#অদ্ভুত_প্রণয়
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_২
নিশি ঘুম থেকে খুব ভোরেই উঠেছে আজ। সেদিন আয়াসের বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের কাছ থেকে জানতে পেরেছিল, তিনি দেরিতে ঘুম থেকে উঠা পছন্দ করে না। উনার ধারণা, বউ হতে গেলে সব কিছু জানতে শিখতে হবে।
সেই থেকেই একটু-আধটু চেষ্টা করছে উনার কথা অনুসারে সব অভ্যাস করার। আজ থেকে সে পুরো-দমে সব অভ্যাস করে একজন আদর্শ বউ হিসেবে আয়াসের মায়ের সামনে দাঁড়াবে। তারপর তিনি অবশ্যই মেনে নিবেন হয়ত। সেদিন হুট্ করে গিয়ে নিশি আয়াসের মায়ের মন-মতো হতে পারেনি কিন্তু এই কয়েকদিনের মধ্যে চাইলেই তো সব শিখতে পারে!
নিশি শোয়া থেকে হামি দিয়ে উঠে বসলো। অন্যদিনগুলো এখনো ঘুমিয়ে কেটে যেত কিন্তু আজ না চাইতেও উঠে যেতে হলো। সে চারপাশে তাকিয়ে এলোমেলো চুলগুলো হাত কোপা করে নিয়ে উঠে বসলো। বাইরে সদ্য ভোরের হাল্কা হাল্কা আলোগুলো রুমে ঢুকে একরকম স্নিগ্ধ করে তুলেছে যেন রুমটাকে। চারদিক থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে।
সেই অনেকদিন ধরে আর নামাজ পড়া হয়নি। নিশি আজ ভাবলো, সকালে যখন উঠলো, নামাজটা পড়েই নিবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সে একটা উড়না নিয়ে ওযুর উদ্দেশ্যে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।
নামাজ শেষ করে নিজেকে অনেক হাল্কা হাল্কা অনুভব হচ্ছে নিশির। অন্ধকার রুমটা ধীরে ধীরে আলোয় পরিপূর্ণ হচ্ছে কিন্তু এখনো পুরোপুরি হয়নি। নিশি ব্যালকনির দরজা খুলে সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো, যাতে করে সকালটা যেন আরও ভালোভাবে উপভোগ করতে পারে।
সকালের স্নিগ্ধ বাতাস তার মনকে বারে বারে নাড়া দিচ্ছে। এই স্নিগ্ধ সকালেও সে তার পাশে আয়াসকে অনুভব করছে। সে কল্পনা করছে, যখন আয়াসের সাথে বিয়ে হবে তখন আয়াস আর সে এভাবেই সকালটা স্নিগ্ধরূপে উপভোগ করবে। আয়াসের কথা কল্পনা করতেই তার ঠোঁটে আপনা-আপনি হাসি এসে ভর করলো।
আস্তে আস্তে শহরের নীরব রাস্তাটা ব্যস্তপূর্ণ রাস্তা হিসেবে ভরে উঠলো। মুহূর্তের মধ্যে রাস্তার মধ্যে মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেল। সূর্যমামাও তার নিয়ম অনুসারে আকাশে উঁকি দিয়ে চারদিকে তার তির্যক রশ্মী রেখা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
নিশি চারদিকে তাকিয়ে রুমের ভেতর ঢুকে গেল। এরপর ভালোভাবে চুলটা বেঁধে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। আজ এই প্রথম মনে হয়, সে নাস্তা বানাবে। অবশ্য জানে না, কী বানাবে! কারণ সে কোনোদিন রান্নাঘরে ঢুকেনি।
তবে টুকটাক যা পারে চেষ্টা করবে। এই ভেবে নিশি নাস্তা বানানোর কাজে লেগে পড়লো।
রহিমা বেগম স্বামীর জন্য তাড়াহুড়ো করে উঠে রান্নাঘরে ঢুকতে গিয়েই থমকে গেল। উনি বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তার মেয়ে রান্নাঘরে! তাও বা এই ভোরে!
তিনি স্তব্ধ দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মেয়ে তার মনোযোগ দিয়ে নাস্তা বানাচ্ছে।
আফজাল শেখ তৈরী হয়ে এসে চেয়ার টেনে টেনে বসতে বসতে বলে উঠল,
-‘কিরে রহিমা! নাস্তা আনো দ্রুত। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে যে! দাঁড়িয়ে আছো যে!’
রহিমা বেগম স্বামীর কণ্ঠস্বর শুনে পেছন ফিরে তাকালো।
ততক্ষনে নিশিরও নাস্তা বানানো শেষ। ড্রয়ইংরুম থেকে বাবার কণ্ঠস্বর শুনে সেও পেছন ফিরে তাকালো। সে হেসে নাস্তার প্লেট নিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল।
নাস্তার পর্ব শেষে নিশি রুমে এলো। আজ ভীষণ ফুরফুরে লাগছে কেন জানি।
ফ্রেস হয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। শীতল হাওয়া বইছে। এই পরিবেশে আয়াস পাশে থাকলে তার আর কোনোকিছু অপূর্ন থাকতো না। কথাটা ভাবতে গিয়েই হুট্ করে খেয়াল হলো কাল রাতে আয়াসের মাথা ব্যথা ছিল। একটু কল দিয়ে দেখা যাক। নিশি রুমে গিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবারো ব্যালকনিতে ফিরে এলো। আয়াসের নাম্বারে রিং পড়ছে কিন্তু ধরছে না। তৃতীয়বারে গিয়ে আয়াস কল ধরতেই নিশি স্বস্তির শ্বাস ফেলল।
‘আয়াস, তোমার মাথা ব্যথা কমেছে?’
‘হ্যাঁ, কমেছে।’
‘আচ্ছা শোনো…’
‘নিশি আমি অফিসে যাবো। এখন রাখছি।’ নিশি কিছু একটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু আয়াস অনিচ্ছাকৃতভাবেই মিথ্যা কথা বলে ফোন রেখে দিয়েছে। তার আর এসব ভালো লাগছে না। এমন পরিস্থিতি হবে জানলে জীবনেও নিশিকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতো না।
নিশি ‘সাবধানে থেকো ‘ বলতে বলতেই কল কেটে যাওয়ার শব্দ কানে আসতেই তার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। পরবর্তীতে আবার নিজের মনকে সান্ত্বনা দিল।
আয়াস মোবাইল কেটে দেওয়ার পরেও তার মন শান্ত হচ্ছে না। মা ভোর ছয়টার দিকে রওনা দিয়েছে। গ্রামে পৌঁছাতে দুই ঘন্টা মতো লাগবে। এতক্ষনে পৌঁছে গিয়েছে। প্রতিবার গ্রামে গেলে সে মা পৌঁছেছে কিনা খবর নেয় কিন্তু এইবার মাকে কলটা করা হয়নি, ড্রাইভার থেকে জেনে নিয়েছে। মা যাওয়ার সময় জেগেছে আর ঘুমানো হয়নি। বলতে গেলে ঘুম আসেনি। মা গ্রামে গিয়েছে মানে পুরোপুরি বিয়ে ঠিক করে ফেলবে। নিশির জন্য বড্ড খারাপ লাগছে। মেয়েটা কত উৎফুল্ল থাকতো সবসময়। আয়াসের হুট্ করে মনে পড়লো নিশির ইচ্ছে ছিল বাইরে পড়তে যাওয়ার। ওর বাবা মাও রাজি। কারণ ওর বাবার ব্যবসা আছে দেশের বাইরে। নিশি গেলে তার মাকে সহ নিয়ে যাবে কিন্তু নিশি আয়াসের জন্য যায়নি। আয়াস বারবার করে বলেছিল নিশি যেন তার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেয় কিন্তু নিশি রাজি হয়নি। সে চেয়েছিল এখানে থেকে আয়াসের মায়ের মন জয় করবে।
আয়াস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার জন্য মেয়েটা নিজের সবচেয়ে বড়ো স্বপ্নটাও বিসর্জন দিয়েছে কিন্তু কিছুই তো হলো না। মাথাটা আবারো ব্যথা করছে। সে মাথা চেপে খাটে হেলান দিয়ে বসে পড়লো। কী হবে ভবিষ্যত!
ঘুম ভাঙলো বেশ বেলা করে। শোয়া অবস্থায় মোবাইল হাতড়িয়ে সময় দেখে নিল। দুপুর হয়ে এসেছে। এসব ভাবতে ভাবতে কোন সময় জানি ঘুমিয়ে পড়েছিল। মোবাইলের দিকে তাকাতেই স্ক্রিনে অনেক কল ভেসে উঠলো। মোবাইল সাইলেন্ট ছিল বিধায় ধরতে পারেনি। নিশির কল, মায়ের নাম্বার থেকেও কল এসেছিলো। আয়াস আগে মায়ের নাম্বারে কল ব্যাক করলো। দুইটা রিং পড়তেই আমেনা রহমানের জায়গায় একটা মেয়ের গলা শোনা গেল।
‘কে তুমি? মা কই?’
‘আপনার মা হুট্ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন ঘুমাচ্ছে। আপনাকে আসতে বলেছিল।’
আয়াস কল কেটে ড্রাইভার চাচাকে কল দিতেই উনার মুখ থেকেও একই সংবাদ শ্রবণ করে বিভ্রান্ত হয়ে পড়লো। সুস্থ মা গেল হুট্ করে অসুস্থ! আয়াসের এতো সব ভাবনার সময় নেই। এই পৃথিবীতে সবার উপরে তার একমাত্র এই মানুষটাই আছে। সে দ্রুত ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে পড়লো। এখন গন্তব্য গ্রামে।
#চলবে
(তাড়াহুড়োয় লেখা হয়েছে,রি-চেক করা হয়নি। ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ।)