অদ্ভুত প্রণয়নামা পর্ব ১১

0
631

#অদ্ভুত_প্রণয়নামা
#পর্ব_১১
#তাশরিন_মোহেরা

মুগ্ধের পড়ার রুমটা ঠিক মুখরের রুমের মুখোমুখিই। কিন্তু মুখর সাহেব খুবই বদ্ধ পরিবেষ্টিত একজন মানুষ। নিজের জীবনটাকে বেশ পরিবেষ্টন করে রাখতে চান তিনি। অনেকটা ‘এসব আমার ব্যক্তিগত’ বলা এমন ধাঁচেরই! তবে আমি ভুলক্রমে একবার তার ব্যক্তিগত শ’রী’রে’র অ’র্ধাং’শ’ই দেখে ফেলেছি। আবারো বলছি, ভুলক্রমে দেখেছি! আর এর মাশুল হিসেবে আমার খেতে হয়েছে পানির চ্ছটা!
মুখরের আধখোলা রুমটার দিকে তাকিয়েই এসব ভাবছি। সে ভাবনাগুলো উদয় হতেই ভীষণ হাসি পেল। বিকট একটা অট্টহাসি দিলাম। কি অদ্ভুত ভাবেই না আমাদের প্রথম দেখাটা হয়েছিলো! সে থেকে আজ তিনমাস মুগ্ধ আর মুখরের সাথে পথচলা। এর মাঝে বহু উ’দ্ভ’ট কান্ড হয়ে গেছে বটে!

তখনই দেখলাম মুগ্ধ আধখোলা দরজাটা আরো খানিকটা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ার টেবিলে বসলো। মুগ্ধ বয়সের তুলনায় একটু লম্বাটে! মুখরও বেশ লম্বাচওড়া! লম্বা হওয়াটা বোধহয় এদের বংশগত। মুগ্ধ আমার ঠিক সামনাসামনি বসায় আমি উচ্চতায় তার সমান হয়ে যাই। তখনি ভাবলাম, মুগ্ধ আর মুখর কি একটু বেশিই লম্বা নাকি আমি একটু বেশিই বেঁ’টে?
তবে মুগ্ধকে পড়ানোর এক ফাঁকে খেয়াল করলাম মুখর সাহেব তার রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ সাবধানে মাথা আঁচড়াচ্ছেন। সামনের চুলগুলো জেল দিয়ে সুনিপুণ হাতে পেছনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি আড়চোখে তার এই কার্যকলাপ খেয়াল করছি। মুগ্ধ যাতে সন্দেহ না করে তাই পাশে থাকা পেপারটা নিয়ে তা পড়ার ভান করলাম। পেপারের উপরে উঁকি মারতেই দেখলাম মুখর পারফিউমের বোতলটা নিয়ে তা গ’লা’র দুইপাশে মা’খ’ছে। ক’ব’জি’তে হালকা পারফিউম মে’খে তা শার্টে লাগিয়ে দিলো। দৃশ্যটা দেখে আমি পলকহীন চেয়ে রইলাম সামনের সুপুরুষটার দিকে। সু’ঠা’ম দেহের মানুষটার প্রতিটি পদক্ষেপই আমার কাছে সন্তপর্ণে করা কারুকার্য মনে হয়! যেন তাকে প্রতিদিন দেখেও আমার সাধ মিটবে না। একেকটা দিন নতুন করে, নতুন ভাবে প্রেমে পড়ছি তার! বেশ গা’ঢ় প্রেম!

মুগ্ধ ঝাঁ’কু’নি’তে ভ’ড়’কে উঠলাম। দেখি মুগ্ধ রুষ্ট হয়ে বলছে,

‘ম্যাম, কখন থেকে আপনাকে বলছি ড্রয়িং বইটা আমাকে দিতে, আপনি তো শুনছেনই না!’

আমি তার দিকে তাকিয়েই অপ্রস্তুত হাসলাম। এদিক ওদিক দৃষ্টি নিয়ে বললাম,

‘পেপার পড়ছিলাম তো, তাই খেয়াল করিনি!’

এই ডাহা মিথ্যেটা বলতে আমার খারাপ লাগলো ঈষৎ। কিন্তু তাই বলে মুগ্ধকে এটা তো জানতে দেওয়া যাবে না যে আমি সিসিটিভির মতো অতি পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তার ভাইয়াকে দেখছিলাম। ছিঃ ছিঃ! ইজ্জত আমার একেবারে গেল বলে! কেমন বি’চ্ছি’রি কান্ড করে বসছি ইদানীং। একটা যুবক ছেলেকে এভাবে হা করে দেখার কোনো মানে আছে? তারউপর ছেলেটার জন্য মিথ্যাও বলতে হলো। ম্যাম হয়ে যদি ছাত্রের সাথে মিথ্যা বলতে হয় আমার! হায় রে তিথি! কই গেল তোর ভদ্রতা, সভ্যতা?

নিজেকে বারকয়েক ধিক্কার জানাতে জানাতেই হঠাৎ মনে পড়লো সামনেই মুগ্ধের জন্মদিন। এই উপলক্ষে আমি একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করে রেখেছিলাম কাল রাতে। ইউটিউব থেকে কয়েকটা ভিডিও নামিয়ে রেখেছিলাম। আর এই ভিডিওগুলো চুপিসারে মুখরকে দেখাতে হবে।

পড়ানো শেষ হলে আমি চুপিচুপি মুখরের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সে কিছুক্ষণের মধ্যেই চাকরির জন্য বেরিয়ে পড়বে। আমি তাকে চুপিসারে ডাকলাম,

‘মুখর সাহেব, আপনাকে কিছু বলার ছিল।’

মুখর পেছন ফিরলে আমি সংক্ষেপে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলাম। এরপর মুখরকে দুয়েকটা ভিডিও দেখাতেই সে বললো আমি যাতে তাকে ভিডিওগুলো সেন্ড করি। আমিও কথামতো ভিডিওগুলো তার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিলাম।
একগ্লাস পানি নিয়েই তা পান করতে করতে ভিডিও এসেছে কিনা তা চেক করছিলো মুখর। তখনি একটা অদ্ভুত কান্ড ঘটে বসে।

মুখরের ফোনে হঠাৎ বেজে উঠে অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ভিডিও। সেখানে বাচ্চার মতো সুরে কেউ বলছে,

‘আমি তিথি! কিউট বেবি তিথি, দেখতে আমি খুব মিষ্টি! তাই না? বলো! হুম হুম?’

আমার চোখ তো ছানাবড়া! গলাটা শুনেই বুঝলাম মেয়েটা আসলে আমি। ব্যাপারটা নিশ্চিত হতেই মুখরের ফোনে উঁকি দিলাম তক্ষুণি। পরের ‘হুম হুম’ শব্দটা করতেই আমি মুখটা ফুলিয়ে ক্যামেরার সামনে কিছুটা ন্যাকামি করলাম। এটুকু দেখেই আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি। লজ্জাটুকু ডাকতে দু’হাত মুখের সাথে চেপে ধরি। ভিডিওগুলো পাঠানোর সাথে ভুল করেই আমি আমার ভিডিওটাও পাঠিয়ে দিয়েছি। অতিরিক্ত উত্তেজনায় কখন যে ভিডিওটা দিয়ে দিল! হায়! এতোটা বেখেয়ালি কিভাবে হলাম আমি?

মুখর মুখের পানিটুকু মুখে রেখেই হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে রইলো। সে ভিডিওটা দেখে পুরো থমকে গেছে। পরক্ষণেই মুখের পানিগুলো কোনোরকম গিলে ঠোঁট টিপে খিলখিল করে হেসে উঠে সে। যাকে বলে মারাত্মক হাসি! হাসি থামাতে না পেরে সে পাশের চেয়ার ধরে তাতে বসে পড়ে। মুখর ঘর কাঁপিয়ে হাসছে আর তা শুনে দৌঁড়ে সামনে এসে পড়ে মুগ্ধ। সে ভাইয়ের হাসি দেখে অবাকের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে গেছে। পৌঁছে গেছি আমিও। মুখর যে এমন হো হো করে হাসতে পারে তা আমার বিশ্বাস হলো না। এদিকে মুহুর্তেই ভীষণ লজ্জা ভীড় করলো আমার সারা মুখে। মুখে হাত দিয়ে কোনোরকম পালিয়ে আসতেই মুখর ডাকলো,

‘মিস.তিথিয়া!’

আমি চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ছেলেটা আবার কি বলবে এখন? আমি পেছন ফিরেই দেখলাম মুখর আমার মতো গাল ফুলিয়ে বললো,

‘আমি দেখতে খুব মিষ্টি, তাই না?’

এইটুকু বলে মুখর আবারো গগনবিদারী হেসে উঠলো। আমি সেখানেই মূর্তির মতো থমকে গেলাম। আমার প্রাণ আছে কিন্তু দেহে নড়ার শক্তি নেই। এ কেমন লজ্জায় পড়লাম? বিধাতা! আমায় এখানে আর রেখো না! আমি যে এসব দেখতে পারছি না আর!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here