালো।
“দেখ্ রিয়াজ, এমদাদুল হক যে মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করছে, এতে কিন্তু মানুষগুলো একটু হলেও উপকৃত হচ্ছে। তাঁর মাধ্যমে যদি কেউ উপকৃত হয়, এতে আমার বাঁধা দেওয়া সমুচিত নয়।”
রিয়াজ কিছুটা ঠান্ডা হলো।
এমদাদুল হকের লম্বা ভাষণ শেষে হাতে বস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে আসছে অনেকেই। কেউ কেউ খালি হাতে ফিরছে আর গা*লা*গা*ল দিচ্ছে। এতক্ষণ বসিয়ে রেখে ভাষণ দিল অথচ দেওয়ার বেলায় টা*ন পড়েছে বিলে বিদায় দিল!
★★★
অরুর ক্লাস শেষ হতেই বেরিয়ে পড়লো। মেডিকেলের লম্বা চত্বর পাড়ি দিয়ে গেটের বাইরে আসতেই দেখা পেল তার প্রেমিক পুরুষের। অরুকে দেখতে পেয়েই রামি হাসলো। অরু দ্রুত পা চালিয়ে রামির নিকট পৌঁছালো। চিন্তিত দেখালো রামিকে। অরুর চোখমুখ পর্যবেক্ষণ করে বলল,“চোখমুখ শুকিয়ে আছে কেন? দুপুরে না খেয়ে ছিলি?”
অরু হেসে বলল,“খেয়েছি আমি।”
রামি বিশ্বাস করলো না। বলল,“তাহলে তোর চোখমুখ এমন শুকনো লাগছে কেন? ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোকে।”
অরু কোমরে হাত দিয়ে বলল,“ক্লাস করেছি, ক্লান্ত তো দেখাবেই।”
“এখন কী খাবি বল।”
অরু দু-হাত উঁচু করে কটমট করে বলল,“তোমার মাথা খাব।”
রামি থেমে গেল না। অরুর হাত ধরে পা চালালো। সাবধানী চোখে রাস্তার দুপাশে গাড়ি চলাচল দেখে নিয়ে বলল,“সে-তো রোজই খাচ্ছিস।”
অরু তেতে উঠে বলল,“তুমি কি বলতে চাইছো? আমি তোমার মাথা খাই?”
রামি বলল,“আগে রাস্তার ওপাশে যাই, তারপর ঝগড়া করিস।”
অরু নাক ফোলালো। রুষ্ট চোখে তাকিয়ে বলল,“আমি ঝ*গ*ড়া করি? তুমি কিছু করো না?”
অরুকে নিয়ে রাস্তার অপর পাশে এসে থামলো রামি। দু’ঠোঁট গোল করে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলল,“কী খাবি?”
অরু কেমন সূঁচালো চোখে তাকালো। রামির শান্ত থাকাটা তাকে ভাবাচ্ছে। মিইয়ে যাওয়া গলায় শুধালো,“তুমি কি আমার উপর বিরক্ত?”
রামি আড়চোখে অরুকে দেখলো। চোখমুখ আঁধার করে আছে মেয়েটা। অরুর হাত ছেড়ে দিল রামি। পরপরই হাত ঘুরিয়ে অরুর বাহু চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরলো। অরু রামির হাত পর্যবেক্ষণ করে রামির মুখের দিকে তাকলো ঘাড় ফিরিয়ে। রামির ঠোঁটে আলতো হাসি। বলল,“যদি বিরক্ত হয়েও থাকি, তবে তুই কি আমায় বিরক্ত করা ছেড়ে দিবি?”
অরু চোখ নামিয়ে নিলো। কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,“কেউ বিরক্ত হলে আমি দূরত্ব বাড়িয়ে দিতে জানি।”
রামি মৃদু হেসে বলল,“দূরত্ব বাড়িয়ে দিলেও আমি কাছে টে*নে নেব।”
অরু গাল ফুলিয়ে বলল,“আমি তো বিরক্ত করি।”
রামি বলল,“মাঝেমাঝে বিরক্তি আসা প্রয়োজন। নয়তো ভালোবাসার গাঢ়ত্ব টের পাব কীভাবে?”
অরু ফোঁস করে উঠলো। ঝাঁঝালো স্বরে শুধালো,“তার মানে তুমি সত্যি সত্যি বিরক্ত হও?”
রামি মিটিমিটি হেসে বলল,“হ্যাঁ।”
অরু দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বলল,“তুমি যতই বিরক্ত হও না কেন, সারাজীবন আমাকেই সহ্য করতে হবে। কী ভেবেছো? আমি রাগ করে বলব ‘তোমাকে মুক্তি দিলাম। অন্য কাউকে নিয়ে সুখী হও’। এটা ভেবে থাকলে ভুল ভাবছো। অরু কখনো এসব বলবে না।”
রামি আবারও হাসলো। সে অরুর কাছ থেকে এমন কিছুই আশা করেছিল। অরুকে শক্ত করে চে*পে ধরলো। বলল,“সহ্য করার জন্যই বেঁধে নিয়েছি নিজের সাথে।”
অরু বলল,“তোমাকে আজ চুপচাপ লাগছে কেন? কী হয়েছে?”
“একটু মাথাব্যথা করছে। তুই কী খাবি বল।”
অরুকে বিচলিত দেখালো। তার চোখমুখ করুণ ঠেকছে রামির কাছে। বলল,“তুমি মাথাব্যথা নিয়ে কেন আসতে গেলে? বেশি ব্যথা করছে? বাসায় চলো, আমি এখন কিছু খাবো না।”
রামি শান্ত গলায় বলল,“আমি ঠিক আছি। তুই চল।”
অরু কপট রাগ দেখিয়ে বলল,“বলেছি তো বাসায় চলো।”
রামি হাল ছেড়ে দিল। অরুকে নিয়ে সিএনজি ধরে উঠে বসলো। আজ আর বাইক নিয়ে আসেনি। দুজন বাসার সামনে নেমে গেল। অরু ওদের বাসায় গেল না। রামির সাথে এ বাসায় ঢুকে পড়লো। রামি চোখ বুজে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পরই কপালের উপর দুটো নরম হাতের ছোঁয়া পেল। চোখ না খুলেই বলল,“ঘুমিয়ে নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। তুই রেস্ট কর।”
অরু শুনলো না। আলতো হাতে রামির মাথা টিপে দিল। নিঃশ্বাসের শব্দ ভারী হতেই অরু অপলকভাবে তাকিয়ে রইলো রামির মুখে। চুলের ভাঁজে হাত চালিয়ে দিল। মনের মাঝে দুষ্টুমি চেপে বসতেই রামির নাক টিপে ধরলো। শ্বাস নিতে না পেয়ে চোখ খুলে তাকালো রামি। অরু নাক ছেড়ে দিল। রামি অরুকে নিজের পাশে টে*নে শুইয়ে দিল। এক হাতে অরুর দুহাত মুঠোয় বন্দি করে বলল,“আমি যখন জ্বালিয়ে মা*র*ব, তখন সহ্য করতে পারবি?”
অরু হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করলো। মুখ ঘুরিয়ে বলল,“ছাড়ো আমাকে। বাইরের কাপড় পাল্টাতে হবে।”
রামি ঘোরলাগা স্বরে বলল,“যদি না ছাড়ি?”
“তুমি কিন্তু…..
অরুর কথাটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। অধর জোড়া আটকে গেল রামির ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে। শ্বাস নিতে না পেরে ছটফট করে উঠলো। তাকে ছেড়ে দিয়ে রামি মিটিমিটি হাসলো। ঠোঁটে হাত বুলিয়ে বলল,“ছেড়ে দিলাম।”
অরুর চোখেমুখে লজ্জা। দৃষ্টি লুকাতে ঝটপট উঠে পড়লো। খোলা দরজা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল। আজও ইরার সামনে পড়লো। ইরা ঠোঁট টিপে হাসলো। বলল,“কী ব্যাপার অরু, ছুটছো কেন? বর তাড়া করলো বুঝি?”
অরু অস্বস্তিতে এদিক-ওদিক তাকালো। তোতলানো স্বরে বলল,“তাত তাড়া করবে কেন?”
ইরা একই ভঙ্গিতে হেসে বলল,“বুঝি বুঝি, সময়টা আমরাও পার করে এসেছি।”
“ধ্যাত।” বলেই অরু হেসে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।
★★★
ক্লান্ত ভঙ্গিতে শব্দহীন পায়ে ঘরে ঢুকলো মাহমুদ। সকালের মতো সেই উজ্জ্বলতা এখন আর নেই। অমিকে দুপুরে ঘুম পাড়িয়ে তার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছিল তরী। বিছানায় এক পলক তাকিয়ে সাবধানে দরজা চাপিয়ে দিল মাহমুদ। যেন শব্দ হয়ে মা-ছেলের ঘুম না ভেঙে যায়। আগেই ওয়াশরুমে ঢুকলো। জামা বদলে বের হয়ে অমির কপালে চুমু খেল। অতঃপর তরীর দিকে নজর দিল। নিচু হয়ে তার কপালে চুম্বন করতেই তরী নড়েচড়ে উঠলো। মাহমুদ সাবধানে সরে বসলো। তবুও তরীর ঘুম ভেঙে গেল। ঝাপসা চোখে একবার মাহমুদকে দেখতেই ঝট করে উঠে বসলো। সময় দেখে আন্দাজ করে নিলো মাহমুদ কখন ফিরেছে। পরনে বাসার জামাকাপড়। তরী ঘুম ভাঙা গলায় বলল,“আমায় ডাকলেন না কেন?”
মাহমুদ মুচকি হাসলো। শান্ত গলায় বলল,“ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে হলো না।”
তরী অগোছালো চুল হাত খোঁপা করে বিছানা ছাড়লো। হাত-মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে এসে বলল,“আমি চা নিয়ে আসছি।”
মাহমুদ বলল,“চলো।”
তরী অবাক হয়ে বলল,“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
মাহমুদ বলল,“আজ না-হয় দুজন মিলে চা বানাই।”
তরী রা করলো না। মনে মনে ভীষণ খুশি হয়েছে। এমন একটা মানুষকে জীবনে পেয়ে তৃপ্তি অনুভব করছে। তাকে খুশি করার জন্য মাহমুদ প্রায়ই এমন ছোটো ছোটো মুহূর্ত উপহার দিয়ে থাকে। দুজনে চললো রান্নাঘরে। তরী দাঁড়িয়ে রইলো। চা আজ মাহমুদই বানালো। তরীর হাতে এক কাপ ধরিয়ে দিয়ে বলল,“চলো ছাদে যাই।”
তরী তাকিয়ে রইলো মাহমুদের দিকে। মাহমুদের যত্ন আর দায়িত্বের কারণে পুরনো প্রেমটা তাজা হয়ে ওঠে।
মাহমুদ চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে ঢিমে স্বরে ডাকলো,
“তরী।”
“হুঁ?”
“তুমি ছাড়া আমার জীবন কেমন, জানো?”
তরী মাথা নাড়লো। যার অর্থ ’তার জানা নেই’। মাহমুদ বলল,“চিনি ছাড়া চায়ের মতোই বিস্বাদ।”
#চলবে……..