পরাণ দিয়ে ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) পর্বঃ১৮

0
238

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১৮
#Jhorna_Islam

নূর খাতার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। মাঝে মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু চোখের সামনে আসে যা আমরা কল্পনা ও করতে পারি না। নূর কয়েকদিন ধরে একের পর এক ঝটকা খেয়েই চলেছে। খাতার মধ্যে থাকা মি.রূপ ওয়াহিদ নামটার দিকে তাকিয়ে নূর হিসাব মিলাতে ব্যস্ত হয়ে পরে।অথচ কিছুতেই কিছু হিসাব তার মিলছে না। কে এই রূপ? কি তার পরিচয়। তাহলে ফাতিহার অভিভাবকের দায়িত্ব ই বা সৌন্দর্য কেনো পালন করে? ওদের বন্ডিং দেখে যে কেউ অনায়াসে ধরে নিবে এরা বাবা মেয়ে। আর প্রিন্সিপাল ম্যাম তো সৌন্দর্য আসার সাথে সাথে বলে উঠেছে,,মি. ওয়াহিদ আপনার মেয়ে অনেক ভালো সব দিক দিয়ে, তার আচার ব্যবহার চাল চলন। খুব ভালো শিক্ষা নিয়ে বড় করেছেন আপনার মেয়ে কে।
তাহলে এসব কেন বলল? কথায় কথায় তো আপনার মেয়ে আপনার মেয়ে ই করে গেলো।এই মুহূর্তে হাজারটা প্রশ্ন এসে নূরের মাথায় এসে ঘুরপাক খাচ্ছে।

কি হলো এনি প্রবলেম? জিগ্যেস করে প্রিন্সিপাল ম্যাম।

নূর তার সকল ভাবনা সাইডে রাখে,,,নো নো ম্যাম কোনো সমস্যা নেই বলেই তারাতাড়ি করে সাইন করে দেয়। এরমধ্যে সৌন্দর্য ফাতিহাকে নিয়ে এসেও পরে।

“‘- নূর তোমার হয়েছে? ” জানতে চায় সৌন্দর্য।

“- হ্যা হয়ে গেছে। ”

“- আচ্ছা তাহলে চলো যাওয়া যাক?”

— হুু।

— আসছি ম্যাম।কোনো ধরনের অসুবিধা বা দরকার হলে অবশ্যই আমাকে ইনফর্ম করবেন।আর আমার মেয়ে কে নিয়ে কোনো সমস্যা আশা করি হবে না, যদিও হয় তাহলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না।(সৌন্দর্য)

— এ নিয়ে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন মি.ওয়াহিদ। আমরা বিষয়গুলো খেয়াল রাখবো।

নূর সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে ভাবে কি জোরালো ভাবে আমার মেয়ে বলছে।না একটু সংকোচ না অন্য কিছু।

সৌন্দর্য তাদের থেকে বিদায় নিয়ে নূর আর ফাতিহা কে নিয়ে বের হয়ে যায়। গাড়িটা একটু দূরে পার্কিং করেছে সৌন্দর্য। এইদিকে একটু সমস্যা হয়েছে তাই আর গাড়ি এনে রিস্ক নেয় নি। সৌন্দর্যের কোলে ফাতিহা। নূর তাদের পাশেই হাঁটছে। সে ভাবনার জগতে বিচরণ করছে এখন। কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছে না নূর। ভাবনায় বিভোর হয়ে ভুলেই বসেছে সে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। হুট করেই এক মহিলার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরতে পরতে বেঁচে যায়।

এসব কি? তুমি কি কোনো কিছু ঠিক ভাবে করতে পারো না? একটু জোরালো ভাবে বলে সৌন্দর্য।

মহিলাটা কেমন করে যেনো সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। নূর মহিলাটার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে সরি বলে। সৌন্দর্য ও মহিলার দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে যায়। মহিলা দুইজনের দিকে একটু তাকিয়ে আচ্ছা বলে চলে যায়।

ফাতিহার মতো তোমার ও যে কোলে উঠতে ইচ্ছে করছে সেটা বললেই পারতে।শুধু শুধু এরকম বেখায়ালি হয়ে এক্সিডেন্ট করার তো প্রয়োজন ছিলো না। আমাকে বলতে যে কোলে উঠতে ইচ্ছে করছে। আমি তোমার হাসবেন্ড হই অবশ্যই তোমার কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখবো না।

নূর চোখ বড় বড় করে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়,, কি বলছে কি ঠোঁট কা’টা লোকটা এই বাচ্চা মেয়ের সামনে।

ওয়াও মি. ওয়াহিদ তুমি মাম্মা কে ও কোলে নিবে?(ফাতিহা)

মাম এসব বড়দের কথায় কান দিতে নেই।তুমি চকলেট খাও বলেই পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে দেয়। ফাতিহা চকলেট পেয়ে খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে যায়,এইদিকে কি হচ্ছে তার আর কোনো হুঁশ নেই। সৌন্দর্য একটু এগিয়ে নূরের হাত ধরে। নূর সৌন্দর্যের ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে। সৌন্দর্য একটু এগিয়ে নূরের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,,

“আমার বউয়ের কোলে উঠার ইচ্ছে ও আমি পূরণ করবো।এখন আপাতত এভাবেই আসো বলে নূরের হাত ধরে এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে। নূর একবার হাতের দিকে তো একবার সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। কেন জানি ভালো লাগায় পুরো শরীর শিউরে উঠছে।

সৌন্দর্য নিজেই নূরকে গাড়িতে তুলে সিট বেল্ট বেঁধে দেয়।এই প্রথম বাবা ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ এতো কেয়ার করছে।বাবার কথা মাথায় আসতেই চোখ ভিজে উঠে অশ্রুতে।অনেক করে আঁটকানোর চেষ্টা করে চোখের পানি নূর।কিন্তু চোখ কি বাঁধা মানে কষ্ট মনে হলে? টুপ করে গাল বেয়ে কোলে এসে চোখের পানি পরে।নূর সৌন্দর্য দেখার আগেই তারাতাড়ি চোখ মুছে নেয়।

সৌন্দর্য কোথায় নিয়ে যাচ্ছে নূর জানে না। জিগ্যেস ও করেনি কোথায় যাচ্ছে। বসে ফাতিহার সাথে টুকটাক কথা বলছে। এটা খেয়াল করে নি গাড়ি ওদের বাড়ির রাস্তায় ই যাচ্ছে। মাঝখানে আবার সৌন্দর্য গাড়ি দাঁড় করিয়ে কোথায় যেনো যায়।মিনিট পনেরো পর ফিরে আসে দুই হাত ভর্তি করা ব্যাগ আর এসবের ভিতর মনে হয় ফল,মিষ্টি আছে নূরের যা মনে হলো।নূর এসব দেখেও কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
সৌন্দর্য গাড়ি এনে নূরদের বাড়ির সামনে থামায়।নূর আর ফাতিহা তখন গল্প করতে ব্যস্ত।

এই যে আমার দুই ম্যাডাম আপনাদের গল্প কি শেষ হয়েছে? না হলে একটু রেস্ট নিন বাড়িতে গিয়ে আবার শুরু করবেন ঠিক আছে?

বাড়ির কথা বলতেই নূর বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখে ওদের বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করানো।ফাতিহার থেকে বিদায় নিয়ে নূর চলে যেতে নেয়,,

আশ্চর্য আমাদের কে কি তোমার বাড়িতে নিবে না নাকি? ঐটা শুধু তোমার একার বাড়ি না কিন্তু আমার শ্বশুর আব্বার আর ফাতিহার নানুর বাড়ি।তাই না ফাতিহা? ফাতিহা মাথা নেড়ে জানায় ঠিক।

নূর আহাম্মক বনে যায়। আজও যে বাড়িতে যাওয়ার কথা বলতে ভুলে গেছে সেটা মাথায় আসতেই ঠাসিয়ে চ’ড় মারতে ইচ্ছে করলো নিজের মাথায় নিজেরই।

এরমধ্যে সৌন্দর্য ফাতিহা কে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। নূরের কোলে ফাতিহা কে দিতে দিতে বলে
ধরো তোমার মেয়ে কে। তারপর গিয়ে গাড়ির পিছন থেকে কিনে আনা জিনিস পত্র গুলো নিজের হাতে নিয়ে নূরকে চোখের ইশারায় ভিতরে যেতে বলে। নূর রোবটের মতো চলতে থাকে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বর্তমানে তিনজন।

কি হলো? কলিং বেল বাজাও আমার দুই হাত ভর্তি দেখতে পাচ্ছো না? (সৌন্দর্য)

নূর কলিং বেল দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে দরজা খোলার জন্য। মিনিট খানেক পরই দরজা খুলে যায়। তূর দরজা খুলে দিয়েছে।

আরে তূর তুই আ,,,,,নূরকে তূর পাত্তাই দিলো না হাত দিয়ে সরিয়ে সৌন্দর্যের পাশে দাঁড়িয়ে,,, আল্লাহ এ আমি কি দেখছি? জিজু আপনি? আমাদের বাড়িতে এসেছেন? ওয়াও!

হ্যা আমার একমাত্র শালিকা আমি এসেছি তোমার জিজু।এবার ভিতরে ঢুকতে দাও আগে।তূর নিজেই সৌন্দর্যের হাতের জিনিসপত্র নিয়ে ওদের কে ভিতরে প্রবেশ করে।

সৌন্দর্য কে দেখে নূরের বাবা মা খুব খুশি হয়।সবচেয়ে বেশি খুশি হয় নূরের বাবা। নূর আর সৌন্দর্য পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলো। মেয়ে আর মেয়ের জামাই কে দুই চোখ ভরে দেখে নেয়।কি সুন্দর লাগছে দুইজন কে। নূরের মা সৌন্দর্য কে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে যায়। যদিও বাড়িতে কারোই মনের অবস্থা ভালো না তবুও জামাই কে তো আর এমনি এমনি বসিয়ে রাখা যায় না। তারউপর নূরের বাবা নিজে বলে দিয়েছে সৌন্দর্য আর ফাতিহার জন্য কি কি রান্না করতে।তাদের আপ্যায়নের যেনো কোনো কমতি না থাকে। একটা মাত্র জামাই।

তূর ফাতিহা কে নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে নিজের সাজার জিনিস দিয়ে বসিয়েছে। নূর নিজের রুমে চলে গেছে ফ্রেশ হয়ে জামা চেঞ্জ করতে। সৌন্দর্য বসে বসে নূরের বাবার সাথে গল্প করছে।
নূরের বাবা গল্প করতে করতেই একপর্যায়ে ঘুমিয়ে যায়। সৌন্দর্য আর এখানে বসে থাকে না উঠে ড্রইং রুমের দিকে চলে যায়। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেওয়ালের দিকে তাকাতেই ওদের চারজনের বড় একটা ফ্যামিলি ফটোর দিকে নজর যায়। সৌন্দর্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।এরমধ্যে পিছন থেকে তূর এসে বলে,আরে জিজু আপনি এখানে একা একা কি করছেন? ফ্রেশ ও হননি দেখা যায়। আসুন আমার সাথে বলেই টেনে নিয়ে যেতে থাকে।

আরে শালিকা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?

আপুর রুমে। (তূর)

–‘ এখন আমি তোমার আপুর রুমে গিয়ে কি করবো? তারচেয়ে বরং আমাকে গেস্টরুম টা দেখিয়ে দাও।একটু ফ্রেশ হওয়া দরকার।

— ফ্রেশ হলে একটু হবেন কেন শুনি? পুরোপুরি ই হোন নিজের বউয়ের রুমে গিয়ে বলেই চোখ মেরে জোরে ধাক্কা দিয়ে সৌন্দর্য কে ভিতরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা আঁটকে তূর মুচকি হেসে চলে যায়।

এইদিকে নূর মাত্রই ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে।বাথরুমে জামা নিয়ে যেতে ভুলে গেছে তাই রুমেই চেঞ্জ করবে বলে ঠিক করে নেয়।সাধারণত নূর তার রুম লক করে না। বাড়িতে তেমন কেউ নেই। আর থাকলেও নক করে ঢুকে। আজ যে বাড়িতে সৌন্দর্য এসেছে সেটা মাথা থেকে বের হয়ে গেছে নূরের। মাত্রই ওড়নাটা রেখে জামা নিতে যাবে,,,,,

কোথা থেকে হুট করে সৌন্দর্য এসে নূরকে নিয়ে ধপাস করে বিছানায় পরে যায়।

তূরের হুট করে ধাক্কায় সৌন্দর্য ও নিজের ব্যলেন্স রাখতে পারে নি।নূরকে সাথে নিয়ে বিছানায় পরে যায়।

নূর কি হলো কিছুই বুঝলোনা। সে অনুভূতি শূন্য হয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। দুইজনের দৃষ্টি দুইজনের দিকে নিবদ্ধ। দুইজনের পৃথিবীই যেনো থমকে গেছে। সৌন্দর্যের কি হলো কে জানে,, নিজের হাত নূরের পিছনে রেখে নূরকে নিজের সাথে পুরোপুরি মিশিয়ে নিয়ে জরিয়ে ধরে।

#চলবে,,,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here