প্রেমরাঙা জলছবি পর্ব ৯

0
99

#প্রেমরাঙা_জলছবি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৯

আশরাফ যেতে গিয়েও থেমে যায়। পিছনে ফিরে বলে,” ইয়্যুর হাজবেন্ড লাভস্ ইয়্যু।”

সুরাইয়া মৃদু হেসে বলে,” খান সাহেব, ইয়্যুর ওয়াইফ লাভস্ ইয়্যু ঠু।”
” একটা চুমু দেই এসো।”
আশরাফের এমন লাগামহীন কথায় সুরাইয়া লজ্জায় লাল হয়ে যায়। লজ্জামাখা মুখে বলে ওঠে,” কী অশ্লীল! যাও তো।”

আশরাফ হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায়। সুরাইয়াও নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে ময়না বেগমের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বাহির পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আশরাফ বাইকের পিছনে মাকে বসিয়ে নিয়ে রওয়ানা দেয়। সুরাইয়া কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকে। যখন তারা দৃষ্টিরেখার বাহিরে চলে যায় তখন সে বাড়ির দিকে ফিরতেই নাহার বেগম পিছন থেকে ডাকেন।

সুরাইয়া পিছনে তাকালেই নাহার বেগম বলে ওঠেন,” হৃদি এসেছে। দেখা করে যেও৷ ”
সুরাইয়া একবার বাড়ির দিকে তাকিয়ে আবার নাহার বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,” উমেদও টিকেট কাটতে যাবে, ও বের হলেই আমি সব ঠিকঠাক করে আসছি। কখন এসেছে হৃদি?”
” কিছুক্ষণ আগেই এসেছে।”
” আচ্ছা চাচি, আমি আসছি।”

সুরাইয়া নিজের রুমটাই ঠিক করছিল। পানির বোতলটা খালি দেখে সেটায় পানি আনতে বের হতেই উমেদের সাথে দেখা হয়ে যায়। উমেদ কালো একটা শার্ট পরেছে সাথে জিন্সের প্যান্ট। চুলগুলো বরাবরের মতো পিছন সাইডে ফেলে রাখা।

সুরাইকে দেখেই উমেদ বলে ওঠে,” ভাইয়া ফিরেনি?”

সুরাইয়া সংক্ষিপ্ত বাক্যে বলে,” গেলই তো মাত্র।”
” আমি স্টেশনে যাচ্ছি। বাড়িতে তো তুই একা, সাবধানে থাকিস।”
” জি।”

সুরাইয়া চলে যেতে লাগলে উমেদ আবার বলে ওঠে,” আমাকে মাফ করে দেওয়া যায় না?”

দাঁড়িয়ে যায় সুরাইয়া। পিছন ফিরে বলে,” মাফ কেন? কী করেছেন?”
” আমার প্রেমিকা থাকাকালীনও আমি বুঝিনি তুই আমাকে পছন্দ করতি। আমি তো তোকে সবসময় বন্ধুর মতোই ভাবতাম। খুব গাধা ছিলাম আমি। নইলে কি কেউ ভালোবাসার মানুষকে বড়ো ভাইয়ের হাতে তুলে দেয়? বড়ো ভাইয়ার সাথে বিয়ের পর যখন ওর সাথে তোকে দেখতাম শুরু করলাম ভেতরটা জ্ব*লে যেত। তাই তো কিছু করতে না পেরে বাড়িছাড়া হলাম।”

সুরাইয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, ” কঁচি খোকা ছিলেন আপনি। যাই হোক এসব আর দ্বিতীয়বার আমাকে বলবেন না। আমি আশরাফের সাথে ভালো আছি।”
” আমি ভালো নেই।”
” সেটা আমার দেখার বিষয় না। এটা আপনার দেখার বিষয়, নারী ভালোবাসা বন্ধ করে দিলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো অসুস্থতা ঘিরে ধরে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন!”
” আমি অন্যকাউকে মনে জায়গা দিতে পারি না, সুরাইয়া। সবসময় তোর কথা মাথা ব্লক করে রাখে। ”
” মনে জায়গা দেবেন না কেন? আমার এতো বড়ো একটা উপকার করছেন! আপনার জন্যও দোয়া রইল। অনুরোধ, আমার সামনে আসবেন না। এসব কথাও আর বলবেন না। ভালো লাগে না শুনতে। আমি স্বামী নিয়ে ভালো আছি। সে খাটি মনের মানুষ । আমি তাকে ভালোবাসি। ”

উমেদ আনমনে বলে ওঠে,” তুই কতটা ভাগ্যবতী তাই না? ভালোবাসা বোঝার পর আমি তোকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসিনি৷ দূর থেকে আমি তোকে ভালোবাসি, এখানে কোনো চাওয়া পাওয়া নেই৷ কল্পনায় আমার আর তোর একটা ছোটো সংসার আছে যেখানে আমি তোর অপছন্দের কোনো কাজ করলেই তুই গাল ফুলিয়ে বসে থাকিস। আমার ব্যথায় চিৎকার করে কান্না করিস, আমার খুশিতে খিলখিল করে হাসিস। বড্ডো ভালো আছি কল্পনার তোকে নিয়ে৷ ”

উমেদ বেরিয়ে যায়। বোতল হাতেই দাঁড়িয়ে উমেদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ টলমল করে ওঠে। পরক্ষণেই বড়ো বড়ো কয়েকটা শ্বাস ফেলে বলে ওঠে,” আমি আশরাফকে ভালোবাসি। আমার স্বামী আমার জন্য যথেষ্ট। আমি তার বাস্তবেই আছি, আর কে কোথায় রাখল সেটা দেখার নেই।”
___

আবরার বাহিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ির সদর দরজা লক করছিল। তখনই পিছন থেকে কেউ এসে জড়িয়ে ধরে। আবরার হকচকিয়ে যায়। দ্রুত গতিতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই বলে ওঠে,” তুমি!”

এশা পাতলা জরজেটের একটা কালো শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে হাসি লেপ্টে আছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে৷ আবরার এই প্রথম এশাকে শাড়িতে দেখছে। সামনে দাঁড়ানো মেয়েটাকে শাড়িতে হয়তো একটু বেশিই ভালো লাগছে।

এশা হাসিমুখে বলে ওঠে,” কেমন লাগছে আমাকে?”

আবরার মৃদুস্বরে বলে ওঠে,” সিগারেটের শেষটানের মতো। শেষটানে এসে যেমন পূর্ণ তৃপ্তি দিয়ে দেয় তবুও ছাড়তে ইচ্ছে করে না সেরকম তোমাকে শাড়িতে আজ পরিপূর্ণ প্রেমিকা লাগছে। নেশা চড়ছে আমার। ”

এশা হেসে বলে,” হয়েছে হয়েছে। দরজা খুলো এবার। বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি?”
” তোমাকে তো সবসময় বুকের মধ্যে যত্ন করে রেখেছি, বাহিরে কেন থাকবে?”

আবরার দরজার লক খুলে ডান হাত এগিয়ে ইশারায় ভেতরে যেতে বলে এশাকে। এশা ভেতরে এসে সোজা আবরারের বেডরুমে চলে যায়। আবরার রুমে প্রবেশ করতেই এশা বলে ওঠে,” বাসায় এলাম কীভাবে আপ্যায়ন করবে বলো?”

আবরার সামনের সিঙ্গেল সোফায় বসতে বসতে বলে,” কী করতে পারি আপনার জন্য?”

এশা বিছানা ছেড়ে আবরারের পাশে এসে বসে। দুই হাত আবরারের কাধে রেখে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলে,” তোমাকে দিয়ে দিতে পারো।”

আবরার এশার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ” পাওনি আমাকে?”
” কোথায় পেলাম?”
” পাওনি এখনো?”
” উহু৷ পেতেই তো এসেছি আজ।”

আবরার বিস্ময়ভরা চোখে এশার দিকে তাকায়। প্রশ্ন করে,” কী বললে?”
এশা অকপটে বলে দেয়,” তোমার কাছে এসেছি৷ তোমাকে পেতে। ”
” বুঝলাম না।”
” এতো অবুঝ তুমি নও আবরার। যেটা বুঝেছ সেটাই বলেছি।”

আবরার কপালে হাতে দিয়ে ঘষতে থাকে আর বলতে থাকে,” মাথা ঠিক আছে তোমার? কী আবোলতাবোল বলছ!”
” ঠিক নেই মাথা। আমি তোমাকে ছাড়া আর এক মুহূর্ত থাকতে পারছি না। তোমাকে আমার চাই।”
” এশা, এশা, এশা শোনো, আমরা বিয়ে করিনি। তুমি যা চাইছ তা এই মুহূর্তে কোনোভাবেই সম্ভব না। আমাদের সম্মান আছে। আমরা এরকম করতে পারি না।”

এশা আবরারের ঠোঁটে আঙুল রেখে ইশারায় চুপ করতে বলে। আবরারও চুপ হয়ে যায়৷ আবরারকে থামিয়ে দিয়ে এশা বলে ওঠে, ” আমি নিজেই তোমার কাছে এসেছি আবরার। সমস্ত দুনিয়া এখন ভুলে যাও প্লিজ।”

আবরার উঠে দাঁড়ায়। এশার হাত ধরে টেনে দাঁড় করায়৷ বলে ওঠে,” চলো বিয়ে করে নিই। তাহলে কোনো বাধা থাকবে না।”

এশা শুকনো ঢোক গিলে বলে,” বিয়ে! ”
” হ্যাঁ, বিয়ে করব। তোমার বাবাকে কল দিয়ে ব্যবস্থা করতে বলি। ”
” বিয়ের এতো তাড়া কেন তোমার?”

আবরার চোয়াল শক্ত করে বলে,” কারণ আমি আর ঠকতে চাইছি না।”
এশা আমতা আমতা করে বলে,” ঠ ঠকতে মানে?”
” মানে যা করেছ ভুলে যাও। চল বিয়ে করে ফেলি। নাকি সেটাও পারবে না?”

এশা কিছু বলে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে কোনোকিছুর হিসাব মেলানোর চেষ্টায় আছে সে। আবরার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে,” কী হলো? আমি সবকিছু জেনেই তোমাকে বিয়ে করতে চাইছি।”
” সবকিছু জেনে মানে?”
” যা যা লুকিয়েছ।”
” কী লুকিয়েছি?”
” কিছু না বাদ দাও।”

এশা চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,” বলো আমাকে। কী লুকিয়েছি আমি তোমার থেকে?”

আবরার গিয়ে নিজের বিছানায় বসে। পিছন দিকে একটু হেলে গিয়ে বলে,” তোমরা সত্যিই খু*নী।”

এশার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়। বেঁধে যাওয়া গলায় বলে,” তোমরা বলতে?”
” তুমি আর তোমার ভাই। ”

দ্রুতগতিতে বিছানা ছেড়ে উঠে এশার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। চিবুক ধরে বলে,” তোমার ভাই একটা মেয়েকে ধ*র্ষণ করল, যাকে ধর্ষ*ণ করল তার পক্ষ থেকে কেউ এসে যখন তোমার ভাইকে মা*রধর করল, সোশ্যাল মিডিয়ায় জানালো তার কিছুদিন পর তোমরা দুজন মিলে ছেলেটাকেই মে*রে ফেললে? আমি তোমাকে বাঁচাতে ভেতরে ভেতরে কত অন্যা*য় করলাম। তোমাকে সাপোর্ট দিলাম আর তুমিই আমাকে ঠকালে?”

এশা আবরারের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,” তুমি মোটেও আমাকে বাঁচাওনি। আমি নিজেই এসব থেকে বেরিয়ে এসেছি। ”

কথা শেষ করার আগেই এশার ফোন বেজে ওঠে। ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই আবরারের মেজাজ যেন আরও খারাপ হয়ে যায়। এশার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়। রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে পুরুষালি গলায় কেউ বলে ওঠে,” জান, আ’ম ওয়েটিং। কখন আসছ?”

আবরার রক্তচোখে এশার দিকে তাকায়। রাগ আর ঘৃণায় চোখ বন্ধ হয়ে আসে আবরারের। শক্ত গলায় বলে ওঠে,” তোর জান আমার কাছে শু*তে এসেছে।”

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here