প্রেয়সী পর্ব:১৪

0
724

#প্রেয়সী
#পর্ব:১৪
#তানিশা সুলতানা

অধরা এখন আর চুপ থাকতে পারে না। সে মনে মনে কথা সাজিয়ে নেয়। দাদা চাচার মুখের ওপর কথা বলার সাহস তার নেই। তবুও আজকে বলতো হবে। সারাজীবনের প্রশ্ন এটা। চুপ থেকে অন্যায় প্রশ্রয় দিবে না।
তার জীবন এটা। বাকিদের সিদ্ধান্তে নিজের ভালোবাসা হারাতে পারবে না সে।

অধরা জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কথা বলার জন্য মুখ খোলে তখনই মুহিত অধরার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলে

“তুমি আমার ভালোবাসা অধরা। তোমাকে সারাজীবন ভালো রাখার প্রতিজ্ঞা নিয়েছি আমি। আমার জীবন বিসর্জন দিয়ে হলেও তোমাকে ভালো রাখবো। আর তুমি আমাতেই ভালো থাকবে। কারণ আমি কারুপুষ নই।

শেষের কথাটা মাহিমের দিকে তাকিয়ে বলে।
অধরা দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে
” আই এম সরি বড় বাবা আমি বিয়ে করতে পারবো না। সবেই অনার্সে ভর্তি হয়েছি। এখনই বিয়ের প্যারা মাথায় নিতে চাই না। তাছাড়া আমার মুহিত ভাইয়াকে পছন্দ না। তাকে আমি আমার ভাই মনে করি। আর ভাইয়ের সাথে বিয়ে। ইম্পসিবল

মুহিত হাসে। হাসতে হাসতে বাবার পাশে গিয়ে বসে। মাহমুদা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। যাকক এ যাত্রায় বাঁচা গেলো।
আব্দুল্লাহ হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে মুহিতের সামনে এসে বসে।
মাহিম চুপচাপ সবটা দেখছে। রাগ হচ্ছে না তার। বরং অস্বস্তি হচ্ছে। কেনো সে মুহিতের মতো সব জায়গায় সব কথা বলতে পারে না? কেনো সে মুহিতের মতো চঞ্চল না?
কেনো সে মনের কথা সহজেই প্রকাশ করতে পারে না?
এই যে সবার সামনে স্বীকার করতে পারলো না “অধরাকে ভালোবাসে সে?”
কেনো পারলো না?
এভাবে চলবে না কি?

আব্দুল্লাহ মুহিতের হাতের ওপর হাত দিয়ে নরম বলে
“দাদুভাই এসব চিন্তা বাদ দাও। পড়ালেখা শেষ করেছো ভালো একটা চাকরি করো। তারপর বিয়ের চিন্তা। পছন্দ করে বিয়ে করবে এতে আমার আপত্তি নেই। সাথে আছি তোমার। কিন্তু ভাই বোন এটা আমি মানবো না। অধরা তোমার বোন। মিথি আর সে তো আলাদা নয়। তাই না?

মুহিত হাত সরিয়ে নেয়। ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে
” কোথায় আর কোথায় অধরা। কাজিন আমরা। ভাই বোন না। আমি অনেক আগেই থেকে অধরাকে বিয়ে করবো ভেবে রেখেছি। কখনোই বোন মনে করি নি। বউ ভেবেছি। আমি তাকেই বিয়ে করবো। ইটস ফাইনাল

অধরা বিরক্ত হয়। ইচ্ছে করছে মুহিতের মাথায় একটা বারি মারতে। কেমন বাজে ছেলে সে?

মাহমুদা ফুঁসে ওঠে বলে
“লজ্জা নেই তোমার? বাবা দাদার সামনে কিভাবে কথা বলছো? মাহিম একে থামাও তুমি। আমি জাস্ট নিতে পারছি না।

মুহিত লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়
” হ্যাঁ ব্রো আমায় থামাও
কিছু একটা বলে দাও যেটা আমি আর অধরা শুনতে চাচ্ছি। অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। ভক্তি বাদ দিয়ে মনটাকে খুলে দাও।

মাহিম মুহিতের দিকে তাকিয়েই থাকে। কিছু বলার নেই তার। অধরা বলে ওঠে
“বড় বাবা আমি আর এসব শুনতে চাচ্ছি না। আশা করি তুমি আমায় বুঝবে।

বলেই অধরা তার রুমে চলে যায়। মিথিও অধরার পেছন পেছন যায়। শরীফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ছেলে প্রথমবার একটা আবদার করলো কিন্তু সে আবদারটা পূরণ করতে পারলো না। কেমন বাবা সে?
লজ্জা লাগছে তার। মাহমুদা কটমট চোখে তাকিয়ে বলে
” এই বাড়িতে আমার থাকার মতো কোনো রুম হবে না কি চলে যাবো?

আব্দুল্লাহ তারাহুরো করে কিছু বলতে যায় তখনই মুহিত বলে ওঠে
“মাম্মা তুমি চলে গেলে কারো কিছু আসবে যাবে না। তুমি এতোটাও গুরুত্বপূর্ণ না। সো গলা নামিয়ে কথা বলবে। দাদু দাদিমা বাবা তারা তোমার গুরুজন। সম্মান দিতে শিখো।

মাহমুদা দমে যায়। লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে ফেলে।
মুহিত আবারও বলে
” বাড়িতে কোন খালি রুম নেই। থাকতে হলে পাপার রুমে থাকবে। এবং তার পায়ে ছুঁয়ে সরি বলবে। তোমার দাপট চলবে না আর। বুড়ো হচ্ছো। দুদিন পরে কবরে যাবে। একটু তো ভালো কাজ করে যাও।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপমান সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিলো না তাই মাহমুদা গটগট পায়ে চলে যায় শরীফের রুমে। মাহিম সকলের চোখের আড়ালে হাসে। আব্দুল্লাহ বলে
“মায়ের সাথে এভাবে কথা বলতে হয় না।

” জানি দাদু
সরি বলে নিবো।
আর হ্যাঁ আমি অধরাকেই বিয়ে করবো।

মুহিত চুল ঠিক করতে করতে চলে যায়।

__

রাতে আর খাওয়া হয় না অধরার। গলা দিয়ে খাবার নামবে না তার। রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। আরিফ একটা কাজে ঢাকা গেছে। ফিরবে কালকে। বাবা থাকলে কষ্টটা কমতো। বাবার সাথে একটু কথা বললে মন ঠিক হতো।

অধরা বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। মাকে এক নজর দেখার ইচ্ছে জেগেছে।
কিন্তু এমনটা দেখবে ভাবতেই পারে নি। অধরার বিষাক্ত মনটা আরও বিষিয়ে যায়। কারণ শিউলির চুলের মুঠো ধরে মারছে তার স্বামী। চিৎকার করে কান্না করছে সে। তবুও থামছে না।

দ্রুত পেছন ঘুরে দাঁড়ায় অধরা। চোখ দুটো টলমল করে ওঠে। যতই দোষী হোক। দিন শেষে মা তো। টানটা থেকেই যায়।

মাঝেমধ্যে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে “কেনো করলে এমন? কি পেলে তুমি? কেনো আমাকে আর বাবাকে অসহায় করে দিলে? কেনো সুখের সংসারটা ভেঙে দিলে?

না ঘুমিয়েই রাত পার করে দেয় অধরা। রাতে কেউ তাকে খেতে ডাকতে আসে নি। বাবা থাকলে সবাই ডাকতো। জোর করতো। খাইয়েও দিতো। বাবা নেই বলে কারোরই অধরার কথা মনে নেই।

সকাল সকাল দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেয়ে অধরা বিরক্ত হয়। চোখ মুখ কুঁচকে গিয়ে দরজা খুলে। মাহিম চট করে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। অধরা বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে
” আপনি এখানে?

মাহিম অধরার দুই গালে হাত দিয়ে বলে
“আমি চলে যাচ্ছি। তুমি একটু পরে চলে যাবে। তোমার জন্য আমি ওয়েট করবো বাজারে। সেখান থেকেই কাজি অফিস চলে যাবো। ফোনে চার্জ শেষ। তাই রিক্স নিয়ে রুমে আসতে হলো।

অধরা মাথা নারায়।
মাহিম অধরার কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলে
” আসছি আমি। সাবধানে এসো তুমি।

বলেই চলে যায় মাহিম। অধরা মুচকি হাসে। তার মন খারাপ ভালো হয়ে গেছে। এই যে তার মন ভালো করার মেডিসিন কে দেখলো তার ছোঁয়া পেলো। এই মানুষটাকে ছাড়া বাঁচবে না অধরা। দুটো সেকেন্ডও চিন্তা করতে পারে না এই মানুষটিকে ছাড়া। মায়ায় বেঁধেছে সে অধরাকে। প্রাণ থাকতে এই মায়া কমবে না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here