দু’মুঠো_প্রেম ফারজানা_আফরোজ ৪

0
1386

দু’মুঠো_প্রেম
ফারজানা_আফরোজ

আদিবা ও আদুরী রাস্তা ধরে হাঁটছে। ফুচকার দোকানের সামনে আসতেই আদুরী বায়না করলো সে চটপটি খাবে। আদিবা নিজের জন্য এক প্লেট ফুচকা ও আদুরীর জন্য এক প্লেট চটপটি নিলো। দুই বোন খুনসুটি করেই শেষ করলো খাবারগুলো। বিল মিটিয়ে আবারো হাঁটা ধরলো দুই বোন।

– আপু আসো আমরা দৌঁড় দৌঁড় খেলি। আমি দৌড়াবো আর তুমি আমাকে দৌঁড়ে ধরবে।

– একদমই না। রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করলে মানুষ এসে পাগল ভেবে পাবনা পাঠিয়ে দিবে।

কে শোনে কার কথা। এক দৌঁড়ে চলে গেলো আদুরী। আদিবা ছুটলো তার পিছু।

তিন রাস্তার মোড়ে দরবার বসেছে। মানুষজন ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। একজন ছেলে রাস্তায় এক মেয়েকে বিরক্ত করেছে। শুধু বিরক্ত নয় মেয়েটির ওড়না জোর করে রেখে দিয়েছে। সেই ছেলেকেই ধরে বেঁধে গাছের সাথে বাঁধা হয়েছে। ফয়সাল কয়েক দফা মেরে রক্ত বের করেছে ছেলেটির শরীর থেকে। সিদ্ধান্ত হলো গরম তেল ছেলের ডান হাতে ঢালা হবে। ভবিষ্যতে যেনো আর কোনো মেয়ের সাথে এমন অসভ্যতম কাজ করতে না পারে।

আদুরী দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে দরবারে মাঝে চলে আসে আর তার পিছন পিছন আদিবা। হঠাৎ আদিবার খেয়াল হলো সে মানুষের ভিড়ে এসে পড়েছে। সবাই তাকে দেখছে। আদুরীর এক হাত টেনে ধরে আস্তে আস্তে বলল,

– চল তাড়াতাড়ি।

আদিবা চলে যেতে নিলেই ফয়সালের দৃষ্টি পরে তার উপর। রাগী মাথা এইবার ভীষণ রেগে যায় আদিবাকে দেখে। দৌঁড়ে এসে আদিবার হাত টেনে ধরে। কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,

– লাজ শরমের মাথা খেয়ে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছো? বাবা মা শিক্ষা দীক্ষা দেইনি মনে হয়। আর কিসব জামা পড়েছো। এইসব জামা পড়ার চেয়ে না পড়লেই তো ভালো ছিল। তোমাদের মত কিছু মেয়েদের জন্য যুবক সমাজ নষ্ট হচ্ছে। নিজেরা শরীর দেখিয়ে চলবে আর ছেলেরা তাকালেই ছেলেদের চোখ খারাপ। কেন বাসা থেকে ঢোলা জামা কাপড় পড়ে বের হতে পারো না? নাকি টাকা পয়সার অভাব?

ফয়সাল হতে বুঝতে পারছে না সে কি বলছে। রাগের বশে মুখে যা আসছে তাই বলে ফেলছে। এতগুলো মানুষের সামনে আদিবা লজ্জায় মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছে।

ফয়সাল তখন ওই ছেলেটির কাছে গিয়ে দু’গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে চেঁচিয়ে উঠলো,

– আর এদের মত ছেলেদের জন্য সব ছেলের বদনাম হচ্ছে। যে মেয়ে পাত্তা দিবে না তার পিছনে ঘুরতে কেন যাস? বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলে আগে নিজে কাজকর্ম কর পরে বাবা মাকে বলে বিয়ে কর। রাস্তা ঘাটে মেয়েদের বিরক্ত করতে ভীষণ ভালো লাগে তাই না? আজ চোখের পর্দা করিস না বলেই এইসব হচ্ছে। ইচ্ছা করছে গরম তেল তোর চোখে আর যে মেয়েগুলো ফিগার দেখিয়ে জামা কাপড় পড়ে তাদের গায়ে ঢালতে। তাহলেই দুর হবে এই ধর্ষণ, ইভটিজিং।

আদিবা এখনও কান্না করছে। লজ্জায় তার মরে যেতে ইচ্ছা করছে। ফয়সাল এই কাজ সবার সামনে না করলেও পারতো কারণ তার জামা কাপড় এতটাও খারাপ নয়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আজকের পর সে বাসা থেকে বের হবে না। কারণ রাস্তায় তাকে কেউ দেখলেই বলবে, আরে ওইটা ওই মেয়ে না যাকে ফয়সাল ভাই সবার সামনে অপমান করেছে। এইসব মেয়েদের এইভাবেই বলতে হয়।

বিকালের মিষ্টি রোদ এসে পড়ল আদিবার কান্না মাখা মুখে। টপটপ করে পানি তার গাল বেয়ে নিচে পড়ছে। ফয়সাল খেয়াল করলো আদিবার কান্না মাখা মুখ। বুকের ভেতর আচমকাই ব্যাথা শুরু হলো তার। জীবনে প্রথম এই মেয়েটিকে তার ভালো লেগেছিল। কত কত মেয়ের সাথে তার পরিচয় কিন্তু কখনও কাউকে এইভাবে দেখেনি সে। শুধুমাত্র আদিবাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে সে। বাবার পছন্দ বলে কথা তার উপর বাঘিনী। কথাটি মনে হতেই কিছুটা শান্ত হলো সে। আদিবার কাছে এসে শান্ত গলায় রাগী দৃষ্টিতে বলল,

– আজকের পর থেকে রাস্তাঘাটে দৌড়াদৌড়ি করলে পা দুটো ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে জাম তলায় বসিয়ে রাখবো। মানুষ এসে দু-এক টাকা যাই দিবে তা নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে। বলে দিলাম।

আদুরী এইবার রেগে বোম হয়ে ফয়সালের প্যান্টের ডান পায়ের দিকে খুচাতে শুরু করলো। ফয়সাল পায়ের দিকে তাকাতেই মিষ্টি ছোট্ট একটা পুতুল দেখে পা ভাঁজ করে আদুরীর মুখ বরাবর তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,

– সমস্যা কি?

– খাম্বা। আমার আপুকে বকা কেন দিলে? তুমি পঁচা একটুও ভালো না। দেখতে যেমন খাম্বা জিরাফের মতো আর আচরণেও ভিলেনের মত। নায়ক নায়ক ভাব কিন্তু কথাবার্তা পুরাই ভিলেন। এই আদুরী বদ দুআ দিলো তোমাকে, জীবনেও বিয়ে হবে না। যদিও হয় সারাদিন বউ আর শালী, শালা সবার হাতে মাইর খেতে হবে। আরেকটা দুআ দিলাম যেন তোমার পকেটের টাকা তোমার বউ শালী কেড়ে নিয়ে তোমাকে ফকির বানায়।

ফয়সাল বুঝতে পারছে না সে হাসবে নাকি কান্না করবে। আদুরীর কথাগুলো এতই ভালো লেগেছে যে সে জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো।

– ওয়াও কি কিউট।

– একদম পটাতে এসেছো না। আদুরী তোমার মত বুড়ো, ভিলেন ছেলেকে বিয়ে করবে না। এতদিনে বিয়ে করলে আমার মত নাতি নাতনী থাকতো তোমার। যাও বাসায় গিয়ে বাবা মাকে বলে বিয়ে করে ফেলো।

ফয়সালের চোখ এখন কপালে। মুখ হা করে তাকিয়ে আছে আদুরীর দিকে। আদুরী তখন আবারো ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,

– শুনো পরের বার যদি আমাদের দেখা হয় তাহলে হাঁটু পর্যন্ত পা কেটে পড়ে এসো। ইসস কত্ত লম্বা। হাঁটু মুড়ে বসেছো তবুও নাগাল পাচ্ছি না।

আদুরী আর কিছু না বলে আদিবার হাত ধরে যেতে লাগলো। তাদের যাবার পানে তাকিয়ে রইলো ফয়সাল। লোকজন ভাবছে, হঠাৎ কি হলো ফয়সাল ভাইয়ের, পিচ্ছি মেয়েটা কত কথা বলল আর তিনি কিনা হাসছে। আশ্চর্য!

আদিবা বাসায় এসে এখনও কান্না করছে। তার ফর্সা মুখ এখন লাল রঙ ধারণ করেছে। আদুরী এসেছিল বুঝাতে কিন্তু বড় বোনের ধমক খেয়ে মাথা নিচু করে চলে গিয়েছে সে।

অন্যদিকে ফয়সাল বাসায় এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। আজকাল নিজের প্রতি একটুও খেয়াল রাখে না সে।

– কত মেয়ের ক্রাশ আমি আর ওই পিচ্ছি মেয়ে কিনা বলল আমি বুড়ো? বড় বোনের তেজ যেমনি হোক ছোট বোন তার হাজারগুণ হবে। এইটুকু বয়সে যদি এমন ঝাঁঝ থাকে তাহলে বড় হলে কিরকম হবে তার হিসাব নেই।

বিড়বিড় করে কথাগুলো বলছে তখনি নজর পড়ল তার চুলের দিকে। পাকা পাকা চারটা চুল তার সামনে ঝিকঝিক করছে। মুখটা কালো করে বলল,

– আসলেই তো আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। আচ্ছা তাহলে মেয়েরা কি আমার পাওয়ার দেখে আমাকে পছন্দ করে নাকি টাকা?

পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল আরিফ। গলার কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,

– দোস্ত কি প্রেমে পড়েছিস? জানিস প্রেমে পড়লে মানুষ ঘনঘন আয়না দেখে। তো সেই সুন্দরী রমণী কে রে?

আরিফের মুখ সরিয়ে বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল ফয়সাল,

– শালা গেঁ। তোকে কি আর শুধু শুধু গেঁ বলি? তোর স্বভাবে বলি। দূর থেকে কথাগুলো বলা যেতো না? এইভাবে জড়িয়ে ধরে বলতে হয়? ওই তুই কি তোর তিন চারটা গার্লফ্রেন্ডের সাথেও এমন করিস নাকি?

আরিফ তার মাথা চুলকিয়ে আস্তে আস্তে বলল,

– শুধু জড়িয়ে ধরা নয় অনেক কিছু করি কিন্তু তোকে বলা যাবে না। জানলেই আমাকে জেলে দিয়ে আসবি।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল ফয়সাল,

– একদিন দেখা যাবে রাস্তাঘাটে তোর হাজার হাজার ছেলে মেয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। গার্লফ্রেন্ড একটা আরেকটার সাথে ঝগড়া লেগে মারামারি শুরু করে দিয়েছে। সেদিন তোর বিচার যদি আমাকে করতে হয় ট্রাস্ট কর তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে সবার মাঝে ভাগ করে দিবো।

– শোন ভাই তুই যা ভাবছিস আমি ওতো খারাপও নই। এখন বল আয়না কেন দেখছিস?

– চুল পেকে গেছে বুড়ো হয়ে গেছি আমি।

ফয়সালের কথা শোনে আরিফ বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। হাসতে হাসতে বলল,

– বিয়ে করতে চাচ্ছিস ভালো কথা। এইভাবে ঘুরিয়ে পেচিয়ে কেন বলছিস। কবে থেকে লজ্জা পাচ্ছিস রে তুই?

ফয়সাল এইবার আরিফের উপরে উঠে বসলো। আরিফের চুল টেনে বলা শুরু করলো,

চলবে,

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ রি-চেইক হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here