#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#পর্ব-১১
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)
সন্ধ্যাবেলা,
অন্তিম নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে। এরই মধ্যে সানাতের ফোনে বেশ কয়েকবার রিং বেজে উঠেছে। কেউ কল করছে। কিন্তু সানাত ঘরে নেই। সে ওহী আর অর্পিতা আঞ্জুমের সাথে ড্রয়িং রুমে আড্ডা দিচ্ছে। আবারও ফোন বেজে উঠলে অন্তিম সানাতকে ডাক দেয়,
সানাত ! তোমার ফোন বাজছে।
কিন্তু সানাতের কোনো পাত্তা নেই। অন্তিম বিরক্ত হয়ে নিজেই ফোন রিসিভ করতে উঠলো। ফোন হাতে নিতেই দেখলো আলভী কল করেছে। মুহূর্তেই অন্তিমের মেজাজটা বিগড়ে গেলো। সে সোজা কেটে দিলো। তারপর আবারও নিজের কাজ করতে বসলো।
কিছুক্ষনপর,
আপনি আমায় ডেকেছিলেন? বললো সানাত।
অন্তিম ল্যাপটপে দৃষ্টি রেখেই বললো,
হুঁ।
কেনো ডেকেছিলেন।
কল এসেছিল।
কে ফোন করেছে?
জানিনা। দেখে নেও।
সানাত ফোন হাতে নিয়ে কললিস্ট দেখে বললো,
আলভী কল করেছিলো।
খুব ভালো। এতো রাতে একটা বাইরের ছেলে তোমাকে কল করছে। অসাধারণ বিষয়।
এতো রাত কোথায় হলো? মাত্রতো আটটা বাজে।
অন্তিম ল্যাপটপটা বন্ধ করে বললো,
হ্যাঁ হ্যাঁ। বাইরের ছেলের জন্য দিন আর রাত আছে নাকি তুমি তো সবসময়ই ফ্রি।
এসব কি বাজে কথা বলছেন আপনি?
অন্তিম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবারও কল বেজে উঠলো। অন্তিম সানাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
আবার কার ফোন?
সানাত ধীর গলায় বললো,
আলভী।
অন্তিম চোয়াল শক্ত করে বললো,
রিসিভ করে স্পিকারে দেও।
সানাত রিসিভ করে স্পিকারে দিতেই ওপাশ থেকে আলভী বললো,
হ্যালো সানাত!
সানাত একবার অন্তিমের দিকে তাকিয়ে তারপর বললো,
হ্যাঁ বলো আলভী।
তুমি কোথায় ছিলে সানাত কতবার কল করেছি! শেষের বার কেটে দিলে।
সানাত তৎক্ষণাৎ অন্তিমের দিকে তাকালো। তার বুঝতে বাকি নেই তার অনুপ্থিতিতে এই কাজ কার। ওপাশ থেকে আলভী বলে উঠলো,
আচ্ছা বাদ দেও। কি করছো?
কিছুনা। বসে আছি।
তারমানে তুমি এখন ফ্রি?
তুমি হঠাৎ এই সময় ফোন করেছো কেনো সেটা বলো।
খুব বোরিং ফিল করছিলাম। তাই ভাবলাম তোমার সাথে সময় কাটাই।
অন্তিম চোখ মুখ শক্ত করে শুধু শুনছে।
আসলে আলভী আমি একটু ব্যস্ত আছি।
কিন্তু তুমিই তো এই মাত্র বললে তুমি বসে আছো!
হ্যাঁ বসে আছি কিন্তু হাতে অনেক কাজ নিয়ে বসে আছি।
ওহ্। আচ্ছা সমস্যা নেই তুমি কাজ করতে করতে আমার সাথে কথা বলো।
অন্তিম এবার মুহূর্তেই সানাতের হাত থেকে থাবা মেরে ফোনটা নিয়ে বললো,
সানাত ব্যস্ত আছে। আর তোমার টাইমপাস করতে হলে অন্য কোথাও গিয়ে করো ওকে ডিস্টার্ব করবেনা।
বলেই কেটে দিলো। তারপর সানাতের দিকে গরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলো। আর এদিকে সানাত ঠায় দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো,
এর আবার হলোটা কি হঠাৎ?
🌻
ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২ টা। অন্তিম বিরক্ত হয়ে পুরো ঘরময় পায়চারি করছে। তার বিরক্তির কারণ সানাত এখনো রুমে আসেনি। পাশের রুম থেকে ওহী আর সানাতের হাসাহাসির শব্দে রুমে টিকে থাকা মুশকিল। অন্তিম আর অপেক্ষা না করে পা বাড়ালো ওহীর রুমে।
এই ওহী এতো রাতে কি শুরু করেছিস ?
অন্তিমের ধমকে সানাত ওহী দুজনেরই হাসিই থেমে গেলো। তারপর ফিরে তাকালো অন্তিমের দিকে। ওহী বলে উঠলো,
আমরা আবার কি শুরু করেছি?
তোদের হাসাহাসির যন্ত্রণায় আমি আমার রুমে টিকতে পারছিনা। আর সানাত রাত ১২ টা বাজে তুমি এখনও ওহীর সাথে ওর রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছ কেনো? ঘরে এসো।
আমি আজকে ওহীর সাথে শোবো। আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
হোয়াট? তুমি এখানে ঘুমাবে মানে?
হ্যাঁ আজকে সানাত আমার সাথে ঘুমাবে। আমরা দুই বেস্টু একসাথে শোবো। তুমি যাও ভাইয়া।
অসম্ভব। সানাত রুমে এসো।
না। আমি আজকে ওহীর সাথেই শোবো। আপনি যান তো।
জেদ করো না সানাত। চুপচাপ আমার সাথে চলো।
না যাবেনা ও। তুমি যাও।
চুপ কর ওহী। সানাত তোমার না মাথা ব্যথা করছিল। ওহীর সাথে থাকলে ও তোমার মাথা ব্যথা বকবক করে আরো বাড়িয়ে দেবে তার চেয়ে বরং ঘরে চলো।
আমার মাথা ব্যথা নিয়ে আপনার ভাবতে হবেনা। আমি এখানেই আজকে ঘুমাবো।
সানাত এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।
বাড়াবাড়ি তুমি করছো ভাইয়া। দাঁড়াও আব্বু আম্মুকে ডাকছি। তারপর বলছি।
ওহী একদম না।
আম্মু…
আচ্ছা আমি যাচ্ছি। বলেই অন্তিম রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। এদিকে ওহী আর সানাত হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। অন্তিম ঘরে এসে শব্দ করে দরজা বন্ধ করলো। বোঝানোর চেষ্টা করলো যে সে রেগে আছে। এই মুহূর্তে তার সানাতকে কষিয়ে দুটো থাপ্পড় লাগাতে ইচ্ছে করছে। বেয়াদব মেয়ে জেদ দেখিয়ে ওহীর সাথে থেকে গেলো। আর সবথেকে বেশি রাগ তো এখন অন্তিমের নিজের বোনের ওপর হচ্ছে। এটা বোন না শত্রু! এই দুই বান্ধবীর গলায় গলায় ভাব অন্তিমও দেখে ছাড়বে। আজকে রাতে তো সে কিছুতেই ওদের একসাথে থাকতে দেবে না। তাই কিছু একটা ভাবতে লাগলো। কিছু ভাবতেই সে আবার ছুটে গেলো ওহীর রুমে। দরজায় নক করতেই দরজা খুললো সানাত,
একি আপনি আবার?
হ্যাঁ একটু দরকার ছিল।
কি দরকার ?
আমার এ্যারপডস্ খুঁজে পাচ্ছি না।
আপনার ড্রয়ারেই তো রাখা আছে।
দেখেছি নেই।
তাহলে বালিশের নিচে দেখুন।
ওখানেও নেই।
তাহলে আমি জানিনা।
সানাত একটু খুঁজে দিয়ে যাওনা প্লীজ। আমার খুব প্রয়োজন।
না না সানাত পারবেনা। তোমারটা তুমি খুঁজে নেও ভাইয়া। সানাত আমার সাথে ব্যস্ত।
অন্তিম ক্ষেপে গিয়ে বললো,
একদম চুপ থাক। ফাজিল মেয়ে। যতসব উটকো ঝামেলা।
কিহহহ আমি উটকো ঝামেলা!
অন্তিম ওহীর কথায় পাত্তা না দিয়ে সানাতের হাত ধরে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। এদিকে ওহী ভাইয়ের এই পজেশিভ লুক দেখে মিটিমিটি হাসছে।
.
সানাত ড্রয়ার খুলতেই দেখলো এ্যারপডস্ ভেতরে। সে বের করে নিয়ে অন্তিমের হাতে দিয়ে বললো,
এই যে আপনার এ্যারপডস্। আমি তো ঠিকই পেয়ে গেলাম। আপনি খুঁজেছেন ঠিক মতো?
অন্তিম এ্যারপডস্টা খাটের উপর রেখে দরজা লক করে দিলো।
একি আপনি দরজা লাগলেন কেনো? আমি যাবো তো।
ওহীর রুমে আর তোমার যাওয়া হচ্ছেনা। চুপচাপ নিজের রুমে শুয়ে পরো। ওর সাথে ঘুমালে সারারাত আর ঘুম হবেনা। তোমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি ভরে দেবে। আমি তোমার ভালোর জন্যই বলছি।
সানাত রেগে বলে উঠলো,
আমার ভালো নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা। আপনি আমাকে মিথ্যে বলে নিয়ে এসেছেন।
হ্যাঁ নিয়ে এসেছি। বেশ করেছি। ওর রুমে তোমার কি হ্যাঁ? সারাদিন তো একসাথেই থাকো তারপরও রাতের বেলা কিসের এতো গল্প? যতো গল্প আছে পেটের মধ্যে জমিয়ে রাখো। সকালবেলা উঠে ওকে বলো। এখন ঘুমাও আমার ঘুম পাচ্ছে। তারপর ওহীর উদ্দেশ্যে জোরে বললো অন্তিম,
গুড নাইট ওহী।
তারপর হেসে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। সানাত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সেও রাগে গজগজ করতে করতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। এই তিনমাসে সানাতের বিছানাও পরিবর্তন হয়েছে। সে আর অন্তিম একই খাটে শোয়। তবে তাদের মাঝে ব্যারিকেড হিসেবে কাজ করে একটা কোলবালিশ। দুইজনেই দুইপাশে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে। অন্তিম একবার মাথা ঘুরিয়ে দেখলো সানাত উল্টো দিকে ঘুরে ফোন টিপছে। অন্তিমও নিজের ফোনটা বের করে সানাতকে ম্যাসেঞ্জারে টেক্সট করলো,
“সানাত”
সানাত সিন করলো। তারপর সে লিখে পাঠালো,
“কি ব্যাপার আপনি পাশে শুয়ে ম্যাসেজ দিচ্ছেন কেনো? এসবের মানে কি?”
“মানে কিছুইনা। কিন্তু তুমি এখনও অনলাইনে কেনো?”
“তাতে আপনার কি?”
“আমার কি মানে? অনলাইনে কি করছো তুমি?”
“চ্যাটিং করছি।”
“কার সাথে?”
“আমার প্রেমিকের সাথে।” এটা পাঠিয়েই সানাত মিটিমিটি হাসছে। তবে আচমকাই অন্তিম তাকে টান দিয়ে সোজা করে শুইয়ে সানাতের ওপর ভর দিয়ে সানাতের এক হাত বিছানার সাথে চেপে ধরলো। সানাত মুহূর্তেই ঘাবড়ে গেলো। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের সোডিয়াম হলুদাভ আলো জানালা দিয়ে আসায় রুমে প্রায় মোটামুটি সবকিছুই স্পষ্ট। কৃত্রিম আলোতে অন্তিমের অবয়বটাও স্পষ্ট নিজের মুখের খুব কাছে দেখতে পেলো সানাত। অন্তিমের নাকটা তার নাকের ছুঁইছুঁই দূরত্বে আছে। এই প্রথম এতোটা কাছে তারা। সানাতের ভেতরে এক অদ্ভুত অনুভূতিরা আন্দোলন করছে। অন্তিম চোয়াল শক্ত করে বললো,
কি বললি তুই প্রেমিকের সাথে কথা বলছিস? ওই আলভির সাথে কথা বলছিস তুই?তোকে আর তোর প্রেমিককে পুতে ফেলবো।
সানাত নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না অন্তিম তার সাথে তুই-তোকারি করছে! তারপর ব্যথাতুর গলায় বললো,
আ..আমার লাগছে!
লাগুক। ওই আলভীর সাথে যদি তোকে আর দেখেছি খুন করে ফেলবো।
বলেই অন্তিম এই প্রথমবার সবথেকে অদ্ভুত কাজটা করে ফেললো। আচমকাই সে সানাতের ঠোঁটের মাঝে নিজের ঠোঁটজোড়া ডুবিয়ে দিলো। কতক্ষন এভাবে আকড়ে রাখলো তার খেয়াল নেই। তারপর একটা সময়পর ছেড়ে দিয়ে টিশার্টের হাতা দিয়ে ঠোঁট মুছে ওপাশ ঘুরে শুয়ে পড়লো। এদিকে পুরো ঘটনায় সানাত কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সে একবার অনুভুতিশূন্য চোখে অন্তিমের দিকে তাকালো। তার মাথায় শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরছে,
কি হয়েছে অন্তিমের?
#চলবে