#অদৃশ্য এক সত্ত্বা
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ৪
নার্স জুবেদাকে যখন আম্মু কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল তার শরীর কেমন। তখন তিনি আম্মুর পরিচয় জেনে বেশ ভয়ার্ত গলায় আম্মুকে উত্তর দিল
“শারিরীক অবস্থা এখন ভালো। আপনি যদি স্বাভাবিক থাকেন এবং আমার কথা শুনার মতো সময় যদি আপনার থাকে তাহলে বলুন।”
আম্মু কিছুটা আন্দাজ করতে পারছিল উনি কী বলবেন। তাই বেশ স্বাভাবিক গলায় আম্মু উত্তর দিল
“আমি এখন ফ্রি আছি। আপনি চাইলে বলতে পারেন।”
জুবেদা কিছুটা হাঁপানো সুরে বলল
“আমি সেদিন আপনার মেয়ের চুল কাটার সময় বেশ বাঁধা অনুভব করেছি। মনে হচ্ছিল কেউ আমার হাত ধরে রেখেছে। আমাকে কাটতে নিষেধ করছে। তবে সব বাঁধা উপেক্ষা করে আমি চুলটা কাটার সময় কিছু বিষয় লক্ষ্য করি। চুলের কিছু অংশে কাচি চালালে লক্ষ্য করা গেছে লাল লাল টাইপ কী যেন ভেসে উঠেছে। আমি সে অংশ কাটতে গিয়ে কয়েকবার হাতে তীব্র যন্ত্রণা আর ব্যথা অনুভব করেছি। তবুও সমস্ত শক্তি খাটিয়ে আমি চুলটা কাটতে সক্ষম হই। চুল গুলো কাটা শেষে আমি চুলগুলো একত্র করে নিয়ে বাইরে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় মনে হলো কেউ আমাকে পেছন থেকে আচমকা ধাক্কা দিচ্ছে। এ ধাক্কাটা আমি সামলাতে না পেরে পড়েও গিয়েছি। তারপর আবার নিজেকে সামলে নিয়ে পড়া থেকে উঠলাম। উঠার পর বেশ স্বাভাবিক ভাবে আপনাকে চুল গুলো দিয়ে চলে আসলাম। আসার পর থেকে আমার মাথা তীব্র ব্যথা করতে শুরু করল। আমি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে, ছুটি নিয়ে বাসায় চলে এসেছি। বাসায় আসার সময়ও আমার ছোটোখাটো একটা এক্সিডেন্ট হয়। এরপর থেকে টানা জ্বর। আজকে শারিরীক অবস্থা ভালো আলহামদুলিল্লাহ। আর দুদিন রেস্ট নিয়ে হাসপাতালে জয়েন করব। আপনি যদি কিছু মনে না করেন আপনার মেয়ের বিষয়ে আমার একটা কথা ছিল।”
নার্স জুবেদার মুখে এরকম কথা শুনে আমার মায়ের গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। মা কাঁপা গলায় উনাকে সম্মতি দিয়ে বললেন
“আপনি বলেন পারমিশন নিতে হবে না।”
তখন জুবেদা মাকে বুঝিয়ে বলল
“আপনার মেয়ের বিষয়টা আমার কাছে একটু প্যারানরমাল মনে হয়েছে। জ্বিন তো দুনিয়ায় আছে। ভালো জ্বিনও আছে আবার খারাপ জ্বিনও। আপনি একটু অন্য চিকিৎসাও করেন। আপনার মেয়ের কোনো রোগ ধরা পড়ছে না অথচ শারিরীক অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। শুকিয়ে গায়ের হাড্ডি দেখা যাচ্ছে। মাথার চুল অস্বাভাবিকভাবে জট পাকিয়ে গেছে। আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা। সবকিছু অন্যদিক ইঙ্গিত করছে। আপনি একটু ডাক্তারি চিকিৎসার পাশাপাশি অন্য চিকিৎসাও করেন।”
আমার মা নার্সের কথা শুনার পর আর কোনো কথা বলতে পারছিল না। গলা জড়িয়ে যাচ্ছিল বারবার। ছোটো থেকে একটু চঞ্চল স্বভাবের আবার ফর্সা গড়নের হওয়ায় এবং চোখের লেন্স ভিন্ন হওয়ায় আমাকে কিছুটা ফরেনারদের মতো লাগত। তার উপর হাঁটু অবধি চুল যেন সবকিছুর খুটি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই কারও বদ নজর লাগাও অস্বাভাবিক কিছু না। মা কোনো উত্তর দিতে পারল না। এভাবেই কলটা কেটে দিল। কল কাটার পর মায়ের শরীর কাঁপতে লাগল। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে বাবাকে বিষয়টা খুলে বলে। বাবা এসবে একদম বিশ্বাসী না। তাই হুজুর দেখাবে, রাকি দেখাবে এসবে সায় দিল না। তবুও মায়ের জোরাজোরিতে এক পর্যায়ে রাজি হয়। এরপর ফুফা যে রাকির কাছে আমার বিষয়টা নিয়ে কথা বলে বাবাও সে রাকিকে কল করে। ইতোমধ্যে আমার চুলগুলো রাকি নিয়ে যায়। রাকি বুঝতে পারছিল আমার মধ্যে কোনো সমস্যা চলছে। তাই তিনি বাবাকে বললেন
“এভাবে তো আর বুঝা যাচ্ছে না সমস্যা কোথায়। রোগীর পাশে কুরআন তিলাওয়াত করে করে মূল সমস্যাটা বুঝতে হবে। দূরে থেকে এগুলো সম্ভব না।”
এখন হয়েছে নতুন সমস্যা। একে তো বাবা এসব বিশ্বাস করে না। তার উপর এসে চিকিৎসা করতে হবে। এদিকে আমি অবজারবেশনে। আমার কাছে কেউ যাওয়ার পারমিশনও নেই। সব মিলিয়ে এটা সম্ভব না বুঝা যাচ্ছিল। তাই বাবা ফোন কাটার পর মাকে ডিরেক্ট জবাব দিল
“এগুলো সব ধান্দাবাজি। বাদ দাও। মেয়ের চিকিৎসা হচ্ছে হতে দাও।”
মা আর কোনো কথা বলল না। চুপচাপ বসে রইল। মায়ের মনে বিষয়টা শুধু খছখছ করতে লাগল। এরপর থেকে মায়ের মনে নতুন এ বিষয়েই ঘুরতে লাগল। এদিকে আমার চুলগুলো ঐ রাকি কী যেনো করে মাটিতে পুতে ফেলে। আমার অবস্থার একটু উন্নতি হলেও আমার মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে না। সারাদিন কেবল আমার চোখ দিয়ে গড়গড় করে পানি পড়ত। কথা বলতে পারতাম না। চোখে কিছু দেখতে পারতাম না। শরীর নাড়াতে পারতাম না। খাবার দিত নল দিয়ে। এ জীবনটা আমাকে আরও বেশি যন্ত্রণা দিতে লাগল। শারিরীক অবস্থার একটু একটু উন্নতি হলেও আমার মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকল। আরও ১০ দিন অবজারবেশনে রেখে আমাকে দেওয়া হলো কেবিনে। কেবিনে তখন শুধু মাকে এলাউ করত। বাড়তি কোনো লোক ঢুকারও অনুমতি ছিল না৷ যেহেতু আমার কেইসটা ছিল সিরিয়াস। যেদিন আমাকে কেবিনে দেওয়া হয় সেদিনেই মায়ের চোখে পড়ে কিছু অস্বাভাবিক বিষয়।
চলবে