অটবী সুখ
১৬.
আকাশে গুটিকয়েক তারা বাসা বেঁধেছে। সবচেয়ে বড় তারাটা সবার উপরে মিটিমিটি হাসছে। চাঁদের আলো মোটামোটি। জঙ্গলের আশপাশটা ভালোই দেখা যাচ্ছে। তবুও অটবীর ভেতরটা স্বস্তি পাচ্ছে না। সে অন্ধকার ভয় পায়। ছোট থেকেই। দুঃখ-যন্ত্রণা সয়ে সয়ে সেই ভয়টা ক্ষীণ কমে গেলেও একেবারে নিঃশেষ হয়নি। এই যে, ইয়া লম্বা লম্বা গাছগুলো বামে-ডানে দাঁড়িয়ে লোভাতুর দৃষ্টে চেয়ে আছে ওর দিকে। বুকটা কাঁপছে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ক্রমশই। সে একা হলে হয়তো এতক্ষণে জ্ঞান হারিয়ে কোনো একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলত। কিন্তু পাশে ত্রিস্তান আছে। লোকটার সামনে সে তার দূর্বলতা প্রকাশ করতে চায় না। যথাসম্ভব শক্ত খোলস আঁকড়ে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। কেউ দেখলে হয়তো কখনোই বুঝবে না, অটবীর অন্ধকারে ভীষণ ভয়।
জঙ্গলের পথ প্রায় শেষ। রাস্তার শুরুতে একটা ল্যাম্পপোস্ট আছে। সেটার আলো দশ-বারো হাত দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়। বাসার পথটাও অতটা নির্জন-আঁধারী না। সে নির্ভরে যেতে পারবে। অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়ে অটবী বললো, “আপনাকে আর যেতে হবে না। বাকিটা আমি পারব।”
সম্পূর্ণটা পথ ত্রিস্তান নিশ্চুপ ছিল। আপন খেয়ালে মগ্ন হয়ে অটবীর পায়ের সঙ্গে পা মেলাচ্ছিল শুধু। সবসময়কার মতো আড়চোখে তাকায়নি পর্যন্ত। অটবী ভেবেছিল, এখনও বুঝি মৌন সম্মতি দিয়ে চলে যাবে সে। কিন্তু ত্রিস্তান গেল না। অনেক্ষণ বাদে নির্বিকার কণ্ঠে বললো, “তোমার বাসার ওদিকে আমার কাজ আছে।”
কথাটা অটবীকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার সূক্ষ্ণ প্রস্তাব। কিন্তু আসলেই কি তার ওখানে কাজ আছে? অটবী বিশ্বাস করতে পারলো না। সরু চোখে তাকালো, “মিথ্যে বলছেন কেন?”
“আমি হতে পারি শ্রেষ্ঠ মিথ্যুক। কিন্তু এখন সত্য বলছি।”
“কি কাজ ওখানে?”
“এখানে ভালো সিগারেট পাওয়া যায় না। তাই ওখান থেকে কিনব।”
আশ্চর্য অটবী হতবিহ্বল হলো। ত্রিস্তানকে দেখে মোটেও মনে হচ্ছে না সে ঠাট্টা করছে। চোখে-মুখে এত গম্ভীরতা! ব্যস্ততা! যেন এদিকটায় সত্যিই ভালো সিগারেট পাওয়া যায় না। ভালো সিগারেটের অভাবে ত্রিস্তান শুকিয়ে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এইতো, আর চার-পাঁচ মিনিট। ভালো, মধুময়, অতি সুস্বাদু সিগারেট খেতে না পেয়ে ত্রিস্তানের বেদনাদায়ক মৃ’ত্যু ঘটবে।
অটবী জোরেসোরে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। হতাশ গলায় বললো, “আপনি ক্লান্ত হন না?”
ত্রিস্তান উত্তর দেয়নি। খুব ধীরে সুস্থে সামনের দিকে একেকটা কদম ফেলছে। অটবী বিরক্ত হলেও কিছু বললো না। এতদিনের সাক্ষাতের পরও ত্রিস্তানকে সে ভরসা করতে পারেনি। কেমন যেন একটা জড়তা কাজ করে। লোকটা তুখোড় বুদ্ধিমান, চরম চতুর– সে জানে। অদ্ভুত আচরণ দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে বোঝাতে চায়, সে খুবই ভয়ংকর একটা মানুষ। গহীনের মতো বিশাল রহস্য লুকিয়ে রাখতে রাখতে বড্ড ক্লান্ত। কিন্তু সেই রহস্যটা কি? অটবীর মাঝে মাঝে খুব কৌতূহল হয়। প্রশ্ন জাগে, বাউন্ডুলে, চোরেদের চুরি করার জন্য অদ্ভুত অদ্ভুত সব বুদ্ধি দেওয়া ছন্নছাড়া ছেলেটা হঠাৎ এত রহস্যময় হয়ে গেল কিভাবে? আগের অপরিচিত ত্রিস্তানটাই বোধহয় ভালো ছিল। পরিচিত হওয়ার পর সেটা গলার কাঁটার মতো ঠেকে আছে।
“আপনার মা কি বিদেশি?”
তার প্রশ্ন শুনে ত্রিস্তান কি হাসলো? চট করে পাশ ফিরলো অটবী। নাহ্! লোকটা আগের মতোই নির্লিপ্ত হাঁটছে। দৃষ্টি, রাস্তার ইট-পাথরের দিকে। অটবী নজর ফিরিয়ে আবারও সামনে তাকালো। একটা সিএনজি বেকায়দায় এদিকেই আসছে। গতি নিয়ন্ত্রণে নেই। নেশাটেশা করে গাড়ি চালাচ্ছে নাকি? ভ্রু কুঁচকে মনে মনে কয়েকটা পাপী শব্দ উচ্চারণ করে ফেললো সে। ত্রিস্তানকে বললো, “আরেকটু কাছে আসুন। রাস্তার ওদিকে হাঁটছেন কেন?”
রাস্তার দুপাশে হাঁটার অত জায়গা নেই। ত্রিস্তান অটবীর দিকে চাপতেই না চাইতেও অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে ওরা। অটবী অস্বস্তি হচ্ছে।
“আমার মা বিদেশি।”
অটবী বার কয়েক পলক ফেললো। জিজ্ঞাসু কণ্ঠে বললো, “জি?”
ত্রিস্তান আবার বললো, “আমার বাবা পড়ালেখা করতে আমেরিকা গিয়েছিলেন। সেখানেই মায়ের সাথে পরিচয়, প্রেম তারপর বিয়ে।”
অটবী মন দিয়ে শুনলো। বাতাসে উড়তে থাকা চুলগুলো কানে গুজলো। মায়াবী চোখ দুটো থেকে এখনো প্রশ্ন সরছে না। চাহনিতে প্রবল সন্দেহের দানা বুনে বললো, “আপনাকে তো বড়লোক মনে হচ্ছে। সত্যি করে বলুন তো, আপনি কি কোনো খারাপ কাজ করে এই এলাকায় লুকাতে এসেছেন? এমন গরিবের বেশ ধরে থাকেন কেন?”
এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড, তিন সেকেন্ড! আচমকাই ত্রিস্তান হু হা করে হাসতে লাগলো। অটবী কখনো ত্রিস্তানকে এভাবে হাসতে দেখেনি। চোখ বুজে, নিচের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে অবিরাম হাসছে লোকটা। হাসতে হাসতে যেন কেঁদেই ফেলবে। অটবীর রাগ হলো। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো, “এভাবে পাগলের মতো হাসছেন কেন? আমি এমন কি বলেছি?”
নিষ্প্রাণ গাছে কে যেন পানি ঢেলেছে। মুক্ত, বাঁধাহীন হাসিতে ত্রিস্তানকে কিশোর থেকে কম লাগছে না। ছোট্ট একটা কম বয়সী ছেলে। যেন মাত্রই হাসা শিখেছে৷ আনন্দ কি জিনিস– তা উপলব্ধি করতে জেনেছে।
ত্রিস্তান হাসি থামালো। বলে চললো, “আমার মা খুব চঞ্চল ধরণের। ছোট থেকে ছোট বিষয় নিয়েই হাসিখুশি থাকতেন। বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকাগুলো তার খুব ভালো লাগতো। বাবা তাই তাদের সেকেন্ড অ্যানিভারসেরিতে এখানে ঘুরতে আসেন। কাছের রিসোর্ট-টায়। ঘুরতে এসে খোঁজ পেলেন, জঙ্গলের মাঝখানে একটা বাড়ি আছে। বাড়ির মালিক বাড়িটা বিক্রি করতে চায়। মায়ের খুব পছন্দ হয়ে গেল বাড়িটা। বাবাও কিনে ফেললেন।”
অটবী কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললো, “এখন তো আমি আরও নিশ্চিৎ, আপনি বড়োলোক।”
অটবীর অবুজপনায় ত্রিস্তান মুচকি হাসলো। মেয়েটার আজ হয়েছে কি? কাঠখোট্টা হওয়ার অভিনয় বুঝি আর করতে পারছে না?
রয়েসয়ে বললো, “বাবা মারা যাওয়ার পর চাচারা সব সম্পত্তি নিজের নামে করে ফেলেন। এই বাড়িটা আমার নামে থাকায় তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তাই এই বাড়িটা ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। আর আমিও তোমার ধারণাকৃত তথাকথিত বড়োলোক নই।”
অটবী থামলো না। আবারও প্রশ্ন করলো, “আপনাকে আমি কখনো এ এলাকায় দেখিনি কেন?”
“কারণ আমি শহরে বড় হয়েছি। মাঝে মাঝে এখানে আসতাম। বাসাতেই থাকতাম বেশি। আর আমি তোমাকে দেখেছি। তুমি হয়তো খেয়াল করোনি।”
কথায় কথায় কখন যে তারা ‘অরবিন্দ অটবী’-তে পৌঁছে গেছে, অটবী খেয়াল করেনি। খেয়াল হয়েছে তখন, যখন চুপি চুপি তার হাতে একটা-দুটো চকলেট গুঁজে দিলো ত্রিস্তান। সেই তখনকার চকলেট। যেটা অটবী নিতে চায়নি। ফিসফিসিয়ে বললো, “আমি একবার দেওয়া জিনিস ফেরত নেইনা, অরণ্য। রাত হয়েছে, বাসায় গিয়ে চকলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পরো। তুমি এখনো তেতো রয়ে গেছো।”
–
আকাশে ঘন কালো মেঘেরা ছোটাছোটি করছে। এসময় আবহাওয়ায় একটা মিষ্টি ঘ্রাণ ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু এই পুরোনো, অব্যবহৃত পুকুরটা সেটা হতে দিচ্ছে না। নাকের আশেপাশে শুধু বিশ্রী দুর্গন্ধই ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাতে ঘুম হয়নি সরোজের। তন্দ্রার অভাবে চোখের শিরা-উপশিরা রক্তিম হয়ে আছে। চোখের পাতা ফুলে একাকার। ফর্সা ত্বক লাল টকটকে। কোনোমতে রুমাল দিয়ে নাক চেপে আছে সে।
নলী এসেই সরোজকে এভাবে দেখে চমকে উঠলো। উৎকণ্ঠা হয়ে বললো, “আল্লাহ্! এই কি অবস্থা আপনার? রাতে ঘুমান নাই?”
গলায় জোড় পাওয়া যাচ্ছে না। তবুও লহু স্বরে সরোজ উত্তর দিলো, “না।”
–“কেন?”
এই ‘কেন’-র উত্তরে সরোজের কি বলা উচিত? কাল রাতের কথা ভাবতেও তো তার শরীর শিউরে উঠছে। রাত তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠিয়ে জঙ্গলের ভয়াবহ আঁধারের মাঝে ঠান্ডা জমজমে পুকুরের পানিতে গোসল করা কোনো চারটি খানি কথা না। তবে সেটাকে গোসল বলা চলে না। গুণেগুণে পঁচিশটা ডুব দিতে হয়েছিল তাকে। আল্লাহ মাবুদ জানে, পুকুরের ভেতর কি না কি! এমনিতে পিচ্ছিল সিঁড়ি, তারওপর পায়ের সাথে কি কি যেন বারি খাচ্ছিল বারবার। সরোজ তো ভেবেই নিয়েছিল, এটাই আর জীবনের শেষ সময়। এইতো! এখনই পানির নিচ থেকে একটা রাক্ষসী এসে ওর পা টেনে ধরবে!
অসহনীয় সেই ভয়ের কথা ভেবে সরোজের যেন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল। রুমালের ওপাশে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে তাড়াহুড়ো গলায় বললো, “আজকের পর থেইকা এই পুকুরে আর দেখা করতে পারুম না। পুকুর দেখলেই আমার গা জ্বলে। শা’লার অজাতি-কুজাতি পুকুর! একটুর জন্য মাইরাই লাইতো।”
নলী কপাল কুঁচকে তাকালো। ইদানিং পৃথা বেশিই সিআইডি গিরি করছে। আঠার মতো চিপকে থাকে। অনেক কষ্টে সরোজের সাথে দেখা করতে এসেছে সে। অথচ ছেলেটা কাজের কথা না বলে সেই কখন থেকে আবলতাবল বকেই যাচ্ছে!
বিরক্ত হয়ে নলী বললো, “আমার হাতে সময় নেই। তাড়াতাড়ি যেতে হবে। পৃথা থেকে নজর বাঁচিয়ে এসেছি। উলটাপালটা কথা না বলে ভালো কিছু বলুন।”
ওমনি, সরোজ তেঁতে উঠলো, “ভালো কিছু আর কি কইতাম? আমার মুখ দেখছিস? সর্দি-কাশিতে মইরা যাইতেছি। আদর-যত্ন না কইরা চেতস ক্যান?”
“আশ্চর্য! আপনি আমাকে ধমক দিচ্ছেন কেন?”
নিমিষেই সরোজ বড় বড় চোখে তাকালো। সে ধমক দিলো কখন? তড়িৎ গলায় বললো, “আমি কহন ধমক দিছি? তুই কি এহন অসুস্থ প্রেমিকের লগেও ঝগড়া করবি?”
নলী শুনলো না। ঠোঁট চেপে কাঁদো কাঁদো নয়নে তাকালো, “আপনি অন্যের রাগ আমার ওপর দেখাচ্ছেন, তাই না? ভালো! যত দেখানোর দেখান! এটাই আমাদের শেষ দেখা।”
নলী দৌঁড়ে চলে গেল। সরোজ বলতে চাইলো, “নলী, আমার কথাটা তো শোন।”
কিন্তু কথার মাঝখানেই ডাকাতের মতো ভয়াবহ বাজে হাঁচি-কাশিটা চলে এলো বাঁধা দিতে। কি বিশ্রী ব্যাপার-স্যাপার! আজকাল সর্দি-কাশিও এমন চরম মুহুর্তে এসে হাজির হয় নাকি?
–
অটবী কাদিনকে পড়াচ্ছে আজ নিয়ে পাঁচদিন। প্রচুর ফাঁকিবাজ ছেলে। একদিনও পড়া ঠিক মতো দিবে না। অংক করে রাখতে বললে কিচ্ছু করবে না। এসে থেকে ছুটি ছুটি বলে পাগল বানিয়ে ফেলবে। বয়সে ছোট হলেও কাদিন অটবী থেকে প্রায় দুই-তিন ইঞ্চি লম্বা। এত বড় একটা ছেলেকে মারতে-বকতে দ্বিধা হয় অটবীর। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা ভিন্ন। তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। কালকে এত করে বলে গেছে, অংকগুলো করে রাখতে। অথচ কাদিন ছুঁয়েও দেখেনি। কয়টা অংক দিয়েছিল সে? ছোট ছোট মাত্র চারটা! আর কোনো পড়াও ছিল না।
অটবী বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। থমথমে গলায় বললো, “খাতা বের করো। এক্ষুণি আমার সামনে অংকগুলো করবে। দ্রুত!”
কাদিন নিজ জায়গা থেকে নড়লো না। ঠায় বসে রইলো। দায়সারা কণ্ঠে বললো, “আমি আজকে পড়বো না। ছুটি দিন।”
“কি বললে তুমি?”
“আমার ছুটি…”
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই স্কেলের আঘাতে কাদিনের শ্যামবর্ণ হাতের পিঠ ব্যথায় জর্জরিত করে দিলো অটবী। কাদিন তৎক্ষণাৎ শক্ত হয়ে গেল। অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো অটবীর দিকে। অটবীর মুখশ্রী কঠোর, রাগে লাল। টেবিল থেকে ব্যাগটা কাঁধে এঁটে চলে যেতে যেতে বললো, “তোমার আম্মুকে বলে দেবে, আমি আর তোমাকে পড়াচ্ছি না।”
ঘড়িতে তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা। অপমানে চৌচির হয়ে ইলিয়ানা আন্টির বাসা ত্যাগ করার পূর্বে অটবী খেয়াল করলো, ড্রইংরুমের দামি সোফার মাঝখানে অবাক হয়ে বসে আছে ত্রিস্তান। তাকে দেখছে। তার রাগান্বিত নিশ্বাসের উত্তাপ পরিমাপ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
______________
চলবে~
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা
(ছন্নছাড়া পর্বের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।)