সম্পূর্ণ প্রাপ্তমনস্ক এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)
🍁
খট করে শব্দ তুলে বন্ধ হলো সদর দরজা, খাদিজা বেগমের চোখের আড়াল হলো রাইফ এবং মীরা। মধ্যরাত্রে মেয়ে এবং মেয়ে জামাতার গমন পথ অনুসরণ করে বদ্ধ দরজাতেই চেয়ে আছেন তিনি। হঠাৎ পেছন থেকে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলেন খাদিজা বেগম। এক কদম সরে গিয়ে পিছু ফিরে দেখলেন স্বামী শওকত রহমান দাঁড়িয়ে। সদ্য ঘুম থেকে জাগ্রত হয়েছেন বলে চোখ কঁচলে যাচ্ছেন বারংবার। লম্বা একটা হাই তুলে ঘুমের রেশ কাটিয়ে খাদিজা বেগম শুধালেন,
-‘এখানে কি করছেন? ভয় পাইছি অনেক। যান ঘুমান।’
-‘কে আসছে?’
-‘রাইফ। চলেও গেছে। মীরাকে নিতে আসছিলো।’
উৎকন্ঠিত হলো শওকত রহমান। শুধালেন,
-‘এতো রাতে! কি হলো আবার?’
-‘কিছু হয় নি। রাইফ আমাকে ঘুমাতে বলছে, আপনি ঘুমান। চলেন।’
কথা সমাপ্ত করেই নিজস্ব রুমের দিকে হাঁটা ধরলেন খাদিজা বেগম। রাইফের পাগলামি তিনি ঠিকি বুঝতে পেরেছেন। মিটিমিটি হাসছেন, মেয়েকে যে সুপাত্রের হাতে দিতে পেরেছেন সেটা ভেবে খুশিও হলেন। স্ত্রীর কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে না পেরে ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছেন শওকত রহমান। স্বামীর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পিছু ফিরলেন খাদিজা বেগম, কন্ঠ উঁচু করে তাগদা দিয়ে বললেন,
-‘কি হলো, দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? আসেন। শুধু শুধু চিন্তা করছেন, কিছু হয় নি।’
______________
নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে মোজাইক করা সিঁড়ির ধাপ গুলো একের পর এক ক্রমান্বয়ে গুটি গুটি পায়ে রাইফের পেছন পেছন অতিক্রম করছে মীরা। কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে ওঠার ফলে মাথা কিছুটা ভার হয়ে আছে তার। টালমাটাল ঘুম কাতুরে মীরা রাইফের সাথে পা মেলাতে সক্ষম হচ্ছে না, তাই পিছিয়ে গেলো খানিকটা। অধৈর্য রাইফ এর পছন্দ হলো না মীরার ধীর গতিতে হাঁটা। নিজের পা দুটো থামালো, ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছু ফিরলো। হঠাৎ রাইফের পা স্থির হওয়াতে নিচের দিকে তাকিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করে হাঁটতে থাকা মীরা মাথা উঁচু করে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো রাইফের দিকে। লোকটির চোখ দূটো অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ বেশ লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। চৌকস চেহারাটা তেও ক্লান্তির ছাপ। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে জার্নি এবং রাত জাগার ফল এটা। আচ্ছা, এটা মীরা বিহীন থাকার ফল বললে কি ভুল হবে? ভুল হলেও কিছুটা সঠিক তো হবে। এই যে, রাইফের আগামীকাল ফেরার কথা থাকলেও, আজকেই ফিরলো, কারণ তো মীরাই। আবার ঘুমানোর জন্য বারবার চেষ্টারত রাইফ মধ্যরাত অব্দি নির্ঘুম কাটালো, সেটা তো মীরার জন্যই। তবে?
হাত বাড়িয়ে মীরার কোমল একটা হাত মুঠোয় নিলো রাইফ। নিজের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে এই পন্থায় উত্তম মনে হলো। অস্থির চিত্তে দ্রুতপদে হাঁটতে থাকা মানবটির সাথে মীরা তাল মেলাতে পারলো না তবুও, পেছনেই পরে রইলো। ধপাধপ বড় বড় কদমে হাঁটতে থাকা রাইফ মীরার হাত ধরে এক প্রকার টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মাত্র শুকিয়ে আসতে শুরু করা হাতের ক্ষততে চাপ লাগায় মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো মীরা। দাঁড়ালো, মিনমিন করে বলল,
-‘আস্তে হাঁটুন না। হাতে ব্যাথা পাচ্ছি তো।’
রাইফ থামলো, মীরার হাতের কথা তো একদম ই ভুলে গিয়েছিলো সে। সাথে সাথেই ছেড়ে দিলো কোমল হাতটা। সরু দৃষ্টিতে সামনের রমনীকে এক নজর দেখে তিন সিঁড়ি পিছিয়ে গেলো মীরাকে অতিক্রম করে। এতোক্ষণ যাবত সামনে থাকা সুঠাম দেহি মানুষটা এখন ঠিক মীরার পেছনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। মীরার হাতের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় শুধালো রাইফ,
-‘বেশি ব্যাথা পাইছো?’
-‘উহু। কিছুটা।’
মীরার উত্তর দিতে দেড়ি রাইফের মীরাকে কোলে নিতে দেড়ি হলো না। মীরা কিছু বোঝার আগেই আকস্মিক পাঁজকোলা করে ছোট্ট দেহটাকে শূন্যে তুলে নিয়েছে সে। রাইফের হঠাৎ এমন কার্যে মীরার ছোট্ট হৃদয় কেঁপে উঠলো। হতভম্ব হলো, পরে যাওয়ার ভয়ে দু হাতে রাইফের গলা আঁকড়ে ধরলো। ভয় তো কা’টলো কিন্তু লজ্জার চাদর মারাত্মক ভাবে জড়িয়ে নিলো মীরাকে। সবুজ শাড়ি পরিহিত মীরার ঘুম কাতুরে ফর্সা মুখাবয়বে ফুটে ওঠলো লজ্জা মিশ্রিত মুচকি হাসি। মুখ লুকালো রাইফের থেকে। সুপুরুষ টির গলার কাছে থাকা মীরার লাজুক মুখশ্রী নত হলো, থুতনি ঠেকল নিজ বুকে। রাইফকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকা মীরা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে নিচু আওয়াজে শুধালো,
-‘কি করছেন?’
-‘কি করছি?’
ঠোঁট ফুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল মীরা,
-‘এভাবে কেউ কোলে নেয়? কেউ দেখে ফেললে কি হবে?’
-‘কি আর হবে, যে দেখবে তার হিংসে হবে। খাওয়া দাওয়া করো না ঠিক মতো? এতো পাতলা কেনো তুমি? ৩০ কেজিও মনে হচ্ছে না।
গাল ফুলালো মীরা। সবসময় উনার বাঁকা বাঁকা কথা। কোথায় পঞ্চাশ কেজি আর কোথায় ত্রিশ! গুনে গুনে বিশ কেজি ডিফারেন্স। লোকটার সব কিছু ভালো হলেও আইডিয়া ভালো না। পাঁচ কেজি ডিফারেন্স হলে মানা যেতো, তাই বলে এতো?
দ্রুত পায়ে হাঁটতে থাকা রাইফের দু পা শ্লথ হলো পাঁচতলার দরজার সামনে এসে। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে মীরা রাইফের কোল হতে নামার জন্য একটু ছটফট করতেই রাইফ শক্ত করে চেপে নিলো বুকের সাথে। চোখ রাঙ্গালো, উসখুস করতে থাকা মীরা মূহুর্তেই দমে গেলো। চুপটি করে রয়ে গেলো ওভাবেই। নিজের বাসার দরজা খুলতে গিয়েও কি মনে করে আর খুললো না রাইফ। পা বাড়ালো ছাদের দিকে। রাইফের দিক পরিবর্তন মীরার চোখে পরলো, রাইফের ভুল হচ্ছে ভেবে তড়িঘড়ি করে বলল,
-‘বাসার দরজায় আমরা। পাঁচ তলায়। উপরে যাচ্ছেন কেনো?’
মীরার প্রশ্ন শুনে রাইফ রহস্যময় একটা হাসি ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে বলল,
-‘তোমাকে মে/রে ফেলতে।’
-‘সত্যি?’
মীরার কন্ঠে বিস্ময়ের ছাপ। এতোক্ষণ ব্যাস্ত পায়ে হাঁটতে থাকা রাইফ ধীর পায়ে হাঁটছে। একটু আগেও তার মাঝে যে পরিমাণ ব্যাস্ততা ছিলো তার এক বিন্দু ছিটেফোঁটাও নেই এখন। এই পথ পাড়ি দেওয়ার নেই কোনো তাড়াহুড়োও। ধীরে ধীরে রাইফ এর হাসি দীর্ঘ হলো। তবুও আগের ন্যায় ই রহস্যময় ভাবেই বলল,
-‘সত্যি না হলে কি এমনি এমনি এতো রাতে তোমাকে তুলে আনি। ভাবো মীরা ভাবো। চিৎকার চেঁচামেচিও করতে পারো।’
বুদ্ধিমতী মীরা ঘাবড়ালো না। রাইফের রহস্যময় হাসিটাই অনুকরণ করে নিজের মুখে ফুটে তুলল, কন্ঠ স্বাভাবিক রেখে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,
-‘আচ্ছা। আপনি তাহলে পৃথিবীর প্রথম মানুষ যে কাওকে খুন করতে তাকেই কোলে করে নিয়ে যাচ্ছেন যেনো হাতে ব্যাথা না পায়। ব্যাপারটা ঘেটে গেলো না.?
সিঁড়ির একেকটা ধাপ অতিক্রম করা রাইফ মীরার বুদ্ধিদীপ্ত জবাবে পুনরায় মুচকি হাসলো। মিটিমিটি হাসি ঠোঁটের কোণায় ফূটিয়ে বলল,
-‘প্রেমের ম/রাই মা/রবো তোমায়। আমার স্পর্শে অথবা গাঢ় চুম্বনে। কাওকে মা/রার পূর্বে যেমন ছু’ড়িতে শা/ন দেওয়া দরকারী, বউকে প্রেমাসিক্ত করতে কোলে নেওয়া জরুরি। বলতে পারো প্রথম ধাপ এটা। যেটাতে আমি পাস করেছি অলরেডি।’
রাইফের কথা শুনে বিস্ফোরিত নেত্রে এক ধ্যানে তাকিয়ে মীরা। হৃদ স্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে কেনো এভাবে? বলে কি এই লোক? এই ছিলো তাহলে উনার মনে? অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া মীরা যেনো পলক ফেলতেও ভুলে গেলো। এক ধ্যানে একই রকম ভাবে তাকিয়ে আছে সে। সম্মুখে তাকিয়ে থাকা রাইফ আঁড় দৃষ্টিতে দেখলো মীরার বিস্মিত মুখশ্রী। মেয়েটাকে লজ্জায় ফেলতে চায় নি সে। ভালো মানুষ সে কিন্তু একমাত্র মীরাকে কাছে পেলেই কেমন খারাপ মানুষ হয়ে যায়। না না, এটাকে কি খারাপ বলা যায়? প্রেমিক পুরুষ শব্দটা বেশ মানায়।
মীরার দিকে তাকালো রাইফ, এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকা মেয়েটার ধ্যান ভাঙ্গাতে দুই ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁকা করে ফু দিলো মীরার গৌড় বর্ণের মুখ টাতে। কেঁপে উঠলো মীরা, ধ্যান ভা’ঙ্গলো, সাথে সাথে আঁখিপল্লব বদ্ধ হলো। রাইফের গলা হালকা করে ধরে রাখা মীরার দু হাত আঁকড়ে ধরলো শক্ত করে। একটা টু শব্দ করার সাহস পেলো না আর।
ছাদের দরজা খোলা। প্যান্টের পকেট হতে চাবিটা আর বের করতে হলো না রাইফের। পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ক্যাচক্যাচ আওয়াজ তুলে স্টিলের দরজাটা খুলল সে। ডান পা ভেতরে রেখে প্রবেশ করল খোলা ছাদে। বিশাল আকাশের নিচে থাকা এক জোড়া কপোত-কপোতী কে মুক্ত হাওয়া এসে আলিঙ্গন করলো সাথে সাথেই। সামনে হাঁটতে থাকা রাইফ কি মনে করে পিছু ঘুরলো, পুনরায় দরজার কাছে এসে আদেশের স্বরে বলল,
-‘সিটনিকি টা লিগিয়ে দাও তো মীরা।’
-‘হুম?’
-‘সিটনিকিটা লাগাও। হুটহাট কেউ এসে ডিস্টার্ব করুক সেটা আমার পছন্দ না। লাগাও।’
শেষ কথাটা কিছুটা জোর দিয়ে ধমকের সুরেই বলল সে। রাইফের মৃদু ধমকেই দ্বিতীয় প্রশ্ন করার সুযোগ পেলো না মীরা। গলা থেকে হাত নামিয়ে রাইফের কথা মতো দরজার সিটনিকি লাগিয়ে দিলো। রাইফ আর দেড়ি করলো না, পুনরায় ঘুরে রেলিং এর কাছে এসে দাঁড়ালো। কোলে থাকা মীরাকে পা ঝুলিয়ে বসিয়ে দিলো ইট সিমেন্ট এর তৈরি সরু রেলিং এর উপর। পরে যেনো না যায় সে জন্য পুরুষালি দু হাত আঁকড়ে ধরে রাখলো মীরার ফিনফিনে কোমড়।
শীতল হাওয়া বইছে প্রকৃতিতে। আকাশে আজ আর রুটির ন্যায় জ্বলজ্বলে গোলাকৃতির চাঁদটা নেই। নক্ষত্ররাজিতে ভরে আছে সমগ্র আকাশ। সোনালী আলোয় ঝিলমিল করছে। আজ অনেক দিন পর আসমান ভরা নক্ষত্রপুঞ্জের মেলা দেখে বিমোহিত হলো মীরা। রাইফের দুহাতে আঁকড়ে থাকা মীরা ব্যাস্ত চাঁদহীন তারায় ভরা আকাশ দেখতে, আর সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মানব ব্যাস্ত নিজের জীবন রাঙ্গিয়ে দেওয়া রমনীকে দেখতে। রাতের নিকষ কালো আঁধার আর আঁধার নেই। চারিপাশের কৃত্রিম আলোতে মীরার মুখ রাইফের কাছে স্পষ্ট দৃশ্যমান। আবছায়া আলোয় একরাশ মুগ্ধতা ছেয়ে গেছে মীরার সমগ্র আদল জুড়ে। বিমোহিত রাইফ আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো। কোমড় থেকে এক হাত সরিয়ে মীরার খোঁপা করা চুলের পেছনে হাত রাখলো। খোঁপায় গুঁজে দেওয়া সরু কাঠিটা আলতো করে টান দিতেই ঝরঝরে দীঘল কালো চুল গুলো পিঠ ময় ছড়িয়ে কোমড়ের নিচে দুলতে লাগল। আকাশ দেখতে থাকা মীরা রাইফের এমন কার্যে উর্ধ্ব হতে নজর সরিয়ে নিলো, দৃষ্টি নিবদ্ধ করল রাইফের মুখে।
না আছে চাঁদের আলো, আর না আছে ঝলমলে সূর্যের আলো। আশেপাশের ওই কৃত্রিম আলোর ছিটেফোঁটাও মীরার মুখে খুব বেশি পরে নি। তবুও রাইফ মুগ্ধ নজরে দেখেই যাচ্ছে সামনে খোলা চুলে বসা রমনী কে। পলক পরছে না রাইফের, গম্ভীর মুখাবয়বে নেই সচারাচর ফুটে থাকা মুচকি হাসিটাও। সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সুপুরুষ টির শান্ত আচরণ মীরাকে সংকোচিত করলো বেশ। আবারও, হ্যাঁ আবারও রাইফের এমন চাহনি তে মীরার বুক ধ্বক করে উঠলো। এই মুগ্ধ নজর, এই থমথমে গাম্ভীর্যপূর্ণ
মুখ খুব সচারাচর দেখা যায় না লোকটির। আর যখন দেখা যায় তখন মীরাকে নিজের করে নিতে এক পা পিছু হয় না যা মীরা এতো দিনে প্রমাণ পেয়েছে বেশ কয়েক বার। অপলপক দৃষ্টি ভ’স্ম হওয়া মীরা কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলল,
-‘কি দেখছেন?’
শান্ত গম্ভীর পুরুষটার শীতল কন্ঠের জবাব,
-‘তোমাকে।’
-‘আমাকে তো রোজ দেখেন। এভাবে দেখার কি আছে।’
গাম্ভীর্য পূর্ণ রাইফের ঠোঁটের কোনায় ঈষৎ হাসি ফুটলো যা মীরার দৃষ্টিগোচর হলো না। শীতলতর হলো রাইফের কন্ঠ। বলল,
-‘তুমি আমার এমন এক চাওয়া-পাওয়া, যার শেষ নেই, যার সমাপ্তি বলতে কিছু নেই। তোমাকে আমি যতবার দেখি, প্রতিবার নবরূপে আবিস্কার করি। একবার দেখি, বার বার দেখি, হাজারবার দেখি, দেখতেই থাকি। এতোবার দেখি তবুও মুগ্ধতা শেষ হয় না। তোমাকে দেখার সাধ যে আমার কিছুতেই মিটে না।’
থামল রাইফ। কিঞ্চিৎ মাথা ঝুকে রাইফের বুকের উপর দৃষ্টি রেখে একেকটা উচ্চারিত বাক্যের নিগুঢ় অর্থ অনুধাবন করছে মীরা। কোমড় থেকে হাত সরিয়ে এবার মীরার গালে হাত রাখলো রাইফ। মীরার কান, গলা উভয়ই স্পর্শ করেছে রাইফের আংগুল গুলো। মীরার নরম গালের উপর রাখা বৃদ্ধাংগুল আলতো ভাবে ঘষে দিলো বেশ কয়েকবার। চল্লিশ সেকেন্ড সময়ের ব্যাবধানে নিরবতা ছেদ করে রাইফ পুনরায় বলল,
-‘তুমি আমার রোজকার নে/শা হয়ে যাচ্ছো মীরা। তোমাকে দেখার নে/শা, কাছে পাওয়ার তীব্র নে/শা দিনকে দিন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুঝলে মীরা, তোমার এই লজ্জাতুর মুখটা আমাকে খুব টানে। টানছে। বেহায়া মন প্রচন্ডভাবে বেহায়া হচ্ছে।’
অর্থপূর্ণ কথা গুলো উপলব্ধি করলো মীরা। মুখ ফুটে দুই একটা শব্দ উচ্চারণ করতে চেয়েও ব্যার্থ হলো। একেকটা কথা আর ক্রমাগত রাইফের বৃদ্ধাংগুলির স্পর্শ নাজেহাল করে তুলছে মীরাকে। শক্তিহীন হচ্ছে পুরো দেহ। দুজনের মাঝের ফাঁকা জায়গা টুকুর ব্যাবধান কমালো রাইফ, এগিয়ে এলো মীরার দিকে। লজ্জায় নুইয়ে যাওয়া মীরার গোলাপি আভা ফুটে ওঠা মুখটার থুতনিতে হাত রাখলো, ধীরে ধীরে উর্ধ্বে
তুলে ডেকে উঠলো,
-মীরা?
নুইয়ে রাখা মুখতো মীরার উপরে উঠেছে, কিন্তু ঝুঁকে রাখা দৃষ্টি রাইফের চোখে চোখ রাখতে পারলো না। এ কেমন অনুভূতির জালে ফেঁ/সে গেলো মীরা! রাইফের ডাকে জবাব টুকু পর্যন্ত দিতে পারছে না। রাইফ জানে মীরা পুরোপুরি ঘায়েল হয়েছে, দ্বিতীয় ধাপ ও তার আওতাধীনে। তবুও শেষ সময়ে স্বামীর দ্বায়িত্ব থেকে ফিসফিস করে শুধালো,
-‘আজ আমার হবা মীরা? পুরোপুরি আমার।’
রাইফের মৃদু আওয়াজে বলা কথাটা কর্নকুহরে প্রবেশ করতেই বদ্ধ চোখ আরো খিঁচে ভেতরে নিলো মীরা। শুষ্ক অধর ভেজালো জ্বিহবার সাহায্যে। শুকনো ঢোক গিলে গলা ভেজানোর বৃথা চেষ্টা করলো মাত্র। রাইফের হাতের সাহায্যে উপরে তুলে রাখা মুখশ্রী নুইয়ে নিলো এক লহমায়। আজ সত্যি এক লোকটা মীরাকে মে/রে ফেলার পায়তারা করেছে। মৌন মীরার আর কষ্ট করে জবাব দিতে হলো না, তার আগেই নীরবতা সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে মাঝের দূরত্বটুকু পুরোপুরি ঘোচালো রাইফ। ব্যাক্তিগত ভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো। নিম্ন মুখটা উপরে তুলে অধর ছোঁয়ালো কপালে, কপাল হতে বদ্ধ নয়নে, নাকের ডগায়, তিরতির করে কাঁপতে থাকা গোলাপি অধর অতিক্রম করে থুতনি, গাল, কানের লতি হতে গলা। ভারী হতে থাকলো মীরার শ্বাস-প্রশ্বাস। সময়ের ব্যাবধানে ধীরে ধীরে গাঢ় হতে শুরু করলো রাইফের একেকটা স্পর্শ। পুরুষালী বুকে আবদ্ধ মীরা ছটফটাতে থাকলো এমন গভীর সংস্পর্শে। কোমল হাতে বাঁধা দিতে থাকলো, রাইফের গাঢ় চুম্বন পুরো শরীর জুড়ে শিহরণ তুলল। ভারী ত’প্ত নিশ্বাস ক্রমাগত ভারী হতে থাকলো। কোনরকমে রাইফকে বাঁধা দিয়ে বলল,
-‘পাগল হলেন নাকি, এটা ছাদ।’
মীরার গলায় মুখ ডুবিয়ে রাখা রাইফ থামলো। মুখ তুলে আশে পাশে তাকালো যতদূর চোখ যায়। না, কোনো কাক পক্ষীও নায়। মীরার অগোছালো চুল গুছিয়ে দিলো নিজ হাতে। রেলিং থেকে নামিয়ে নিলো মীরার ছোট্ট দেহটা কে। মীরার গোলগাল মুখটার দুপাশে হাত রাখলো, লজ্জায় আড়ষ্ট মীরা আঁখিপল্লব একত্রিত করলো। কন্ঠ খাঁদে নামিয়ে ফিসফিস আওয়াজে বলল রাইফ,
-‘লাজুকলতা, তুমি আমার এক গুচ্ছ লাজুকলতা। আমার মুঠোয়বন্দী লাজুকলতা। আমার তরফ হতে তোমাকে সীমাহীন ভালোবাসা।’
দুজোড়া অধর একত্রিত হলো, মিষ্টি ছোঁয়া মীরাকে এবার সত্যি সত্যি মে/রে ফেলল। গা ছেড়ে দিলো রাইফের আচমকা স্পর্শে। মীরাকে দ্রুত হস্তে ধরে ফেলল রাইফ। পাঁজা কোলে তুলে ব্যাস্ত পায়ে ছোট্ট আদরে সিক্ত করতে করতে ব্যাস্ত পায়ে ছুটলো বাসার উদ্দেশ্যে। পূর্ণতা পেলো, অবশেষে। লাজুকলতা সম্বোধন করা মীরা সত্যি সত্যি লজ্জাবতী লতার ন্যায় চুপসে গেছে রাইফের বুকে। লাল টুকটুকে মুখটা লজ্জায় আরো লাল হয়েছে। রাইফের ভালোবাসা আজ চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেছে। নিজে ম*রে/ছে, মীরাকে মে/রে/ছে, ভালোবাসার আলিঙ্গনে একান্তভাবে জড়িয়ে নিয়েছে।
#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#অন্তিম_পর্ব
(আজ সবার রেস্পন্স চাই কিন্তু। রিয়েক্ট এর সাথে ছোট্ট মন্তব্য আশা করছি। সবার মানে সবার। আমার ছোট্ট আবদার। প্রতিটা পাঠকের উপস্থিতি আজ গঠনমূলক মন্তব্যে হোক। ভালোবাসা নিবেন সকলে। আমাকে মনে রাখবেন কিন্তু, দেখা হচ্ছে নতুন বছরে।)