অতিরিক্ত চাওয়া ?
নাবিলা ইষ্ক
পর্ব : ১২+13Last
ঘুম ভাঙে ফোনের আওয়াজে! ভাইব্রেশন হচ্ছে, বালিশ কাপছে! বালিশ সড়াতেই স্যারের দেওয়া ফোনটা চোখে পরলো! কেউ কল দিচ্ছে, ০১৬……! আবারও কল আসতেই রিসিভ করলাম! ঘুমুঘুমু গলায় সে বলল…
” গুড মর্নিং বেলি?
আমার বুঝতে বাকি নেই কার কল! মুখের হাসিটা এত্তো বড় হয়ে উঠেছে!
” গু..গুড মর্নিং!
” স্কুল যাও নি?
” ন..নাহ!
” কেনো?
” ভালো লাগছিলো না!
” ভালো লাগছিলো না, নাকি আমি স্কুলে নাই বলে?
” দ…দুটোই!
সে হা হা হা হা করে হাসছে! হাহ? হাসার কি হলো? পচা স্যার!
” আচ্ছা আন্টি কেমন আছে?
” মায়ের কিছুই হয় নি! আমায় মিথ্যা বলে আনিয়েছে!
” ওহ! আমি তো ভয়ই পেয়েছিলাম!
” যাও ফ্রেস হয়ে খেয়ে নাও!
” আ..আচ্ছা!
ফোনটা রাখতে মন চাচ্ছিলো না! তাও এটা ভেবে রাখলাম! যে ব্রেকফাস্ট করে আবারো কল দেবো! পরে কল দিতেই ব্যস্ত! সারাক্ষণ ফোন দিয়েই চলেছি কিন্তু ব্যস্ত! বুকটা আমার ধপাস ধপাস করছে! কল কেন ধরছে না? কি হচ্ছে? স্যারের কিছু হলো না তো?
ভয়ে আত্তাসহ লাফাচ্ছে আমার!
সকাল, সকাল ঘুম থেকে উঠে আমি ফোনটা চেক করলাম! সাথে সাথে কাদতে ইচ্ছে করছে! একটি মেসেজ, বা কল কিচ্ছু ছিলো না! এই সে আমায় ভালোবাসে?ভালোবাসার নমুনা কি এটা?
স্কুলে যেতেই সবাই আমায় আদর করছে, গিফট দিচ্ছে আর ভালো থাকতে বলছে! আজিব! কি হচ্ছেটা কি?
হঠাৎ হাসান দৌড়িয়ে এসে আমার হাত ধরলো..
” বেলি কেন চলে যাবি! এখানেই থাকনা অনেক মিস করবো যে তোকে!
” কোথায় যাচ্ছি আমি?
পিছন থেকে মা বলে উঠলো ” ঢাকা
আমি দ্রুত পিছনে তাকাতেই দেখি মা, বাবা দাঁড়িয়ে! মা আমার মুখটা ধরে বলে উঠলেন..
” ট্রান্সফার নিয়েছি তোর ! ঢাকায় সিফট হবো! তোর আব্বুর ট্রান্সফার হয়েছে!
খুশিতে কাদবো নাকি অবাকের চুরান্ত সীমানায় পৌছাবো? বুঝার উপায় নেই! বাসায় গিয়ে চিন্তা_ভাবনা করছি আর মা_বাবা কি কি জেনো বলছে আর হাসছে! ঘরের যাবতীয় জিনিস গুছাতে ব্যস্ত! কি হচ্ছে? যাক ভালোই হলো! স্যারকে ঝটকা দেওয়া যাবে! সেদিন খুশিতে আমার আর ঘুম হয়নি! হাসানের সাথে পুরো একটি দিন আবেগে কাটিয়েছি! নিজের ফোন নাম্বার দিয়েছি! ওর নানুর বাসায় ঢাকা! সেখানে যেতেই জেনো আমার সাথে দেখা করে! সেটাও বলে রেখেছি! সকলের সাথে কুশল_বিনিময় করলাম দু’দিন!
এখান থেকে যেতে যেমন কষ্ট হচ্ছে! তেমনি স্যারকে দেখতে পাবো তার কারনে ভালো লাগছে! চট্রগ্রাম থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আমি প্রায় কেদেই দিয়েছি! সবাইকে ফেলে যাওয়াটা কষ্টের! বেশি কষ্ট লাগছিলো হাসানের জন্য! বেষ্টি বলে কথা! ও বলেছে প্রায়ই ভিডিও কলে কথা বলবে! মাসে কয়েকবার ঢাকা আসবে! আমিও হ্যাঁ বোধক জানিয়েছি! আসলে মায়াতে জড়িয়ে পরেছি সকলের সাথে!
বাবার সাথে নানান দুষ্টুমি করে পৌছালাম ঢাকা! নানুদের বাড়ির সামনে ট্রাক থেমেছে আমাদের! আমি দ্রুত বেড়িয়ে আসতেই নানি জড়িয়ে ধরলো! পাগলের মতো চুমু খাচ্ছেন! ঠিক তেমনি আমিও জড়িয়ে রেখেছি তাকে! নানুর সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই আমি অবাক! আমার পুরো চৌদ্দগুষ্ঠি এখানে! ঘরে মানুষ আঠছে না এমন অবস্থা! আমি দৌড়ে খালা_খালু, কাকা-কাকি, বোন, ভাই, মামা_মামিদের সবাইকে জড়িয়ে আছি! এতো খুশি লাগছে যে কি বলবো? কিন্তু সবাই এখানে কেনো? সবকিছু মাথার উপড় দিয়ে যাচ্ছে..
হঠাৎ মামা আমার মাথাটা টেনে হাত বুলিয়ে বলে উঠলেন…
” কতো বড় হয়েগেছে আমাদের ছোট বেলিটা! একদম বিয়ে দিতে পারবো! তাই না?
আমি হতম্ভব হয়ে রইলাম! বিয়ে দিতে পারব?সিরিয়াসলি? আমি এখনও ছোট আমার বিয়ের কথা ভাবছে এখনই! ভাবা যায়?
মা_বাবা রূমে ডুকতেই ভালোবাসার বন্যা বয়ে গেলো! ভায়েরা_বোনেরা খুশিতে চোখের পানি ফেলতে লাগলো! আমার বেশ ভালোই লাগছে! পরিবার একত্রে হলে কতোটা আনন্দ হয় তা আজ বুঝলাম! মিন্সি আমার বড় মামার মেয়ে! আমার থেকে ২ বছরের বড় বেশ ফ্রেন্ডলি! ওর সাথেই নানান গল্প জুড়ে দিলাম! ও আমায় আড়চোখে দেখছে আর হঠাৎ মুচকি হাসছে! এইবার আমি রেগে বললাম..
” কি হয়েছে? হাসছো কেন পাগলের মতো..?
” ন…নাহ কিছু না! [ বলে আবারও হাসতে লাগলো ]
আমি চুপচাপ ওইখান থেকে চলে আসলাম! হুহ আজিব! সকলের এমন অদ্ভুত বিহেভ আমার মাথায় ঢুকছে না! নিচে নামতেই দেখি আব্বু মুখটা ছোট করে রেখেছে! আব্বুর আবার কি হলো?
” আব্বু?
” হুম!
” কি হয়েছে?
” কিছু না! তুমি যাও গোসল সেরে নাও!
কিছুই বুঝলাম না! সবাই কি নিয়ে জেনো ফিসফিস করে কথা বলছে! কি নিয়ে..? আমাকে দেখেই মিষ্টি হাসি দিচ্ছে! কি হচ্ছেটা কি? এইবার আমি সজা নানির রূমে গেলাম! মাত্র নামাজ সেষ করে বসেছে! আমি দ্রুত গিয়ে তার পাশে বসলাম!
” নানি এখানে কি হবে? এতো আয়োজন চলছে যে?
” যা হবে পরে দেখতে পাবি! এখন গিয়ে গোসল করে নে! যাহ!
আর কোথাও যাবো না! কেউ তো কিছু বলছেই না! আমি আপুর রূমে চলে এলাম! কাপড় নিয়ে গোসল করে নিলাম! খাটের উপড় চুপচাপ বসে আছি! অপেক্ষায় আছি আপু কখন বের হবে! আপু বের হতেই আমি দ্রুত ফোনটা বের করে কল লাগালাম স্যারের ফোনে! রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছে না! কেনো?
আবার কল দিতেই বিজি! স্যার কি আমায় ইগনোর করতে চাচ্ছে? কলের পর কল দিয়েই যাচ্ছি কিন্তু সে রিসিভ করছে না! আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে পানিতে! আজ ২ দিন হতে চলল, অথচ একটিবার কল দিলো না! আর রিসিভ ও করলো না! এই তার অতিরিক্ত ভালোবাসা? এটাই নমুনা! আমি এখন পুরনো হয়ে গেছি! তাই আর চলছে না! নতুন পেয়েছে তাই ভুলে গেছে! আমার এতো কান্না পাচ্ছে কেন? আমি কেন কাদবো? সে আমার কথা মনে রাখে নি! আমি কেন মনে রাখবো? রাখবো না মনে! কাদবো না! তাও চোখের পানি টুপটুপ করে পরছে! প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে!
চোখ খুলতেই দেখি আমি বিছানায় উবুত হয়ে শুয়ে আছি! মাথাটা ব্যাথা করছে! কাদতে কাদতে মাথা ধরে এসেছে আমার! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই অবাক? মুখটা ফুলে টমেটো! কেউ দেখার আগেই ওয়াস্রুম ঢুকে পরলাম! কেউ দেখলে হাজার প্রশ্ন করবে! কিভাবে বলবো এই অল্প বয়সে, ভালোবেসে আমি পাগলি হয়ে গেছি! ভালোভাবে ফ্রেস হয়ে নিলাম! তাও মুখটা ফুলাফুলা!
ঢুলুঢুলু হয়ে আছে চোখ গুলো! ঘড়ির দিক তাকাতেই চোখ বড়বড় হয়ে গেলো! ৬ টা বাজদে চলল! কেউ আমায় ডাকলো না খেতে! কি স্বার্থপর সবগুলো! কেউ ভালোবাসে না আমায়! কেউ না! আবারও ফোনটা ধরলাম! একটু আশা ছিলো, যদি একটি মেসেজ দেয়! কিন্তু না, স্যার একটি মেসেজ বা কল কিচ্ছু দেয় নি! একটি কলও না! হু হু হু হু পচা, খারাপ, যচ্চর স্যার! একটি কলও দিলো না! রাত্রি সেষ হয়ে ভোর হতেই ৩ দিন চলে যাবে! কি এমন ব্যাস্ত যে একটা মেসেজ দেওয়া যায় না? ফোনটা হাতে নিয়ে বসে আছি! বারবার স্ক্রিনে তাকাচ্ছি, যদি একটি মেসেজ দেয়! কিন্তু ক্ষুধা ও তো লেগেছে! ফোনটা লুকিয়ে রূম থেকে বেড়িয়ে আসলাম! সবাই টুকটাক কাজে ব্যাস্ত! ডাইনিং এ খাবার রাখা! আমি গিয়্ব চুপচাপ খেয়ে নিলাম! আড়চোখে সবাইকে পর্যবেক্ষন করছি! আমাকে টুকটুক চোখে দেখছে! আমিই বড়বড় চোখ করে তাদের তামাশা দেখছি! হঠাৎ নাহিন [ বড় মামার ছেলে ] আমার সামনে চেয়ারে বসলো! আমি ভ্রু_উচু করে ওর দিক তাকালাম! ও দুটো ভ্রু উচু করে মুখ বাকালো! আমি মুখ ভেঙিয়ে দিলাম! আর নাহিন হো হো হো করে হেসে দিলো! পাজি মেয়ে, আমায় মুড দেখাচ্ছে! আমি চুপচাপ খেয়ে উঠছিলাম!
হঠাৎ নাহিন আমার পিছনে এসে কানে কানে বলে উঠলো..
” এতো আয়োজন তোমার এনগেজমেন্টটের! তাও তোমার থেকে অনেক বেশি বয়সী এক লোকের সাথে! খুব জলদি আমরা বিয়ে খেতে চলেছি..!
আমি টাস্কি খেয়ে চোখ বড়বড় করে নাহিনের দিক তাকালাম! নাহিন হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে! হাহ? আমার এনগেজমেন্ট? সিরিয়াসলি?
” কি আবল_তাবল বকছিস? বড্ড পেকে গেছিস দেখছি? বিচার দেবো মামার কাছে?
” যাও..! হ্যাল্প করলাম তোমার! আগে আগে জানিয়ে দিলাম যাতে ভেগে যেতে পারো!
আমি এইবার দৌড়িয়ে মায়ের কাছে চলে এলাম..
” মা? নাহিন কি বলছে এগুলো?
” কি বলছে?
” এই যে আমার নাকি আজ এনগেজমেন্ট?
” হুম..! তার জন্যই তো ঢাকায় সিফট হয়েছি!
” মা তুমি মজা করছো তাই না?
” মজা কেন করবো!
আমি এইবার চিল্লিয়ে উঠলাম..
” এগুলো কি বলছো তোমরা? আমার এনগেজমেন্ট? আমি এখনও পিচ্চি মা! আর আমকে না জানিয়ে কিভাবে পারলে! আব্বুউউউউউ…
আমি চিৎকার করতে করতে আব্বুর কাছে যাচ্ছি..
” আব্বু! এগুলো কি শুনছি আমি? আমার নাকি কি এনগেজমেন্ট হবে?
” হুম!
” কি বলছো এগুলো আব্বু? আমি এখন এনগেজমেন্ট বা বিয়ে কিছুই করবো না! আমি এখনও ছোট! কিসব বলছো তোমরা!
এইবার আমি কেদেই দিলাম! বাবা আমার মাথাত হাত বুলাচ্ছেন..
” গাধি তোমার জন্যই তো, তোমাকে এত দ্রুত এনগেজমেন্টটা করিয়ে রাখছি! আমাদের থেকে তুমি বেশি খুশি হবে পরে! দেখে নিও পাগল একটা!
কথাগুলো বলে আব্বু হাসতে হাসতে চলে গেলো! আমি দৌড়িয়ে রূমে ঢুকে একটার পর একটা কল স্যারকে দিয়েই যাচ্ছি! লাষ্ট মেসেজ দিলাম..
” আপনি কি আমায় ইগনোর করছেন? ইগনোর না করে সরাসরি বলে দিলেই পারতেন, আমি আর ডিস্টার্ব করতাম না!
রিপ্লায় আসে নি! ২ ঘন্টা যাবত ফোন নিয়ে বসে আছি! আর ভালো লাগছে না! কি করবো? স্যারকে কিভাবে জানাবো যে আমি অন্যকারো হয়ে যাচ্ছি! তিনি তো আমার ফোনটাও ধরছেন না! এখন আমি কাদতেও ভুলে গেছি! এমন যন্ত্রণা হচ্ছে কেনো?
হঠাৎ এত দ্রুত এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে?
বড্ড কান্না পাচ্ছে, কিন্তু কান্না আসছে না, ওরে কেউ সাহায্য করো! হাসান্নন্নন্নন্নন্নন্নন্নন…..
হাসানকে কল করলাম! ফোন রিসিভ হচ্ছে না! এইবার ফোনটা আছার দিতে ইচ্ছে করছে! ন..নাহ কল ব্যাক করেছে!
” হ..হ্যালো হাসান..?
” কিরে? কি হয়েছে?
” [ নাক টেনে ] আ..আমার এনগেজমেন্ট দেওয়ার জন্য ঢাকায় নিয়ে এসেছে! এ্যা এ্যা এ্যা……
” কি বলছিস? সিরিয়াসলি?
” হু…[ কেদে দিয়ে ]
” আরেহ তুই কাদিস না! আচ্ছা..তুই তো কাউকে ভালোবাসিস না! তো কি হইসে, বিয়ে তো হচ্ছে না! যাষ্ট এনগেজমেন্টটাই তো!
” ক…কি বলতেছিস! গাধা..! আমি একটুখানি মেয়ে! ১৮ হয়নি এখনও! আর আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে ফ্যামিলি! তুই ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড না! আ..আমার কষ্টটাই বুঝলি না! সয়তান…..
কলটা কেটে আবারও কেদে উঠলাম.. হু হু হু হু! আমার স্যার..? ন..নাহ আমার স্যার না এইটা! সবাই খারাপ! হাসান কল দিচ্ছে! নাক ঝেড়ে কল রিসিভ করলাম..
” কিরে ইনভাইট করবি.. নাহ?
” তবে রে সয়তান! তোর জীবনও পোলাপান হবে না! কুত্তা..! তোর কোনোদিন বিয়েই হবে না! এতিম একটা!
” আ..আরেহ বোন আমার! বিয়ে তো তোকে করতেই হবে! আজ নাহলে কাল? করবি তো নাকি? সিংগেল তো আর থাকবি না সারাজীবন?
” [ চোখ মুছে ] আমি যে অন্যকাউকে ভালোবাসি!
” একটু আগে না বললি! তুই এখনও বাচ্চা! একটু খানি মেয়ে! তোর আবার ভালোবাসার মানুষও আছে?
” হু..! [ কেদে দিয়ে ]
” কে সে..?
” বলা যাবে না!
” আচ্ছা আমি ঢাকা আসবো?
” কি ব..বিয়ে খেতে আসবি আ..আমার?
” হুম..! তোর বিয়ে না খেলে কি আর আমার নিজের বিয়ে হজম হবে?
” তুই বউ হীন মরবি! দেখে নিসসসসসসস….!
সবাই বাহিরে হাসাহাসি করছে! আর আমার কান্নার বেগ বারছে! এই জালিয়াতি করার জন্য আমায় নিয়ে এসেছে? স্যারর্ররররর….
চলবে…?
অতিরিক্ত চাওয়া ?
নাবিলা ইষ্ক
পর্ব : ১৩
এতো রাত্রে কোথায় যাবো? বাড়ি থেকে পালিয়ে তো আরেক মুসিবত! ওহ আল্লাহ! কই আসছি আমি? কিছুই তো চিনি না! ফোনটাও তো আনলাম না! ৮ বাজছে রাত্রির! এখনি মানুষ যেভাবে তাকাচ্ছে, রাত আরেকটু গভির হলে তো আমায় কেউ খুজেই পাবে না! মাথা নিচু করে হাটছি! আমি আমার স্যারকে প্রচন্ড ভালোবাসি! সে আমায় ভালো না বাসলেও আমি বাসি, অতিরিক্ত ভালোবাসি! আর তাকে ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে ইম্পসিবল!
ভাবছি আর আনমনে হাটছি! কোথায় যাচ্ছি?তাও জানি না! রাস্তার মোড়ে কিছুকিছু ছেলেরা দাড়িয়ে! ভয় করছে তো! কি করবো এখন আল্লাহ! মাথা নিচু করে হাটছি, আল্লাহ সাহায্য করিয়ো..
” এই যে?
ছেলেদের আওয়াজে আমার আত্তাসহ কেপে উঠলো! দৌড় দেবো তখনি, এক ছেলের আওয়াজে থেমে গেলাম..
” এই যে পিচ্চি আপু? এতো রাত্রে এভাবে গলিতে, গলিতে হাটছো কেনো! একা, একা রিস্ক হতে পারে!
” হ্যা পিচ্চি ? এভাবে এমন ছোট, ছোট গলিতে তোমার হাটা উচিৎ না!
আমি সেদিকে ফিরে তাকালাম! দেখতে কেমন খারাপ দেখাচ্ছে! ময়লা কাপড় তাও মনের দিক দিয়ে ফ্রেস! পাশের ছেলেগুলোর ব্যবহারও সুন্দর! আমার থেকে বেশ বড় হবে! আমি হাসিমুখে তাদের সামনে গেলাম!
” তা আপনার এতো রাত্রে বাহিরে কেনো? আপনাদের বাড়ি কি এখানে ভাইয়া?
ছেলেগুলো হো হো হো করে হেসে দিলো!
” আরেহ পিচ্চি আপু আমাদের আবার বাড়ি! এই কাজ_কাম করি আর ঘুরি! তা পিচ্চি তুমি এমন রাত্রে একা_একা ঘুরতেছো কেন?
” আস..আসোলে..
” থাক বলতে হবে না! তুমি মেইন রোডে চলো! ওখানেই কথা বলি কেমন! এইসব চিপাচাপা গলি গুলো রিস্কি!
আমি মিষ্টি হেসে মাথা নাড়ালাম! হাটতে হাটতে তাদের নাম জানলাম.. রফিক, কাউসার, জয়নুল, রিসার! প্রচন্ড ভালো মনের! মেইন রোড আসতেই মন হালকা হলো! ওই পিচ্চি লাইনে যে কিভাবে চলে গেলাম, নিজেও জানি না!
পাশের চায়ের দোকানে বসতে বলল! আমিও বসে তাদের সাথে চা খাচ্ছি আর আলাপ করছি! সাধারণত কোনো মেয়ে মানুষ দেখছি না নিজেকে ছাড়া! প্রচন্ড ওড লাগছে তাও! এক বৃদ্ধা বয়সী নানা বসে আছে দোকানে! তার সাথেই হাসাহাসি করছি মনমতো! ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি পালিয়ে এসেছি আর যাওয়ার মতো যায়গায় নেই!
হঠাৎ আমার সামনে বসা ভাইয়া গুলা দাড়িয়ে গেলো! আমিও পিছনে তাকালাম, কিন্তু তার আগেই গালে এমন জড়ে থাপ্পড় মারলো যে আমি ঠাস করে নিচে পরে গেছি! আহ ব্যাথা ও পেয়েছি! আমি কাদো_কাদো ফেস নিয়ে দ্রুত উঠে দাড়ালাম, কে মারলো তার দিক তাকাতেই, চোখে পানি টলটল! স্যার…
” স্যারররররররররররর……[ দৌড়িয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম ]
হু হু হু করে কেদে উঠলাম..! সে আমায় ছাড়িয়ে মাথায় আরেকটা থাপ্পড় দিলো! এইবার আমি আরো জড়ে কেদে উঠলাম! সে মনে হচ্ছে রাগে কাপছে! হাত মুঠ করে দাঁড়িয়ে আছে! আমি ভয়ে দু’পা পিছিয়ে গেলাম..
” ইউ ইডিয়ট? এতো বড় একটা কাজ কিভাবে করতে যাচ্ছিলে? হাহ? যদি কিছু হয়ে যেতো? এতো রাত্রে তুমি ঘড় থেকে বেরোনোর কথা ভাবলে কি করে! [ আবার হাত তুলতে নিচ্ছিলো, আমি দ্রুত পিছনে চলে এলাম ] মন তো চাচ্ছে এখানে পুতে দি তোমায়! গাধি? মাথার মাঝে বুদ্ধি বলতে কিচ্ছু নেই! রাস্তা_ঘাটের অবস্থা ভালো? এতো সাহস আসলো কিভাবে? উত্তর দিচ্ছো না কেন? [ ধমক দিয়ে ]
আমি হু হু হু করে কাদছি! দুটো থাপ্পড়, সাথে ধমক আরো কতো বকা!…
” য..যার জন্য পালালাম, সেই বলে চোর! এ্যা এ্যা এ্যা…
স্যার মনে হচ্ছে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো!
” মানে কি..?
” আ..আপ..আপনি তো আমার ফোন ধরছিলেন না! আবার বাসায় নাকি আজ আমার এংগেজমেন্ট! আপনায় ছাড়া, আমি অন্যকাউকে বিয়ে করবো না! তাই তো…
সে কিছুক্ষণ আমার দিক তাকিয়ে থেকে, সেই ভাইয়াদের দিক তাকিয়ে বলল…
” থ্যাংকিউ গাইস! এতো দ্রুত এই পাগলকে খুজে দেওয়ার জন্য! অনেক অনেক ধন্যবাদ! [ কথাগুলো বলতে বলতে সবাইকে জড়িয়ে ধরলো! তাদের কিছু টাকা হাতে দিলো ] আসি!
ভাইয়া গুলো আমার দিক তাকিয়ে বলতে লাগলো..
” পিচ্চি আর একা একা বেরোনোর কথা মাথায় এনো না! সবসময় আমাদের মতো ভালো ভাইদের পাবা না!
আমি কেদে দেওয়ার মাঝেও হেসে উঠলাম! তাদের সাথে হাত মিলাতে যাবো তখনি সে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন! আমি মুখ গোমড়া করে গাড়িতে বসে আছি! তার সাথে কথা নেই! বজ্জাত পাজি? আমার মুখ ফুলে গেছে কান্না করতে করতে! এতো কান্না আমি আমার লাইফেও করি নি! আর আজ দুদিন যাবত কাদতে কাদতে চোখ ব্যাথা করছে!
স্যার আড়চোখে আমার দিক রাগী চোখে তাকাচ্ছেন! আমি তার দিক তাকাবো না! সে হঠাৎ গাড়িটা স্টপ করব দিলো! ফোন বের করলো! মনে হচ্ছে কাউকে কল দেবে..!
” হ্যালো, আংকেল?
“………?
” হ্যা পেয়েছি! মিরপুরের দিক চলে এসেছিলো!
আ..আংকেল? বিয়েটা কি আজ করা যাবে? আস..আসলে আমি এই পাগলকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাচ্ছি না!
“…….!।
” চিন্তা করবেন না! আমি ওর বয়সের আর গতি বিধের সম্পুর্ণ দায়_ভার মনে রাখবো!
“………!
” আ..আচ্ছা তাহলে বাসায় সবকিছুর এরেঞ্জমেন্ট করুন! জ্বি মা_বাবা যাচ্ছে ওখানে!
“………..?
” এইতো আধাঘন্টা লাগবে আসতে!
“…………?
” জ্বি আচ্ছা!
ফোনটা রাখতেই, আমি তার দিক ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছি! চোখে পানি চকচক করছে!
” আ..আপনি বিয়ে করবেন? অন্যকাউকে!
সে এইবার রেগে_তেড়ে আসলো আমার দিক! আমার মুখের দিক ঝুকে গিয়ে বলতে লাগলো…
” গাধি! এতোটুকু বুঝার সামর্থ তোমার হয় নেই?
আমি ঢাকা এসে পরেছি, পরেরদিন তোমরাও এসেছো! আমি তোমার ফোন ধরছি না! আবার হঠাৎ তোমার এংগেজমেন্ট, আংকেলের কথাগুলো! এতোকিছুর পরও বুঝতে পারছো না?
আমি মুখটা ছোট করে বললাম…
” কিহ?
” থাক তোমার কিছু বোঝার প্রয়োজন নেই!
আমি মুখ ফুলিয়ে জানালার দিক তাকিয়ে! সে আমার সাথে কথা বলে নি! আর আমিও রেগে আছি! কথা বলবো না হু! চুপচাপ বাহিরে তাকিয়ে আছি! কিন্তু খুশি লাগছে, আমার স্যার আমার পাশে! আড়চোখে তাকে দেখছি! ঢাকায় এসে তাকে আরো মারাত্মক দেখাচ্ছে! বেশি ইয়াং, ইয়াং লাগছে! উফফ সে এতো সুন্দর কেন?
তার চোখে চোখ পরতেই অন্যদিকে তাকালাম!
সোফায় বসে আছি এক অপরাধীর মতো! আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে চেনা_অচেনা অনেক মানুষ! মা তো কেদে কেদে হয়রান! বাবা সে তো নিজেকেই দোশারপ দিচ্ছে! কেনো আমায় চোখে চোখে রাখে নি! স্যার আমার সজা বসে আছেন! একধ্যানে আমার দিক তাকুয়ে!
হঠাৎ চোখ গেলো স্যারের মায়ের দিক! সে আলতো করে আমার হাত ছুয়ে পাশে বসলেন….
” বেলি.. বয়স অনুযায়ী তুমি অনেক ছোট! কিন্তু তার মানে এই না যে তুমি বেশি ছোট! অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছো!
ছেলের মুখে যখন শুনেছি যে সে তার থেকে ১৩ বয়সের ছোট এক মেয়েকে ৪ বছর যাবত ভালোবাসে! বিস্বাশ করো নিজের ই কষ্ট হচ্ছিলো! আমিও তো ভালোবেসে বিয়ে করেছি তৃষ্ণার বাবাকে! ভালোবাসা না পাওয়া প্রচন্ড যন্ত্রণাদায়ক! যখন শুনলাম তুমিও ওকে ভালোবাসো তখন তোমার ফ্যামিলিকে বিয়ের প্রস্তাব দি! তারা রাজি হন নি, কিন্তু তোমার কান্না _কাটি দেখে তোমার মা যেচে রাজি হয়েছেন!
বয়সের ভেদাভেদ অনেক কিন্তু তার থেকে বড় কথা ভালোবাসা!
এখন এইটা বলো তুমি কি তৃষ্ণা কে বিয়ে করতে চাও?
আমি হু হু হু করে কেদে উঠলাম! আমি তো তাকে নিজের করব পাওয়ার জন্য এতো পার্থনা করলাম! আল্লাহ আমার ভালোবাসা আমায় দিচ্ছে তার থেকে খুশির আর কি আছে! প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে, কিন্তু তা খুশির কান্না! সবাই অবাক চোখে আমার দিক তাকিয়ে! আমি কাদতে কাদতে বললাম….
” জ্বি!
সবাই হো, হো করে হেসে ফেলল!
মিনিট দশকের মাঝের কাজি আসলো, তার আগে আমাদের আংটি বদলিয়ে দিয়েছে মা! আমি চুপচাপ তাই করছি যা আমায় করতে বলা হচ্ছে! দেখতে দেখতে স্যারের নামের ৩ কবুল বলে ফেললাম! এই তিন কবুলের মাঝে আমি আমার ভালোবাসা পেয়ে গেলাম..!
সবাই আজ নানুর বাসায় রয়ে গেলাম! কাল নাকি স্যারের সাথে চলে যেতে হবে! কিন্তু আমার যেতে ইচ্ছে করছে না! মা_বাবা কে রেখে যেতে মন চাইছে না!
বিয়ের দিনের রাত্রে নাকি বাসর রাত হয়! অথচ আমার পড়ার রাত! বিছানায় বসে আইসিটির বই পরছি! আর আমার সামনে স্যার বই নিয়ে গ্লোবাল ভিলেজ নিয়ে বিশ্লেষণ দিচ্ছেন! হায়?
কাজিন গুলো দরজায় উঁকি দিচ্ছে আর হাসছে! আমি চুপচাপ তামাশা দেখছি! আর স্যার পড়িয়েই যাচ্ছে! কি সয়তান? দেখলো যে আমি রেগে আছি? কোথায় মানাবে তা না? উল্টো পড়াচ্ছে! আহাম্মক একটা!
” আ.. আমি রেগে আছি! আপনি দুদিন যাবত আমাকে ফোন দেন নি! আমার খবর রাখেন নি! এই আমায় ভালোবাসেন?
সে আমার দিক ঝুকে গেলো..
” কজ আমি তোমায় সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিলাম! বাট তুমি আমায় হাজার ভোল্টের ঝটকা খাইয়ে দিলে! জানো? কতো কাঠ_খোর পুড়িয়ে সবাইকে রাজি করিয়েছি! কতো কাহিনী করতে হয়েছে আমায় জানো? কিভাবে জানবে? সব তো আমি করেছি! তুমি তো শুধু হু হু হু করে কেদেছো! ডাম্বো?
আমি মুখটা ছোট করে বসে আছি! সে আবার আমায় পড়াতে শুরু করেছে! কিন্তু ঘুমে আমি ঢুলুঢুলু! বারবার ঘুমিয়ে পরছি, আর জেগে উঠছি! স্যারের চোখে, চোখ পরতেই সে দ্রুত আমার কপালে চুমু খেলেন! আর বলে উঠলেন…
” আমার বউ!
মুহুর্তের মাঝে আমি কেপে উঠলাম! বউ আমি তার! আর সে আমার স্বামী! মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি তার চোখে, সে আমার চোখে তাকিয়ে! ধীরে ধীরে আমার পাশে বসে জড়িয়ে ধরলেন!
” আই লাভ ইউ বেলি!
” আ.. আই লাভ ইউ টু..!
সে আমার আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরলেন…
” অতিরিক্ত চাই তোমায়? নিজের থেকে বেশি চাই!
” [ তাকে আরো টাইট করে জড়িয়ে নিয়ে ] আমিও!
মুখটা আলতো করে ধরে তার ঠোঁটে আমার ঠোঁট ছোয়ালো! আমিও তাকে চুমু দিতে লাগলাম! এখন তার ভালোবাসায় সারাজীবন রাঙিয়ে যাবো! কারন সে এখন শুধু আমার! আ…আমার ভালোবাসা সে! অতিরিক্ত চাই যে তাকে! শুধু তাকেই চাই! সারাজীবন… ❤❤
পেইজটি নতুন তাই পেইজে লাইক দিন এবং আপনার বন্ধুদের ইনভাইট করুন।। ইনশাআল্লাহ, আপনাদের পছন্দের মত গল্পই পোস্ট করা হবে।।
সমাপ্ত…… ?