হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি পর্ব ২১

0
199

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২১
#জান্নাত_সুলতানা

-“আমি আর খাবো না প্লিজ। ”

-“আর এক বার সোনা। ”

সাদনানের কথায় অসহায় চোখে তাকালো প্রিয়তা।
সাদনান সে সব উপেক্ষা করে আবারও প্রিয়তার মুখে খাবার তুলে দিলো।
প্রিয়তাও আর কথা বাড়াল না। চুপ চাপ খেয়ে নিলো।
কি হবে আর কিছু বলে সেই কখন থেকে বলে যাচ্ছে খাবে না কিন্তু সাদনান শুনলে তো?এক বার এক বার করতে করতে সব খাইয়ে শেষ করে ফেলেছে আর বলেও কাজ নেই। অবশ্য সাদনান নিজেও খাচ্ছে।

খাবার শেষ প্রিয়তা সোফায় বসে আছে। সাদনান সব কি গুছিয়ে রাখছে রান্না ঘরে।
প্রিয়তা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সাদনান তার বউ কে কিছু করতে দেয় নি। নিজে নিজে সব করছে।

আগে যখন এখানে থেকে ভার্সিটিতে পড়তো তখন সাদনান নিজের কাজ নিজেকেই করতো। আর এখনো ঢাকা এলে নিজের কাজ নিজেই করে। তাই সাদনানের কাছে রান্না করা প্লেট হাঁড়ি পাতিল ধোঁয়া বেশি কিছু কঠিন কাজ নয়।

প্রিয়তা এক দৃষ্টিতে সাদনানের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর সামনে অবশ্য টিভি নামক জিনিস টায় একটা কিছু দেখাচ্ছে কিন্তু মেয়েটার সে দিকে কোনো খেয়াল নেই।
সে পলকহীন চোখ চেয়ে রান্না ঘরে কাজে ব্যস্থ থাকা স্বামী নামক পুরুষ টার দিকে।

কি সুন্দর করে বেসিনে প্লেট ধুয়ে টেবিলে এনে রাখে।
সাদনান প্লেট গুলো টেবিলে গুছিয়ে রেখে এগিয়ে এলো প্রিয়তার দিকে। কিন্তু মেয়ে টার সে দিকে কি কোনো হুস আছে?উঁহু থাকলে এতোখনে নিশ্চয়ই লজ্জা নুইয়ে পড়তো।

সাদনান সেন্টার টেবিল হতে রিমোট নেয় টিভি অফ করে।
ঘুরে এসে মেয়েটার সামনে দাঁড়াল হালকা ঝুঁকে ঝট করে কোলে তোলে বউ কে।
প্রিয়তার যেনো ঘুর কাটলো।চোখ বড় বড় করে।
ছোট্ট ছোট্ট হাত ধারা গলা আঁকড়ে ধরে সাদনানের।
সাদনান তাকায় না মেয়েটার দিকে।

বারান্দায় যায় সোজা। প্রিয়তা এখনো তাকিয়ে আছে সাদনানের দিকে।
হঠাৎ পানি পড়া আশে পাশে তাকায় প্রিয়তা। বুঝতে বেগ পেতে হলো না যে সাদনান ওকে নিয়ে বারান্দায় এসে পড়েছে।
কিন্তু বৃষ্টি কখনো থেকে হচ্ছে ওতো দেখেনি।
সাদনান ততক্ষণে প্রিয়তা কে কোল হতে নামি দিয়েছে।
প্রিয়তাও জড়সড় হয়ে দাঁড়ায়। ওর বৃষ্টি ভালো লাগে।
কিন্তু এখন শীত।
তাই বেশি খুশি হতে পাড়লো না।
সাদনানের বেলকনির ছাঁদ না থাকায় বেশ সুবিধা হয়েছে।
সাদনান রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে।
বৃষ্টির ফোঁটা দুজনকেই ভিজিয়ে দিচ্ছে।

সাদনান ভেবেছে প্রিয়তা ওর পাশে এসে হয়তো দাঁড়িয়ে। কিন্তু যখন ডানে তাকাল তখন দেখলো প্রিয়তা আগের যায়গায় দাঁড়িয়ে।
হালকা হালকা কাপছে সাদনান আর এক মূহুর্তে নষ্ট করলো না।
তড়িৎ গতিতে এসে মেয়ে টাকে ঝাপটে ধরে।

অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে

-“কি হয়েছে সোনা?শরীর খারাপ লাগছে? ”

প্রিয়তা নিবু নিবু চোখে চেয়ে

-“আমার ঠান্ডা লাগছে। ”

আরো অস্থির হয় সাদনান। ও ভুলেই গিয়ে ছিল এখন হালকা ঠান্ডা তার মধ্যে মেয়ে টা সন্ধায় একবার গোসল করেছে। এখন দশটার বেশি বাজে।
ছোট্ট বউ তার এতো টা ঠান্ডা নিতে পাড়ছে না তাই।
সাদনান বেশি কিছু ভাবলো না আর।
আবারও কোলে করে বেলকনি হতে রুমে এনে ওয়াশরুমে যায়।
প্রিয়তা বেচারি ঠান্ডা বেশ কাবু করছে মেয়ে টাকে।
সাদনানের এখন নিজের গালে নিজের চর মা’রতে ইচ্ছে করছে। কে বলে ছিল এতো ছোট একটা মেয়ে কে নিয়ে এই ঠান্ডার মাঝে বৃষ্টিতে ভিজতে যাবার? রোমাঞ্চ করতে গিয়ে এখন বউয়ের যদি কিছু হয়? নিজের মাথার চুল নিজে ছিঁড়তে মন চাইছে। কিন্তু এখন মা-রা মারির চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের বউয়ের কাপড় চেঞ্জ করে দিতে হবে।

সাদনান আশে পাশে তাকায়। নাহ ওয়াশরুমের কোথাও বউয়ের কাপড় নেই। শুধু সাদনানের একটা হালকা আকাশ রংয়ের সার্ট আছে।দরজায় ঝুলানো সার্ট এগিয়ে গিয়ে নিলো।
কিন্তু শরীর হতে শাড়ীর আঁচল ফেলে বেচারা সাদনানের গলা শুকিয়ে এলো।
ফাঁকা এক টা ঢোক গিলে নিলো।এই মেয়ে হুস না থেকেও বেচারা সাদনানের হুস ও উড়িয়ে দিচ্ছে।
সাদনান যতবার প্রিয়তাকে শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছে চোখ বন্ধ রেখে।মেয়ে টা নিজেও চোখ বন্ধ রাখে।
এই যে সন্ধায়ও কাপড় পড়িয়েছে তখন চোখ বন্ধ অবস্থা পড়িয়েছে।
সাদনানের পরক্ষণেই মনে হলো এখন এসব ভেবে কাজ নেই।আগে বউকে সুস্থ করতে হবে।
শ্বাস টানে বার কয়েক।
কন্টোল করে।
পড়িয়ে দেয় হাতে থাকা সার্ট টা। আবারও কোলে নেয়।
রুমে এনে শুইয়ে দেয়। কম্বল জড়িয়ে দেয় শরীরে।
নিজেও একটা ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে একটা টি-শার্ট পড়ে বেড়িয়ে এলো।
প্রিয়তার এখন কিছু টা ঠান্ডা কম লাগছে।
চেয়ে আছে গোল গোল চোখ করে

সাদনান বেড়িয়ে এসে লাইট অফ করে। ড্রিম লাইট অন করে শুয়ে পড়ে এসিও কমিয়ে দেয়।
বাহিরে বৃষ্টি এখনো পড়ছে।

জড়িয়ে ধরে প্রিয়তা কে।
প্রিয়তা নিজেও জড়িয়ে ধরে। বেশ ঠান্ডা লাগছে।
সাদনান প্রিয়তার গলায় মুখ আনে। ছোট্ট ছোট্ট টুপ টাপ কয়েকটা চুমে আঁকে গলার নিচ বুকের উপরিভাগের অংশে। প্রিয়তার গায়ে থাকা সার্ট এর একটা উপরের বোতাম খোলে নেয় সাদনান।

-“আমি ওয়াশরুম যাব।”

হঠাৎ মিনমিন করে বলে প্রিয়তা

-“আমি নিয়ে যাচ্ছি।”

বলে সাদনান সাইডে থাকা টেবিল লাইট অন করে।

-“আমি পারবো। ”

বারণ করলো কি? না-কি লজ্জা? তবে সাদনান সে সব কথা কানে তোলে না। ঘুরে এসে বিছানা হতে নিজের কোলে নেয় প্রিয়তাকে।

ওয়াশরুমের দরজার সামনে নামিয়ে দেয়।
মিনিট দশেকের মতো অপেক্ষা পরেও যখন মেয়ে টার কোনো সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না তখন সাদনান ডাকে

-“প্রিয়তা?”

না কোনো আওয়াজ আসছে না। সাদনান ভয় পায় কিছু কি হলো আবার?

-“সোনা কি হয়েছে? শরীর কি আবার খারাপ লাগছে?”

সাদনান অস্থির।পাগলের মতো ডেকেই যাচ্ছে।
তবে ভিতর হতে কোনো রকম রেসপন্স আসছে না।

-“আমার ভয় করছে সাদনান ভাই।”

হঠাৎ করে প্রিয়তা ভিতর থেকে বলে উঠে।

সাদনান অবাক হয়। কি বলছে মেয়ে টা ভয় করছে? কিন্তু কেন?

-“বেড়িয়ে এসো জান।তুমি না চাইলে আমি কিছু করবো না। ”

সাদনানের এরূপ কথা ভরসা পায় মেয়ে টা।
বেড়িয়ে আসে।কিন্তু সাদনান আর একটা বাক্যও প্রয়োগ করে না। চুপ চাপ বিছানায় শুয়ে পরে।রাগ হচ্ছে। কি করে এমন একটা পরিস্থিতি করতে পারলো মেয়ে টা। একবার কি সাদনান কে বলা যেতো না যে ওর ভয় লাগছে। সাদনান কি জোড় করতো? এতোটাও কাপুরষ নয় সাদনান। ভালোবাসে মেয়ে টাকে। আর এই মেয়ে কি করে পারলো এমন টা করতে।

প্রিয়তাও গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে।ও বুঝতে পারছে না সাদনান কি রাগ করলো?আবার পরক্ষণেই ভাবে করারই কথা।
কিন্তু ওর কি দোষ ওর তো কেমন ভয় ভয় করছে।

প্রিয়তা আবারও গিয়ে জড়িয়ে ধরে সাদনান কে।
সাদনান নিজের গা হতে হাত সরায়। কিন্তু প্রিয়তা আবার দেয় সাদনান এবার আগের ঘটনা ঘটায়। আবারও হাত রাখে। কিন্তু সাদনান এবার সরায় না উঠে বসে মেয়ে টাকে নিয়ে।
কিছু বলবে মস্তিস্ক কথা রেডি করে নিয়েছে। কিন্তু মেয়ে টার দিকে
পূর্ণ দৃষ্টি পরতেই সব কথা গলায় আটকায়।
চোখের দৃষ্টি ফেলে এলোমেলো।

-“ঘুমিয়ে পড়ুন। ”

বলেই উল্টো দিকে ঘুরতে যাবে কিন্তু প্রিয়তা সেই সুযোগ দিলো না। এই এলোমেলো কাপড় নিয়ে জড়িয়ে ধরে স্বামী কে।সাদনান দিশেহারা অবস্থা।

-“অনেক কষ্ট নিজেকে সামলে রেখেছি সোনা। প্লিজ এমন কিছু করো না। যাতে করে আমি তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করে ফেলি।”

সাদনান মিহি কণ্ঠে বলে।
প্রিয়তার কোনো হেলেদুল নেয় আগের নেয় ঝাপটে ধরে।
সাদনান আবাও বলে

-“তুমি এখানে ঘুমিয়ে পড়ো।আমি পাশের রুমে যাচ্ছি। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে ডেকে নিও আমি এসে দিয়ে যাবো।”

-“আমার আপনাকে প্রয়োজন। প্লিজ যাবেন না। জানি না কি হয়েছিল তখন আমার। কিন্তু আমি আর,,,

ব্যাস সাদনান আর কিছু তোয়াক্কা করে না কিছু শুনেও না। মেয়ে টার অধর জোড়া মুখে নিয়ে নেয়।

বেশ অনেক টা সময় নিয়ে গাঢ় একটা চুম্বন করে।
ছেড়ে দিয়ে মেয়েটার কপালে নিজের কপাল ঠেকায় শ্বাস নেয় জুড়ে দুজনেরই এক অবস্থা।

সাদনান নিজের গা হতে একটু আগে পরিহিত টি-শার্ট খোলে ছুঁড়ে ফেলে মেঝেতে।
আস্তে করে বউকে শুইয়ে দেয়। একটু আগে যত্ন করে বউকে পড়িয়ে দেওয়া সার্টটাও স্থান পায় মেঝেতে।
নিজের সম্পূর্ণ ভর ছাড়ে মেয়েটার ছোট শরীর টার উপর। এতো দিন কাছে কাছে থেকেও ভালোবাসতে না পারা সব জমিয়ে রাখা নিজের আদর, ভালোবাসা উজাড় করে দিলো। মেয়েটাও নিজের স্বামীর ভালোবাসা ছুঁয়া উতলা হলো। ছোট্ট দেহখানা ঢেকে গেলো সাদনানের পেশিবহুল শরীরের নিচে।

#চলবে……..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here