তুমি ছিলে বলেই পর্ব ৮

0
209

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ৮
#দিশা_মনি

স্নেহা ও নিপুণ একসাথে বসে ছিল হাসপাতালের করিডোরে। দুজনেই প্রজ্ঞাকে নিয়েই কথা বলছিল। এমন সময় পারভেজ ইসলাম চলে আসেন সেখানে। তার মুখে ছিল মলিনতার ছাপ। তার মলিন মুখ দেখেই নিপুণ বুঝতে পারে হয়তো তিনি কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তাই নিপুণ পারভেজ ইসলামকে শুধায়,
“আঙ্কেল আপনি থানায় গিয়েছিলেন না? এফআইআর করিয়েছেন তো?”

পারভেজ ইসলাম হতাশ কন্ঠে বললেন,
“এই দেশে কি আর সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পায়? ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের কাছেই তো আইন জিম্মি হয়ে আছে।”

“কি হয়েছে আঙ্কেল? আপনি আমায় একটু পরিস্কার করে বলুন প্লিজ।”

পারভেজ ইসলাম নিপুণকে সব ঘটনা খুলে বলে। থানায় যাওয়ার পর পুলিশরা তাকে কিরকম কথা বলেছে সব বলেন। এছাড়াও তিনি জানান একজন পুলিশ তাকে হুমকিও দিয়েছে রুদ্র চৌধুরীর সঙ্গে না লড়তে। নিপুণ সব শুনে ভীষণ রেগে যায়। বরাবরই এমন ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের ক্ষমতার অপব্যবহার তার মোটেই পছন্দ নয়। আজও তার খুব খারাপ লাগল এসব শুনে। নিপুণ বলে উঠল,
“ধিৎকার কানাই এমন পুলিশ অফিসারদের! পুলিশের দায়িত্ব জনগণের সেবা করা। কিন্তু তা না করে কিছু পুলিশ ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের সেবা করায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। এরকম পুলিশ অফিসারদের কারণেই সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পায় না। আপনি চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। আমি নিজেও আইনের লোক। তাই কিভাবে এসব পুলিশ অফিসারদের সাথে ডিল করতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।”

নিপুণ কিছু একটা মনে করে বলে,
“আঙ্কেল, আমি যদি আপনার কাছে একটা পারমিশন চাই আপনি আমায় পারমিশন দেবেন তো?”

“কিসের পারমিশন?”

“আমি এই ব্যাপারটা প্রেসের লোকদের জানাতে চাইছি। কারণ যদি এই ঘটনা জনসম্মুখে আসে তাহলে পুলিশের উপরেও একটা চাপ আসবে। তখন তারা বাধ্য হবে কোন স্টেপ নিতে।”

পারভেজ ইসলাম চিন্তায় পড়ে যান। তিনি নিতান্তই একজন ছাপোষা ব্যক্তি। একজন শিক্ষক হওয়ায় সমাজে তিনি যথেষ্ট সম্মানিত। এখন যদি এসব বিষয় প্রেসের সামনে আসে তাহলে প্রজ্ঞার ঘটনাটা চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে। নিজেকে নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। কিন্তু তার মেয়েটা কি পারবে এতসব ধকল সামলাতে।

স্নেহা পারভেজ ইসলামের মনের ভাবনাটা বুঝতে পারে। তাই সে ওনার উদ্দেশ্যে বলেন,
“আমি জানি, আপনি কি ভাবছেন। কিন্তু প্রজ্ঞাকে ন্যায়বিচার পাওয়ানোর জন্য এখন হয়তো আর কোন উপায় নেই। আমি চাই আমার বান্ধবী সুবিচার পাক। এইজন্য আপনার অনুমতির প্রয়োজন। আপনি অনুমতি দিলেই নিপুণ আপু কিছু করতে পারবে।”

পারভেজ ইসলাম অবশেষে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলেন৷ তিনি বললেন,
“ঠিক আছে। আমার মেয়েকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে যদি এমনটা করতে হয় তাহলে তাই করা হোক।”

—————–
“রাজশাহী * আসনের এমপি রুদ্র চৌধুরীর ভাই রাহাত চৌধুরীর বিরুদ্ধে তরুণীকে গণ-ধ-ষনের অভিযোগ। ইতিমধ্যে তরুণীর বাবা মামলাও দায়ের করেছেন।”

ব্রেকিং নিউজে ছয়লাব টিভি চ্যানেলগুলো। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে নিন্দার ঝড়। মানুষ বেশ কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে বিষয়টি নিয়ে। অনেকেই এমন ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের করা অন্যায় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এই সময় আরো অনেক মেয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলছে। যাদের রাহাত চৌধুরী নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছে। এতদিন তারা ভয়ে চুপ ছিল৷ কিন্তু এখন একে একে রাহাত চৌধুরীর সব অপরাধ সামনে আসতে শুরু করেছে।

টিভির রিমোট ছু’ড়ে মা*রলেন রাজীব চৌধুরী। অতঃপর নিজের ছোট ছেলের গালে সপাটে চ’ড় বসিয়ে দিলেন। রাগী স্বরে বললেন,
“ইডিয়েট একটা! তোমার জন্য আজ আমায় এই দিন দেখতে হলো। আমার সব রেপুটেশন তুমি ধুলায় মুছে দিলে। তোমার ভাইকে এখন না সাফার করতে হয় এসবের জন্য।”

“আমি কি করেছি ড্যাড?”

“কি করেছ তুমি? এটাও আমাকে বলে দিতে হবে? ঐ মেয়েটাকে তুমি রে* করেছ ভালো কথা। কিন্তু ওকে বাঁচিয়ে রাখলে কেন? ওকে মে* রে দিলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। এখন দেখছ তো কি হচ্ছে?”

“সরি ড্যাড। আমি বুঝতে পারিনি যে এত বড় একটা ব্যাল্ডার হয়ে যাবে।”

এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো রুদ্র চৌধুরী। বছর ৩০ এর এই যুবক বেশ ঠান্ডা মাথার খিলাড়ি বলেই রাজনৈতিক মহলে পরিচিত৷ তাকে কখনো কেউ রেগে যেতে দেখেনি৷ তবে বরাবরই ঠান্ডা মাথায় বেশ কায়দা করে প্রতিপক্ষকে তিনি যেভাবে বশ করেছেন তাতে নিজের দূরদর্শিতার প্রমাণই দিয়েছেন।

রুদ্র চৌধুরী এসেই বেশ স্বাভাবিক গলায় রাহাতকে বলল,
“বাইরে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। তুমি ভালোয় ভালোয় ওদের কাছে গিয়ে স্যারেন্ডার করে দাও।”

“এসব তুমি কি বলছ ভাইয়া?”

“আমি যা বলছি তাই করো।”
পুনরায় শান্ত স্বরে বলে রুদ্র চৌধুরী। রাজীব চৌধুরী রুদ্রর উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
“মানছি তোমার ভাই একটা ভুল করেছে৷ তাই বলে তুমি ওকে এভাবে পুলিশের হাতে তুলে দেবে। তাহলে এমপি হয়েছ কেন তুমি? আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের কত অপরাধ ধামাচাপা দিয়েছি। আর তুমি নিজের ভাইকে সামান্য এই রে*প কেস থেকে রক্ষা করতে পারবে না?”

রুদ্র চৌধুরী নিজের পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ট করতে করতে বলল,
“আমি জনগণের সেবা করার জন্য এমপি হয়েছি। কারো অপরাধ গোপন করার জন্য নয়। রাহাত তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন? তোমাকে না যেতে বললাম।”

রাহাত অসহায় দৃষ্টিতে রাজীব চৌধুরীর দিকে তাকান। রাজীব চৌধুরী বলে ওঠেন,
“কোথাও যাবে না আমার ছেলে। তুমি যদি নিজের ভাইকে বাঁচাতে অক্ষম হও তাহলে আমি নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের ছেলেকে বাঁচাবো। ভুলে যেওনা আমার ক্ষমতাও কিন্তু কম না।”

রুদ্র চৌধুরী এবার চোখ তুলে রাজীব চৌধুরীর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়৷ রাজীব চৌধুরী নিজের ছেলের এই দৃষ্টিতে ভীষণ ভীত হয়ে পড়েন। তার বড় ছেলেকে তিনি খুব ভালো করেই চেনেন। ঠান্ডা মাথায় ছেলেটা সে বড়সড় কান্ডও করে দিতে পারে সেটা তার অজানা নয়। বাবা বলে তাকে রেহাই দেবে এমন ছেলে রুদ্র নয়। তাই তো রাজীব চৌধুরী আর বেশি কিছু বলার সাহস পান না। রুদ্র চৌধুরী এবার এগিয়ে যায় রাহাতের দিকে। রাহাতের হাত ধরে জোরপূর্বক তাকে বাইরে নিয়ে যায়। অতঃপর তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে বলে,
“অফিসার নিয়ে যান ওকে। আমার ভাই জন্য যেন ও বাড়তি কোন সুবিধা না পায়। ওর অপরাধ যদি সত্যিই প্রমাণিত হয় তাহলে ও যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়।”

রাহাতের গ্রেফতারের এই ঘটনা সাংবাদিকরা ক্যামেরাবন্দী করে নেয়। রাহাতকে পুলিশে সোপর্দ করার পর তারা সবাই মিলে রুদ্র চৌধুরীকে ঘিরে ধরে। সবাই তাকে একটাই প্রশ্ন করে তিনি কিভাবে এত সহজে নিজের ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। সেই মুহুর্তে রুদ্র চৌধুরী বেশ বুক ফুলিয়েই বলেন,
“আমি যখন একজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছি তখন থেকেই এই এলাকার সকল মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার কাঁধে। এই এলাকার সকল মানুষের আমার আপনজন। আজ যেই মেয়েটা ধ**তা হয়েছে সেও আমার বোন। আমার নিজের ভাই এরকম একটা অন্যায় করেছে জন্য আমি সব মেনে নেব এমনটা নয়। আমি সবসময় ন্যায়বিচারের পক্ষে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব ইনশাআল্লাহ।”

রুদ্র চৌধুরীর এহেন জবানবন্দি বেশ প্রশংসিত হয়৷ সবাই রুদ্র চৌধুরীর নিজের ভাইকে এভাবে পুলিশের হাতে তুলে দেবার জন্য তাকে সাধুবাদ জানায় এবং তার ভূয়সী প্রশংসা করে।

★★★
রাহাতের গ্রেফতারের সংবাদে পারভেজ ইসলাম, নিপুণ, স্নেহা সবাই ভীষণ খুশি হয়৷ স্নেহা দৌড়ে যায় প্রজ্ঞার কেবিনে। অতঃপর মৃদু হেসে তার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তুই এবার ন্যায়বিচার পাবি প্রজ্ঞা। ঐ রাহাত এভাবে তার দলের সব সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।”

প্রজ্ঞা উপহাসের সুরে বলে,
“লাভ কি? সেই তো ওরা নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে বেরিয়ে আসবে। আমার মতো সাধারণ মেয়েদের ন্যায়বিচারের স্বপ্ন দেখা বৃথা।”

“তুই ন্যায়বিচার পাবিই। রাহাত চৌধুরীর ভাই এমপি রুদ্র চৌধুরী নিজে তার ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।”

“আমার কেন জানি এসব রাজনৈতিক নেতাদের বিশ্বাস হয়না। নিজের স্বার্থের জন্য তারা সব করতে পারে। আমি কি সত্যিই ন্যায়বিচার পাবো?”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here