বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ১

0
4333

–“আমি আপনার সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাই না অভয় ভাইয়া। আমি বিয়ে করতে পারব না আপনাকে। আমার গর্ভে আমার বয়ফ্রেন্ডের সন্তান। তাই আপনার সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে আলাদা করে কথা বলারও প্রয়োজন নেই।”

অভয় ঐশানীর কথার কর্ণপাত করল না। সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাচ্ছে সে। চোখেমুখে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে তার। পেছন পেছন অসহায় ভঙ্গিতে উঠে আসছে ঐশানী। সে বিয়ে নামক কোনো ফাঁদে জড়াতে চায় না। একদমই না। সিঁড়ির ওপরে উঠে আশেপাশে তাকিয়ে অভয় অকপট ভাবেই বলল…..
–“তোমার রুম যেন কোনটা?”

–“আমার রুম দিয়ে আপনার কাজ কি অভয় ভাইয়া? আমি তো বললাম বিয়ে বিষয়ক কোনো কথা আমি বলতে চাই না।”
–“সবার সামনে তো বোঝাপড়া করতে পারি না তাই না?”
দাঁতে দাঁত চেপে বলল অভয়। অভয়ের কথায় ঐশানী মুখ হা করে মুখে নিজের ডান হাত রাখল। চোখজোড়া রসগোল্লার ন্যায় করে চেয়ে থাকল। অভয় সরু চোখে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে।

ঐশানী সেইভাবেই বলে ওঠে….
–“ছিহ অভয় ভাইয়া। ছিহ। আপনার মনে এই ছিল? দেখুন, আপনি বিদেশে মেয়েদের সাথে অকাজ-কুকাজ করতেই পারেন। তবে সবার সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলবেন না। আপনি এমন আমি জানলে আপনার সাথে কথা বলা তো দূর আপনার ছায়াও মারাতাম না। এক্ষুনি আন্টিকে গিয়ে বলছি। আন্টিইইইই….”

অভয় এসব কথা শুনে রাগে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। নির্ঘাত মেয়েটার মাথায় কোনো সমস্যা আছে। তবে কোনো উপায় নাই। এই মেন্টাল মেয়েটাকেই বিয়ে করতে হবে। ঐশানী সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে যাবে তার আগেই অভয় চেপে ধরে তার হাত। দাঁতে দাঁত চেপে বলে…..
–“রুমে যাবে নাকি এখানেই চড় বসিয়ে দেব?”
–“আপনার মাঝে মানবতার ছিটেফোঁটাও নেই দেখছি। বিয়ের আগেই হবু বউকে এভাবে নির্যাতন? বিয়ের পড়ে ফার্স্ট নাইটেই দেখা যাবে আপনার হাতে চড়থাপ্পড় খেতে খেতে আমি নিহত হয়ে যাব। (একটু ভেবে) না না। চড়থাপ্পড় খেয়ে তো কেউ নিহত হয় না। আহত হয়। তখন বড় বড় করে টিভি চ্যানেলে নিউজ বের হ….”

অভয়ের কড়া চাহনিতে ঐশানী থম মেরে যায় কথার মাঝে। শুকনো ঢক গিলে বোকা হাসার চেষ্টা করে।
–“তোমার রুম কোনটা? নিয়ে চলো। ওটা না?”
করিডোরের প্রথম রুমের পরে দ্বিতীয় রুমটাকে ইশারা করে বলে ওঠে অভয়। ঐশানী মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে….
–“হুম ওটাই তো। আপনি কি করে জানলেন?”
–“তোমার ছোট বোন বলেছে। তুমি যখন নিজের মুখে একগাদা মেরিল ক্রিম আর সরিষার তেল মাখতে বিজি ছিলে তখন।”

ঐশানী নিজের হাত গালে রেখে ঘষে। বিরবির করে বলে….
–“তাও তো কাজের কাজ কিছুই হলো না।”
ঐশানী গাল থেকে হাত সরাতেই দেখে অভয় তড়তড় করে তার রুমে ঢুকে যাচ্ছে। নিজের শাড়ি তুলে ছুট লাগালো রুমের দিকে। ঐশানী! পুরো নাম ঐশানী রাহমান। ইমতিয়াজ রাহমান এবং দিশা রাহমান এর বড় মেয়ে। তার সাথে আদরের মেয়ে বলা বাহুল্য! অতি আদরে বাঁদর হয়েছে ঐশানী। ঐশানী ছোট বোনের নাম ঐশী রাহমান। ঐশানীর বিয়েতে তার ভয়াবহ এলার্জি। এই এলার্জি কোথা থেকে উৎপত্তি হয়েছে তা জানা নেই কারো। আজ সকালেই ঐশানীর বাবার কঠোর আদেশ এলো যে আজ ঐশানীকে তার বাবার পুরোনো বন্ধু তার ছেলেসহ দেখতে আসবে। এতে নাকচ করে দিলেও বাবার আদেশের সামনে অবশেষে পাত্রপক্ষের সামনে বসতে হলো তাকে।

অভয়ের পুরো নাম অভয় খান। রাহাত খান এবং তনয়া খানের একমাত্র ছেলে। অভয়ের ছোট বোনও রয়েছে। তার নাম অনিন্দিতা খান। অভয় তার ফ্যামিলি সহ বিদেশ থেকে ১৫ বছর পর দেশে ফিরেছে। দেশে আসার পরেই ছোট বেলার বন্ধুর মেয়ের সাথে বিয়ে দেওয়ার জেদ করতে লাগলেন রাহাত খান। অগত্যা মা-বাবার সাথে আসতে হলো পাত্রী দেখতে।

অভয় ঢুকতেই ঐশানী তিড়িংবিড়িং করে রুমে ঢুকে বলল
–“এ্যাহ! বিদেশে থেকেও আপনার কোনো ম্যানার্স হয়নি। একটা মেয়ের ঘরে বিনা পারমিশনে ঢুকতে নেই আপনি জানেন না?”
অভয় বেশ স্বাভাবিক ভাবে বলে ওঠে…..
–“বউয়ের ঘরে ঢুকতে আবার কীসের পারমিশন?”

ঐশানী থতমত খায়। নিজের কানে কয়েকটা থাবা মেরে বোঝার চেষ্টা করে সে কি ভুল শুনল?
–“ব…বউ? কীসের বউ? কোথাকার বউ? কবে কার বউ? কোথায় বউ?”
কথাটুকু শেষ হতে না হতে ঐশানীর গালে সজোড়ে চড় বসিয়ে দেয় অভয়। তবুও রাগ কমাতে পারে না সে। অভয়ের হাত চুলকাতে থাকে আরো মারার জন্য। তার উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারায় ফুটে উঠেছে লাল আভা।

ঐশানী স্থির হয়ে নিজের গালে হাত দিয়ে আছে। একভাবে দেখছে অভয়কে। একটা অচেনা ছেলে তার গায়ে এভাবে হাত উঠাবে তা তার ভাবনারও বাইরে ছিল। গাল অসম্ভব জ্বলছে। শুধু গাল নয় রাগে পুরো শরীর রি রি করছে। বাবার একমাত্র মেয়ে না হলেও ছোট থেকে আদরে কোনো কমতি নেই তার। সেই কারণে চড়থাপ্পড় জিনিসগুলো তার ওপরে পড়েনি বললেই চলে। সেখানে অভয়ের হাতে থাপ্পড় খাওয়া অবিশ্বাস্য ব্যাপার।

গাল থেকে হাত সরিয়ে অভয়ের দিকে তেড়ে এসে ঐশানী বলে….
–“আপনি আমাকে মারলেন? কেন মারলেন? আপনার কোন ক্ষতিটা করেছি আমি? হু? পাকা ধানে মই দিয়েছি বলে তো মনে পড়ে না। এমন ভাবে মারলেন যে মনে হচ্ছে কয়েক জন্মের প্রতিশোধ একেবারে তুলে নিলেন।” (ফুঁপিয়ে)
–“কি করব বলো? আমার সব থেকে বড় ক্ষতি করেছো তুমি। পাকা ধানে মই তো দিয়েছোই। লুক এট মি! আমায় দেখে কিছু মনে পড়ে?”

ঐশানী ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে অভয়কে। এবার ওর কিছু কিছু মনে পড়ছে। উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারা, চোখে ঘন পাপড়ি, মাঝারি আকারের চুলগুলো কপালে পড়ে আছে, হালকা লাল-গোলাপি আভায় মোড়ানো ঠোঁট! প্রশস্ত তার চেহারা। হ্যাঁ তার কিছু মনে পড়ছে। গতকালকের কথা মনে পড়তেই বিস্ফোরিত নয়নে তাকায় সে।
–“আপনি?”
–“ইয়েস আমি। এখন বুঝতে পারছো কোন পাকা ধানে মই দিয়েছো তুমি?”
ঐশানী গতকালকের কথাগুলো মনে করতে থাকে।

গতকাল বিকেলে…..
রেস্টুরেন্টে ফোনে কথা বলতে বলতে ঢুকছে অভয়।
–“আমি রেস্টুরেন্টে চলে এসেছি সায়রা। তোমার আসতে কতক্ষণ লাগবে?”
ওপাশ থেকে সায়রা বলে ওঠে….
–“আমিও তো প্রায় এসে পড়েছি। ইউ নো হোয়াট? আই এম সো এক্সাইটেড। এই প্রথমবার আমরা সামনাসামনি দেখা করছি। আই কান্ট ওয়েট।”

অভয় হাসে। সেও তার ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে দেখা করার জন্য ব্যকুল হয়ে পড়েছে। ঘাড়ে হাত রেখে হাসি হাসি মুখ করেই বলে….
–“সেম টু ইউ। এই দিনটার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছি। ব্যাস…আর কিছুক্ষণ। চলে এসো। আমি রাখছি। বাই।”
ফোন কেটে দিতেই নিজের হাসিটা আরো প্রগাঢ় হয়ে ওঠে অভয়ের। ওর মনে দোলা লেগেছে।

প্রায় ২ বছর ফোনে আলাপের মাধ্যমে একে অন্যের সাথে ভালোবাসা বিনিময় করে অভয় ও সায়রা। অভয় বিদেশে থাকার কারণে সামনাসামনি দেখা করার সুযোগ হয়নি কোনোদিন। আজ যখন অভয় দেশে ফিরেছে সুযোগ মিস করতে চায়নি সে। যেই না পকেটে ফোনটা রাখতে যাবে তার বুকে এসে পড়ে কেউ। ধাক্কা খেয়ে কয়েক ধাপ পিছিয়ে যেতেই ফোনটা পড়ে যায় ফ্লোরে। ফোনের একটা দফারফা অবস্থা হয়ে যায়। ওপরদিকে আচমকা এইভাবে কেউ তার বুকে আঁচড়ে পড়বে তা অভয়ের আশাতীত ছিল। মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে সে। এমন পরিস্থির শীকার সে তো কখনো হয়নি। কি লজ্জাজনক পরিস্থিতি! কেউ কেউ খাওয়া ছাড়া তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

মেয়েটাও তাকে ছাড়ছে না। বরণ অভয়ের পিঠ আরো খামচে জড়িয়ে ধরায় দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিক্রম হয় তার। না পেরে নিজের হাতজোড়া উঠিয়ে যেই মেয়েটাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যত হয় তৎক্ষনাৎ মেয়েটি উত্তেজনার সঙ্গে বলে ওঠে…..
–“আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ, লাভ ইউ, লাভ ইউ এ লট!”

এই প্রথম এই পরিস্থিতির শিকার অভয়। লজ্জা আর রাগ দুটো অনুভূতির সংমিশ্রণে অভয়ের গালে দেখা দিল লাল-গোলাপি রঙের আভা। কান গরম হতে শুরু করে। চোখমুখ খিঁচে দরজার দিকে তাকাতেই চোখমুখের লাল রক্তিম বর্ণ হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। তার ভালোবাসার মানুষ সায়রাকে দেখে অভয় চমকে যায়। সায়রাকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে ঘামতে থাকে অভয়। সায়রা কি তাকে ভুল বুঝল? অভয় যেই সায়রাকে ডাকতে যাবে সায়রা রেস্টুরেন্টের দরজা থেকেই গটগট করে বেরিয়ে যায়।

অভয় অগত্যা তাকে জড়িয়ে থাকা বাহু ধরে সোজা করিয়ে দূরে সরে এসে রক্তিম চোখে বলে….
–“ইউ ব্লাডি ফুল! লজ্জা নেই? নাকি পাগল? আরে আমি তো তোমাকে ঠিকঠাক চিনিও না। হুটহাট করে এসে বলে দিলে আই লাভ ইউ আর আমি মেনে নেব বলে মনে হয়?”
মেয়েটা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তা দেখে মাথায় আরো রেগে বিগড়ে যায় অভয়ের মস্তিষ্ক।

–“তুমি কি জানো তুমি আমার কত বড় ক্ষতি করলে? (মাথার চুল চেপে ধরে) আমার সব শেষ হয়ে গেল! না জানি, সায়রা কতকিছু ভাবল।”
মেয়েটি চুপ থাকতে থাকতে আচমকা ভয়ানক কাজ করে বসে। অভয়ের বাম গালে চড় বসিয়ে দেয় মেয়েটা। গালে চড় পড়ায় ঘাড় বাঁকা করে অভয়। ও এবার আসলেই বুঝতে পারছে না ওর সাথে এসব কি হচ্ছে? আর মেয়েটা কেনই বা এমন করছে? গালে হাত দিয়ে মেয়েটির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাতেই ভয় পায় মেয়েটি। অভয় আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে…..
–“তোমাকে পরে দেখে নিচ্ছি। আমার গায়ে তোলার দাম তোমায় দিতে হবে।”

কথাটুকু বলেই পেছন ঘুরে গেটের দিকে হন্তদন্ত হয়ে হাঁটতে শুরু করে অভয়। লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে। রেস্টুরেন্টের কাস্টমার থেকে শুরু করে স্টাফ পর্যন্ত হা করে যেন ফিল্ম দেখতে ব্যস্ত। কেউ কেউ হাসাহাসি করছে। হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে অভয়ের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে একদল মেয়ে। মেয়েগুলো বোকা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে অভয়। এরই মাঝে মেয়ের দল থেকে ঠেলেঠুলে বেরিয়ে আসে একটি মেয়ে। ভ্রুযুগলের সাথে কপালেও ভাঁজ পড়ে অভয়ের। মেয়েটির ঘন চোখের পাপড়ি দিয়ে আবদ্ধ চোখজোড়া পিটপিট করে খুলছে আর বন্ধ করছে, কালো রেশমি চুল দিয়ে পুরো কপাল ঢাকা পড়েছে তার, খুব ফর্সা নয় সে তবে রক্তিম ফর্সা ত্বক সূর্যের আলোতে চোখমুখ আরো লাল বর্ণে পরিণত হয়েছে। গোলাপি আভায় আবৃত ঠোঁটজোড়া কাঁপছে। পরনে লাল টপস এর কালো ওড়না হাত দিয়ে টানছে। মেয়েটি আর কেউ নয় ঐশানী।

অভয় কিছু না বলতেই ঐশানী নিজের বাম হাত উপরে তুলে নিজের কানের লতি ধরে। তার পরনের ঢিলেঢালা ঘড়ি নড়ে উঠে হাতের ওপরে চলে আসে। বোকা বোকা হাসি দিতেই বেরিয়ে আসে তার বাম পাশের গজদাঁত। এক হাতে কান ধরে আর বোকা বোকা হাসার মানে সে কোনো কারণে ক্ষমা চাইছে। কিন্তু কি ব্যাপারে ক্ষমা চাইছে?

তৎক্ষনাৎ তাদের পেছনে হুড়মুড় করে এসে দাঁড়ালো সেই অসভ্য মেয়েটি। যে অভয়কে জড়িয়ে ধরেছিল। মেজাজ আরো বিগড়ে গেল তার। অভয় কিছু বলতে উদ্যত হয় তখনই কান ধরে থাকা ঐশানী গড়গড় করে বলে ওঠে….
–“আই এম সো সরি! আসলে ভুলটা আমারই। কিছুক্ষণ আগে যে আপনাকে জড়িয়ে ধরেছিল আবার থাপ্পড়ও মেরেছিল সে আমার কথায় ওসব করেছে। আসলে মেইন কথা হচ্ছে, ও আমাদের ফ্রেন্ড। অলওয়েজ ট্রুথ-ডেয়ার খেলার মাঝে ডেয়ার নিলে খুব কঠিন ডেয়ার দিতো। যার কারণে আমরা সবাই বাঁশ বাগানের মালিক হয়ে গেছি। তাই আমরা আজ ঠিক করেছিলাম আমরাও ওকে বাঁশ বাগানের মালিক বানিয়ে ছাড়ব। তাই আজ ডেয়ার খেলার সময় আপনার দিকে নজর পরে আর….”

–“আর আমাকে দেখে তোমার মাথায় যত শয়তানি পোকা আছে কিলবিল করে ওঠে। তাই তুমি ওই মেয়েটাকে বলো, আমায় জড়িয়ে ধরে প্রপোজ করতে এবং সাথে সাথে থাপ্পড়ও মারতে। রাইট?”
অভয় ঐশানীকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে কথাগুলো বলে। ঐশানী সুন্দর করে হেঁসে একটা তালি দিয়ে বলে….
–“আরিব্বাস! আপনি কি করে জানলেন?”
বলার পরই জ্বিহ্বাতে কামড় দিয়ে বসে ঐশানী। চোখ ছোট ছোট করে তাকায় অভয়ের দিকে।

অভয় রামধমক দিয়ে বলে ওঠে….
–“তাহলে মেইন দোষটা তোমারই। হেই, ডু ইউ নো আমার কতটা ক্ষতি হয়েছে এতে? আমার সব শেষ করে দিলে তুমি। আমার সায়রা কি ভাবলো!”
ধমকানি শুনে চমকে ওঠে ঐশানী। পেছনে তার বান্ধবীরা আগেই ভয়ে চোখমুখের রঙ পাল্টে ফেলেছে।
–“দেখুন। আমি সচরাচর কাউকে এভাবে সরি বলি না। আজ বলছি তাও আপনাকে। কারণ আমিও জানতাম না বাঁশ বাগান তৈরি করে দেওয়া বান্ধবী নিজেও বাঁশ বাগান তৈরি করতে রাজি হবে। জানলে এই ডেয়ার দিতামই না।”

অভয় হাত মুঠো করে দাঁত কিড়মিড় করে চেয়ে থাকে। দূর থেকে দেখতে পায় সায়রা একটা রিকশা ধরে চলে যাচ্ছে। বুকটা ধক করে ওঠে অভয়ের। এতোদিনের সম্পর্কের কি কোনো শুভ পরিণতি হবে না? এদিকের কথা অভয় ভুলে গিয়ে ছুট লাগায় ছোট ঘাস ভরা গার্ডেন থেকে রাস্তার দিকে। তা দেখে গাল ফুলিয়ে তাকায় ঐশানী।
–“শ্যামলা ঘোড়া! আমি সরি বললাম। নিজে ইটস ওকে বলবে তা না। ঘোড়ার মতো দৌড়ে চলেছে? তোর বউ এক নম্বর শয়তানের হাড্ডি হবে। মিলিয়ে নিস।”

বলে ভেঙচি কাটে ঐশানী। ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছন ফিরে তার বন্ধু যাকে ডেয়ার দেওয়া হয়েছিল তার উদ্দেশ্য চিল্লিয়ে বলে…….
–“রিনি, ইনি, বিনি, চিনি, মিনি! আজ প্রথম বার তোর জন্য কান ধরে সরি বলতে হলো। ফাজিলের ফাজিল, বদের বদ, বেয়াদবের বেয়াদব।”
রিনি ঠোঁট উল্টে ঢং করে বলে….
–“তুই-ই তো বললি ডেয়ার পূরণ করতে। আর তুই তো জানিস আমি ডেয়ারের ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস।”

–“চুপ কর। এই তোরা সবাই শোন। আজকের দিনের জন্য রিনির গালটা সরকারি। যে পারবি তার গালে দুই-চারটা থাপ্পড় মারবি। কোনো বারণ নেই।”
ঐশানীর সব বান্ধবীরা দাঁত কেলিয়ে হেঁসে রিনির দিকে তাকায়। রিনি মারে এক দৌড়। সবাই তার পেছনে ছোটে। ঐশানি ছুটতে যায় তার মাথা চক্কর দেওয়ায় সে পারে না। কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে….
–“সূর্য মামা! নিজের তেজ তো কম করতে পারো। নিজের এতো শক্তি থাকতে আমার শক্তি শুষে নাও কেন হু?”
ফোন বেজে ওঠায় ঐশানীর আর যাওয়া হলো না। মায়ের নম্বর দেখে রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করে সে।

বর্তমান…..
–“কি কিছু মনে পড়ল?”
অভয়ের কড়া গলায় ধ্যান ভাঙে ঐশানীর। কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকায় অভয়ের দিকে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই তার কাঁদো কাঁদো মুখ হাসিতে চকচক করে ওঠে। এতে অভয় অবাক হয়ে তাকায়। মেয়েটা যে আসলে পাগল সেটা বুঝতে অভয়ের দেরি নেই। পাগলরা তো কখন হাসে কখন কাঁদে বোঝায় যায় না। ঐশানী খুশিতে লাফিয়ে বলে….
–“কাল তো সায়রা না কি! ওটা আপনার গার্লফ্রেন্ড ছিল না? ইট মিনস, আপনি আমায় বিয়ে করবেন না! উফফ….মস্ত বড় ঝামেলা থেকে বাঁচলাম। থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ অভয় ভাইয়া।”

–“গার্লফ্রেন্ড থাকলে বিয়ে করা যায় না সেটা কে বলল তোমায়? এখন বিয়ে করতে চাও না বলে মাথায় এক বোতল তেল মেখে, মুখে পুরো মেরিল ক্রিম লাগিয়ে হাজির হয়ে ভাইয়া, ভাইয়া বলে পুরো দুনিয়া অন্ধকার করে ফেলছো। তাতে কি মনে হয় তোমার? আমি তোমায় বিয়ে করব না? আমায় তোমার খুব পছন্দ হয়েছে। ইভেন বিয়েটা তোমাকেই করছি। বিয়ের জন্য তৈরি থেকো।”

ঐশানীর খুশিতে চকচক করতে থাকা মুখ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। চমকে উঠে বলে…..
–“কীইইইই?”
–“কী নয় জ্বী! আর ভুলেও বাড়ির কাউকে সায়রার কথা জানিয়ো না। সায়রাকে কেউ পছন্দ করে না। তাই জানিয়ে লাভ হবে না।”
কথাটা বলে হনহন করে বেরিয়ে যায় অভয়। রুমে যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ মেয়েটার ওপর রাগ ঝাড়তে ইচ্ছে করবে। ঐশানী গালে হাত দিয়ে ধপ করে বসে পড়ে বেডে। তার বিয়ের সানাই বাজবে কি তবে?

চলবে…….???

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ১
#আনিশা_সাবিহা

[বি.দ্র. শুরুটা কমনভাবে। তারপর দেখা যাক! ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রেসপন্স এর ভিত্তিতে পরের পর্ব দেওয়া হবে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here