শ্রাবণসন্ধ্যা পর্ব:-০৪

0
3949

শ্রাবণসন্ধ্যা পর্ব:-০৪
#আমিনা আফরোজ

সন্ধ্যার থেকে হাত দূয়েক দূরে দাঁড়িয়ে আছে নেহাল। আজও আকাশ কালো মেঘে ঢেকে আছে। হয়তো কিছুক্ষণ পরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে। দখিনা শীতল বাতাস বইছে। সেইসাথে বাতাসে ভেসে আসছে কদম ফুলের মিষ্টি গন্ধ। সন্ধ্যা ইতস্তত ভাবে চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো। সন্ধ্যাকে এভাবে তাকাতে দেখে নেহাল বলল,

–“এখানে কেউ নেই। তুমি নিশ্চিন্তে আমার সাথে কথা বলতে পারো।”

নেহালের কথা শুনে চমকে উঠলো সন্ধ্যা। তারপর নেহালের ভালো ভাবে তাকালো। নেহাল দেখতে বেশ সুদর্শন। গৌরবর্ণ চেহারা,মাথায় ঝাঁকড়া কালো চুল, ঈষৎ বাদামী বর্ণের চোখ এক কথায় যাকে বলে সুদর্শন। কিন্তু সন্ধ্যা অনেক ভাবনার পরেও বুঝতে পারছে না নেহালের মত সুন্দর ছেলে কি করে সন্ধ্যার মত মেয়ের জন্য পাগল হতে পারে।

সন্ধ্যাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নেহাল মুচকি হেসে বলল,

–“একি সন্ধ্যা তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? ছি ছি আমার সম্মান তুমি এভাবে নষ্ট করছো?

নেহালের কথা শুনে সন্ধ্যা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,

–“আপনি কী বলছেন এসব? আমি কেন আপনার সম্মান নষ্ট করতে যাব?”

সন্ধ্যার কথা শুনে মনে নেহাল মুচকি হেসে বলল,

–“আমি তো তোমারই। সেই হিসেবে আমার সম্মান তুমি নষ্ট করতেই পারো তবে এখানে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে বিয়ের পর এভাবে তাকালে ভালো হয় আর কি। ইয়ে মানে এখন তাকালে আমার কেমন যেন লজ্জা করে।”

নেহালের কথা শুনে সন্ধ্যার এখন নিজের ওপরই রাগ লাগছে। কেন ও এমন ভাবে দেখতে গেল নেহালকে। ওতো এমন না।

সন্ধ্যাকে ভাবতে দেখে নেহাল বলল,

–“থাক এসব বাদ দাও। আসল কথায় আসো। বল কি সিদ্ধান্ত নিলে তুমি?”

নেহালের কথা শুনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সন বললো,

–“আমি জানিনা কথাগুলো আপনাকে কিভাবে বলবো আর আপনি বা কিভাবে নিবেন। দেখুন আপনার আর আমার মধ্যে বিশাল পার্থক্য। আমাদের মাঝে দেওয়াল কেউ ভাঙতে পারবে না এমনকি আপনিও না।”

–“কি বলতে চাচ্ছো তুমি?”

–“আপনারা বিত্তবান মানুষ। অপরদিকে আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার। আপনার আর আমার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তাই আমাদের পরিণতি সম্ভব না। তাছাড়াও আমার বাবা রাজি হবে না, আর না আপনার বাবা কখনো রাজি হবে। তাই আমাদের এখানেই সবকিছুর ইতি টানা প্রয়োজন।

সন্ধ্যার কথা শুনে নেহাল ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

–“তার মানে তুমি আমার প্রস্তাবে রাজি নয় তাই তো?”

সন্ধ্যা মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল। সন্ধ্যার উত্তর শুনে নেহাল হেসে বলল,

–“তুমি রাজি থাকো বা না থাকো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কারণ তোমাকে আমারই হতে হবে। আমি ছাড়া আর কোন ঠিকানা নেই তোমার। যাও বাসায় গিয়ে বিয়ের প্রস্তুতি নাও। খুব শীঘ্রই তোমার আর আমার বিয়ে হবে।”

নেহালের কথা শুনে সন্ধ্যা অবাক হয়ে বলল,

–“কি বলছেন কি এসব আপনি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

–“তোমাকে আর এসব কিছুই ভাবতে হবে না। দেখলাম তো ভেবে ভেবে কি সিদ্ধান্ত নিলে তুমি। তোমাকে দ্বারা আর যাই হোক কোন ভাবনা চিন্তা হবেনা। তাই এসব আলতু ফালতু ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে আমাদের বিয়ের কথা ভাবো।”

–“দেখুন আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।”

–“আমি কি তোমার মতামত জানতে চেয়েছি নাকি। কাজী সাহেব আসবে তুমি শুধু কাবিননামায় স্বাক্ষর করে দেবে আর কবুল করবে তোমার কাজ শুধু এটুকুই।”

–“ফাজলামি পেয়েছেন নাকি? আমার বিয়ে আর আমার মতামত দিবেন না?”

–“না নিবো না। কারণ তোমার মতামত নিতে গেলে আমাকে সারা জীবন আইবুড়োই থাকতে হবে।”

–“দেখুন…

সন্ধ্যাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে নেহাল বলল,

–“তুমি দিনকে দিন কেমন বেহায়া হয়ে যাচ্ছ সন্ধ্যা। বিয়ের আগে কি সব দেখতে বলছো। ছি ছি লোকে শুনলে কি বলবে?”

নেহালের কথা শুনে সন্ধ্যা রেগে বলল,

–“আপনাকে তো আমি…

–“এ মা কি করবে গো। যা করার বিয়ের পরে করো। বিয়ের আগে করলে লোকে কি বলবে?”

সন্ধ্যা বিরক্তি স্বরে বলল,

–“আপনি কি জানেন আপনি একটা বিরক্তিকর লোক?”

–“তোমার কাছে আমি বিরক্তিকর লোক হতেও রাজি আছি।”

–“আপনার সাথে কথা বলাটাই আমার ভুল হয়েছে।”

নেহাল মুচকি হেসে বলল ,

–“ভুলটা না হয় বিয়ে করে পুষিয়ে নিও।”

–“বয়েই গেছে আমার আপনাকে বিয়ে করতে।”

এই কথা বলে সন্ধ্যা নেহালকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বাড়ির দিকে চলে গেল। আর নেহাল সন্ধ্যা যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,

–“আমার উপর যতই রাগ করো শ্যামলতা, বিয়ে তো আমাকেই করতে হবে তোমার। কেননা তুমি বিনা আমি শূন্য”

নেহালের কথাগুলো সন্ধ্যা শুনেও না শোনার ভান করে চলে গেল। আপাতত নেহাল কে নিয়ে কোন কিছু ভাবতে চায় না। সন্ধ্যার মাথায় এখন শুধু ওর বাবার স্বপ্নগুলো রয়েছে। সেখানে আর কিছু ঠাই দিতে চায় না।

অন্যদিকে নিহাল চলে গেল বাগানবাড়ির দিকে। ওর বাবাকে এখন বাগানবাড়িতে পাওয়া যাবে। বাবার সাথে কথা বলা খুব প্রয়োজন এখন ওর। কোনভাবেই হারাতে চায় না ও। তাই যেনতেন প্রকারে সন্ধ্যাকে ওর চাই। নেহাল বাগান বাড়িতে গিয়ে শুনল ওর বাবা এখনো আসে নি।বেশ কিছুক্ষণ পরে চেয়ারম্যান সামাদ মিয়া আসলেন বাগানবাড়িতে। নেহালকে এখানে দেখে বেশ অবাক হয়ে গেলেন ওনি। ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞাস করলেন,

–“কি ব্যাপার আব্বা আপনি এখানে?”

নেহাল মুচকি হেসে বলল,

–“আসতে পারি না নাকি।”

–“না আপনি তো আর এদিক তেমন একটা আসেন না তাই কইলাম আর কি।”

–“আসলে একটা জরুরী কথা আছে তোমার সাথে।”

–“কি এমন জরুরি কথা আব্বা?”

–” বাবা তুমি তো জানো আমি সন্ধ্যাকে ভালোবাসি।আর আমি ওকে বিয়ে করব তাও তিন দিনের মধ্যে।”

–“কি বলছেন আপনি এসব?”

–“আমি যা বলছি তা অনেক ভেবে চিন্তেই বলছি। আগামীকালই সন্ধ্যাকে দেখতে যাবে তোমারা।”

–“এইটা হবে না।আমি এই বিয়েতে রাজি না। আপনার সব আবদার পূরণ করলেও এই আবদার পূরণ করতে পারতাম না।”

–“কেন? কারণটা জানতে পারি কি?”

–“আমাদের সাথে কি ওদের মানাই আপনিই বলেন?”

–“কেন মানাবে না বলো?”

–“ওদের অবস্থা আর আমাদের অবস্থা দেখছেন?”

–“আমি এত কথা শুনতে চাই না বাবা। আগামীকাল তোমরা সন্ধ্যা কে দেখতে যাচ্ছো এইটাই শেষ সিদ্ধান্ত।”

নেহাল ওর বাবাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রাগে চলে গেল। চেয়ারম্যান সামাদ মিয়া তখনো চেয়ারে ঠাঁই বসে ছিলেন। ছেলে জেদের কাছে বরাবরই তিনি হার মেনেছেন। আজও যে তার ব্যতিক্রম হবে না এইটা তিনি বেশ বুঝতে পারছেন। বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে আবারো মিন্টুকে ডেকে পাঠালেন তিনি। চেয়ারম্যান সাহেবের ডাকে মিন্টু তড়িঘড়ি করে চেয়ারম্যান সাহেবের সামনে এসে হাজির হলো। পান খাওয়া দাতে হেসে বলল,

–“আসসালামু আলাইকুম চেয়ারম্যান সাব।”

–“ওয়ালাইকুমুস সালাম মিন্টু।”

–“আমারে কিল্লাই ডাকছিলেন ?”

–“তোমারে একবার আশরাফ মিয়ার বাড়িত যাইতে হইবো। গিয়ে বলবা আমি সন্ধ্যার পর হ্যাঁগোর বাড়িতে যামু। বুইছনি কি কইছি মুই?”

–“হ চেয়ারম্যান সাহেব আমি বুঝছি। আমি এখনই যাইতেছি আশরাফ মিয়ার বাড়িতে।”

–“ঠিক আছে যাও তাইলে।”

মিন্টূ চেয়ারম্যান সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল আশরাফ মিয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে। চেয়ারম্যান সামাদ মিয়ার তখনো শূন্য দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। ভীষণ ভয় ঢুকেছে মনে তার। শেষ পর্যন্ত হয়তো ছেলেকে বরাবরের জন্যই হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু ছেলেকে নিজের কাছে রাখার কোন পথ খুঁজে পাচ্ছেন না এই মুহূর্তে তিনি। কাজেই উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন পথ নেই তার কাছে।

চলবে

(আমাদের পরীক্ষার তারিখ দিয়ে দিয়েছে তাই পরীক্ষার চিন্তায় কি লিখেছে নিজেও জানিনা। তাই ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here