তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব ৩৩

0
158

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৩

শরিফ শিকারকে এতো খুশি হতে দেখে পারফি বলে উঠলো,

আরে আঙ্কেল ওরুফে শশুর মশাই গুড নিউজ তো আরো একটা শোনা বাকি।

পারফির কথা বলার ধরন দেখে সবাই এক সাথে হেঁসে ফেললো সাথে সবাই উৎসুক চোখে তাকালো নিউজটা শোনার জন্য।

পারফি সবার উৎসুক চাওনি দেখে শাফিনকে কিছু একটা ইশারা করতে শাফিন যেয়ে টিভি অন করলো।

সবাই একরাশ বিস্ময় নিয়ে শাফিন আর পারফির কাজ দেখতে লাগলো।

টিভি অন করতে ভেসে উঠলো এনামুল খানের মুখশ্রী যাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
পারফিদের বিজনেস পার্টনার হিসেবে সবাই মোটামুটি চেনে এনামুল খানকে। তাকে কেনো পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে তা কারো মাথায় আসলো না তখন টিভিতে বলতে থাকা একটা কন্ঠস্বরে ভেসে উঠতে লাগলো কিছু কথা যা শুনে সবাই চমকে উৎসুক চোখে টিভির দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালো।

টিভিতে একটা মেয়ে বলে উঠলো বিজনেসম্যান এনামুল খানের কালোবাজারি কারবার সব কিছু আজ ফাঁস হয়েছে। কালোবাজারি ব্যবসা, মানুষ পাচার আরো নানা ধরনের ক্রাইম কাজের সাথে লিপ্ত ছিলো এনামুল খান। সাথে আরো জানা গেলো রফিক খানের ছোট ভাই এই হলো এনামুল খান। রফিক খানকে অনেক বছর আগে এসব কালোবাজারি ব্যবসায়ের জন্য জেলে বন্দী করা হয়েছিলো কিন্তু ক্ষমতার জোরে সেখান থেকে পালিয়ে পারি জমিয়েছিলো অন্য দেশে। এখন জানা গেলো রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাই মিলে এসব কালোবাজারি ব্যবসা সবার আগোচরে করে বেড়াচ্ছে। এনামুল খানকে ধরা গেলেও রফিক খানের কোনো খোঁজ মেলে নি। পুলিশ হন্য হয়ে খোজ চালাচ্ছে রফিক খানকে খুঁজে বের করার জন্য।
সাথে এরেস্ট করা হয়েছে এনামুল খানের একমাত্র কন্যা মিস এলিজাকে। ধারণা মতে মিস এলিজাও বাবা, চাচাদের সাথে এই কাজে লিপ্ত ছিলো।

সাথে জানা গিয়েছে আরো কিছু গোপন সংবাদ। বিখ্যাত জার্নালিস্ট শরিফ শিকদারের মেয়েকে ছোট বেলা এই রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাই মিলেই অপহরণ করেছিলো। আজ নিজের মুখে শিকারক্তি দিয়েছে এনামুল খান এই কথা। জার্নালিস্ট পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার মিলে রফিক খানের পিতার কালোবাজারি কারবার ফাঁস করে দিয়েছিলো যার জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে শরিফ শিকদারের মেয়েকে জন্মের পর অপহরণ করেছিলো। সাথে চৌধুরী আর শিকদার পরিবারে প্রতিনিয়ত অ্যাটাক ও করে গিয়েছে। সাথে এ ও শিকার করেছে শরিফ শিকদারের আসল মেয়ে আর কেউ না ইসহাক আহমেদের ছোট কন্যা ইয়ানা। যে বর্তমানে টপ বিজনেসম্যান আবরার পারফি চৌধুরীর ওয়াইফ।

আরো জানা গিয়েছে দুই ভাই এর এই কালোবাজারি কারবার বিজনেসম্যান আবরার পারফি চৌধুরী আর শাফিন শিকদার মিলে বের করেছে যার জন্য আইনি বিভাগ এই দুই বিজনেসম্যান এর উপরে কৃতজ্ঞ দেশের এতো বড় ক্রিমিনালকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।

পুরো সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে একে অপরের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার। সাথে প্রতিটা সদস্য অবাক হয়ে তাকালো পারফি আর শাফিনের দিকে। তাদের ছেলেরা মিলে এতো বড় একটা কাজ করেছে তাদের কিছু না জানিয়ে ভাবতেই অবাক হচ্ছে।
সাথে সবাই খুশি ও হলো তাদের এতো বছরের শত্রুরা অবশেষে ধরা পড়েছে এখন শুধু রফিক খানকে ধরার পালা।

সবার হাসিখুশি মনটা আরো অনেক বেশি আনন্দের হয়ে উঠলো নিউজ গুলো শুনে।

শরিফ শিকদার নিজে ইসহাক আহমেদকে ফোন করে আগামীকাল আমন্ত্রণ জানালো তার বাসায়। এই লোকটার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে সারাজীবন। কারণ এই লোকটা না থাকলে হয়তো তার আদরের মেয়েটাকে এমন অক্ষত অবস্থায় বুকের মাঝে ফিরে পেতো না।

সবাই এক সাথে হয়ে হাসিখুশিময় সন্ধ্যা পার করলো। আজ কারো মনে নেই কোনো চাপা কষ্ট। সবাই আজ খুব খুব খুশি। রাতের ডিনারও সবাই এক সাথে করলো। শাহানা বেগম তো মেয়েকে চোখে হারায়। এক সেকেন্ড এর জন্য নিজের থেকে দূরে যেতে দেয় না। নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে সাথে সবার কাছে আবদার ও করেছে আজ মা মেয়ে এক সাথে ঘুমাবে। সবার সম্মতিতে আজ ঠিক হলো শাহানা বেগম, পিয়াসা বেগম, ইয়ানা আর প্রীতি এক সাথে ঘুমাবে। পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদার এক সাথে ঘুমাবে। পারফি আর শাফিন এক সাথে ঘুমাবে।

সবার এই সিদ্ধান্ত শুনে পারফির মুখশ্রী হয়ে গেলো ফাটা বেলুনের মতো। দুদিন ধরে এই ঝামেলার জন্য ওর বিড়াল ছানার বউকে একটুও কাছে পায় নি। সব রহস্য উদঘাটন করার জন্য বেরিয়ে যেতো অনেক সকালে আবার ফেরা ও হতো অনেক রাত করে যখন ইয়ানা থাকতো গভীর ঘুমে। তাই দুটো দিন ধরে বউ এর সাথে দুটো কথা বলার ও সুযোগ হয় নাই আর আজ নাকি পুরো বউ ছাড়া এই থাকা লাগবে ভাবতেই পারফির মুখ হয়ে গেলো ফাটা বেলুনের মতো। কতো শত ইচ্ছে ছিলো আজ ওর একান্ত স্নিগ্ধ ফুলের এতো খুশিটা খুব কাছ থেকে দেখবে কিন্তু শাশুড়ী আম্মা সব বরবাদ করে দিলো। মনে মনে বলেমও ফেললো ও শাশুড়ি আম্মাজান আমার বউটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, আমার বউ ছাড়া আমি ঘুমাতে পারবো না। কথা গুলো মনে মনে ভাবলেও সামনা সামনি বলা হলো না, মান ইজ্জত বলে ওতো একটা কথা আছে।

এদিকে পারফির ফাটা বেলুনের মতো মুখশ্রী দেখে শাফিন টিপ্পনী কাটে বললো,

কি হলো মাম্মা মুখ এমন ফাটা বেলুনের মতো করে রেখেছো কেনো?

পারফি চোখ পাকিয়ে তাকালো শাফিনের দিকে কিন্তু কিছু বললো না।

পারফিকে কিছু বলতে না দেখে শাফিন পারফিকে ক্ষ্যাপানোর জন্য গান ধরলো, আহা কি কষ্ট আকাশে বাতাসে।

শাফিনের গান শুনে পারফি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

যদি নিজের কপালে শনি ডাকতে না চাস তাহলে তোর ওই খাডাইশের মতে মুখ বন্ধ কর।

শাফিন শুনলেতো পারফির কথা। টিপ্পনী কেটে এক একটা কথা বলে পারফিকে ক্ষেপাতে লাগলো। এক পর্যায়ে পারফি আর শাফিন মিলে দিলো মারামারি লাগিয়ে। দুই বন্ধু মিলে মারামারি করতে করতে বেডের সব বালিশ কাথা নিচে ফেলে দিলো। এক পর্যায়ে দুজন ক্লান্ত হয়ে বালিশ ছাড়া চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো।

কিছুক্ষণ ছেয়ে গেলো দুজনের মাঝে নীরবতা।

এদিকে পিয়াসা বেগম, শাহানা বেগম, প্রীতি আর ইয়ানা এক সাথে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করলো। তারপর আস্তে ধীরে রাত বারতে সবাই শুয়ে পড়লো। ইয়ানা শাহানা বেগমকে ঝাপটে ধরে শুয়ে রইলো। মনের ভিতর এক ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো। এতো বছর পর মায়ের ভালোবাসা পেয়ে যেনো দুই বছরের বাচ্চা হয়ে গেলো। বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি হয়ে শাহানা বেগমকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো।
চোখজোড়া যখন লেগে আসছিলো তখন হঠাৎ টুং করে একটা মেসেজ আসলো ফোনে। মেসেজের আওয়াজে ঘুম ছুটে গেলো ইয়ানার। এই সময় মেসেজ আসায় বিরক্ত হলো বেশ। ইয়ানা বিরক্ত নিয়ে আবার চোখ বুজতে যাবে তখন আবার টুং করে আরেকটা মেসেজ আসলো।
এতো রাতে কে মেসেজ দিয়েছে ভেবে একরাশ বিরক্ত নিয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন তুললো। ফোন হাতে নিতে ভেসে উঠলো নীলমনি নামে সেভ করা নাম্বারটা ভেসে উঠলো।

নীলমনি নামটা চোখে পড়তে বুকের ভিতর ধড়াস করে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ অপেন করতে বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো।
প্রথম মেসেজটা ছিলো…. বিড়াল ছানা
দ্বিতীয় মেসেজটা ছিলো ঘুমিয়ে পড়েছো?

মেসেজ দুটি দেখে ইয়ানার বুকের ভিতর ধুকপুকানি বাড়তে লাগলো। সাথে চোখজোড়া চিকচিক করে উঠলো। আজ দুটো দিন পর কাঙ্ক্ষিত মানুষটার মুখে বিড়াল ছানা নামটা শুনলো। বলা বাহুল্য মানুষটার মুখে বিড়াল ছানা ডাকটা এই দুইদিন খুব মিস করেছিলো ইয়ানা। দুটি দিন ধরে কাঙ্ক্ষিত মানুষটার জন্য অপেক্ষা করতে রকতে কখন ঘুমিয়ে যেতো টের ও পেতো না। আবার সকালে ঘুম ভাঙলে শুনতো অফিসে চলে গেছে। কেনো যেনো পারফির এতো ব্যস্ততা দেখে মনের ভিতর কোনো অজানা এক অভিমান ভির করেছিলো। পারফির এই মেসেজ দুটো দেখে যেনো তীর তীর করে আবার হানা দিলো মনের মাঝে অভিমান।

ইয়ানার ভাবনার মাঝে ফের আবার মেসেজ করলো পারফি। মেসেজটা ছিলো কিছু বলছো না কেনো? ঘুমিয়ে পড়েছো? নাকি জেগে আছো?

প্রিয় মানুষটার মেসেজ পেয়ে ইয়ানার চোখ ভোরে উঠলো। ছোট করে বললো, জেগে আছি।

ইয়ানার মেসেজ দেওয়ার সাথে সাথে পারফি রিপ্লাই করলো সবাই ঘুমিয়ে গেলে একটু ছাঁদে আসতে পারবে বিড়াল ছানা?

মেসেজটা পড়ে ইয়ানার বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। কেনো যেনো মনে হলে মেসেজটার মাঝে লুকিয়ে ছিলো গভীর আকুলতা। কেনো এতো আকুলতা?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো ইয়ানা কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না, আবার মনে হলো উত্তর খুঁজে পেয়ছে ভাবতেই ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো এক চিতলে হাসি। দুদিনের জমে থাকা অভিমান মুহূর্তের মাঝে গলে পানি হয়ে গেলো। ফেলতে পারলো না কাঙ্ক্ষিত মানুষটার আকুলতায় ভরা ছোট একটা অনুরোধ।

ঠোঁটের কোনো সুপ্ত হাসি নিয়ে রিপ্লাই করলো ১০ মিনিট পর আসছি।

ইয়ানার শেষের এসএমএসটা দেখে পাফির ঠোঁটে ফুটে উঠলো এক অমায়িক হাসি। মনে মনে ভেবেছিলো ওর স্নিগ্ধ ফুল ওর আকুলতা ফেলতে পারবে না আর হলোও তাই, তা দে বুকের ভিতর এক প্রশান্তি কাজ করলো।

অনেক সময় শুয়ে গুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম ধরা দেয় নাই চোখে। দুটো দিন স্নিগ্ধ ফুলের সাথে কথা না বলতে পেরে বুকের ভিতর এক হাহাকার লাগছিলো। আর আজ স্নিগ্ধ ফুলের সবচেয়ে খুশির একটা দিন। এই খুশিটা কাছ থেকে দেখার তিব্র ইচ্ছে জাগলো মনে। কাছ থেকে অনুভব করতে চাইলো প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীর এই সুখ টুকু।

ছাঁদে বসে প্রহর গুনতে লাগলো কখন আসবে ওর বিড়াল ছানা। কখন দেখা মিলবে ওই স্নিগ্ধ মুখশ্রী। শীতের রাত হওয়াতে বেশ ঠান্ডা লাগছে ছাঁদে তবুও সেই ঠান্ডাটা যেনো গায়ে লাগলো না। কোনো এক অজানা ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো মন মস্তিষ্ক।

অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষটা গুটিগুটি পায়ে বিড়াল ছানায় ন্যায় এসে উপস্থিত হলো ছাঁদে। সেই আদুরে বিড়াল ছানা উপর চোখ পড়তে এক ভালোলাগায় টইটুম্বুর হয়ে গেলো বুকের বা পাশটায়।

ইয়ানা ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো পারফির পাশে। ইয়ানার আজ যেনো মনটা একটু বেশি ফুরফুরে। হাস্যজ্জ্বল মুখে একবার তাকালো আকাশে গোল আকৃতির হলদে চাঁদটার দিকে। আজ যেনো চাঁদ টাকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। মন ভালো থাকলে মনে হয় সব কিছুই এক অন্যরকম সুন্দর লাগায় ভোরে ওঠে। এই যে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ওকে দেখতে ব্যস্ত সেওটাও যেনো এক অন্যরকম ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো মন। সাথে আস্তে আস্তে ভীর করতে লাগলো লজ্জারা। রক্তিম হতে লাগলো গুলুমুলু গাল দুটো সাথে নুয়ে গেলো মাথা।। ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো কিঞ্চিৎ লজ্জা মিশ্রিত হাসি।

এদিকে ইয়ানাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো পারফি। আজ যেনো মেয়েটাকে একটু বেশি খুশি লাগছে। এর আগে এতোটা খুশি কখনো দেখেছে বলে মনে হলো না। সাথে মনের ভিতর শান্তি অনুভব করলো স্নিগ্ধ ফুলের এই হাসিখুশিময় মুখশ্রী দেখে। তখন হঠাৎ সেই হাসিখুশি মুখশ্রী আস্তে আস্তে ফুটে উঠতে লাগলো লজ্জায় রাঙা লালআভ রক্তিম মুখশ্রী যা দেখে হার্টবিট মিস করে ফেললো পারফি। বুকের বা পাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলে উঠলো আজ আমি শেষ।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৩

শরিফ শিকারকে এতো খুশি হতে দেখে পারফি বলে উঠলো,

আরে আঙ্কেল ওরুফে শশুর মশাই গুড নিউজ তো আরো একটা শোনা বাকি।

পারফির কথা বলার ধরন দেখে সবাই এক সাথে হেঁসে ফেললো সাথে সবাই উৎসুক চোখে তাকালো নিউজটা শোনার জন্য।

পারফি সবার উৎসুক চাওনি দেখে শাফিনকে কিছু একটা ইশারা করতে শাফিন যেয়ে টিভি অন করলো।

সবাই একরাশ বিস্ময় নিয়ে শাফিন আর পারফির কাজ দেখতে লাগলো।

টিভি অন করতে ভেসে উঠলো এনামুল খানের মুখশ্রী যাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
পারফিদের বিজনেস পার্টনার হিসেবে সবাই মোটামুটি চেনে এনামুল খানকে। তাকে কেনো পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে তা কারো মাথায় আসলো না তখন টিভিতে বলতে থাকা একটা কন্ঠস্বরে ভেসে উঠতে লাগলো কিছু কথা যা শুনে সবাই চমকে উৎসুক চোখে টিভির দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালো।

টিভিতে একটা মেয়ে বলে উঠলো বিজনেসম্যান এনামুল খানের কালোবাজারি কারবার সব কিছু আজ ফাঁস হয়েছে। কালোবাজারি ব্যবসা, মানুষ পাচার আরো নানা ধরনের ক্রাইম কাজের সাথে লিপ্ত ছিলো এনামুল খান। সাথে আরো জানা গেলো রফিক খানের ছোট ভাই এই হলো এনামুল খান। রফিক খানকে অনেক বছর আগে এসব কালোবাজারি ব্যবসায়ের জন্য জেলে বন্দী করা হয়েছিলো কিন্তু ক্ষমতার জোরে সেখান থেকে পালিয়ে পারি জমিয়েছিলো অন্য দেশে। এখন জানা গেলো রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাই মিলে এসব কালোবাজারি ব্যবসা সবার আগোচরে করে বেড়াচ্ছে। এনামুল খানকে ধরা গেলেও রফিক খানের কোনো খোঁজ মেলে নি। পুলিশ হন্য হয়ে খোজ চালাচ্ছে রফিক খানকে খুঁজে বের করার জন্য।
সাথে এরেস্ট করা হয়েছে এনামুল খানের একমাত্র কন্যা মিস এলিজাকে। ধারণা মতে মিস এলিজাও বাবা, চাচাদের সাথে এই কাজে লিপ্ত ছিলো।

সাথে জানা গিয়েছে আরো কিছু গোপন সংবাদ। বিখ্যাত জার্নালিস্ট শরিফ শিকদারের মেয়েকে ছোট বেলা এই রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাই মিলেই অপহরণ করেছিলো। আজ নিজের মুখে শিকারক্তি দিয়েছে এনামুল খান এই কথা। জার্নালিস্ট পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার মিলে রফিক খানের পিতার কালোবাজারি কারবার ফাঁস করে দিয়েছিলো যার জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে শরিফ শিকদারের মেয়েকে জন্মের পর অপহরণ করেছিলো। সাথে চৌধুরী আর শিকদার পরিবারে প্রতিনিয়ত অ্যাটাক ও করে গিয়েছে। সাথে এ ও শিকার করেছে শরিফ শিকদারের আসল মেয়ে আর কেউ না ইসহাক আহমেদের ছোট কন্যা ইয়ানা। যে বর্তমানে টপ বিজনেসম্যান আবরার পারফি চৌধুরীর ওয়াইফ।

আরো জানা গিয়েছে দুই ভাই এর এই কালোবাজারি কারবার বিজনেসম্যান আবরার পারফি চৌধুরী আর শাফিন শিকদার মিলে বের করেছে যার জন্য আইনি বিভাগ এই দুই বিজনেসম্যান এর উপরে কৃতজ্ঞ দেশের এতো বড় ক্রিমিনালকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।

পুরো সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে একে অপরের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার। সাথে প্রতিটা সদস্য অবাক হয়ে তাকালো পারফি আর শাফিনের দিকে। তাদের ছেলেরা মিলে এতো বড় একটা কাজ করেছে তাদের কিছু না জানিয়ে ভাবতেই অবাক হচ্ছে।
সাথে সবাই খুশি ও হলো তাদের এতো বছরের শত্রুরা অবশেষে ধরা পড়েছে এখন শুধু রফিক খানকে ধরার পালা।

সবার হাসিখুশি মনটা আরো অনেক বেশি আনন্দের হয়ে উঠলো নিউজ গুলো শুনে।

শরিফ শিকদার নিজে ইসহাক আহমেদকে ফোন করে আগামীকাল আমন্ত্রণ জানালো তার বাসায়। এই লোকটার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে সারাজীবন। কারণ এই লোকটা না থাকলে হয়তো তার আদরের মেয়েটাকে এমন অক্ষত অবস্থায় বুকের মাঝে ফিরে পেতো না।

সবাই এক সাথে হয়ে হাসিখুশিময় সন্ধ্যা পার করলো। আজ কারো মনে নেই কোনো চাপা কষ্ট। সবাই আজ খুব খুব খুশি। রাতের ডিনারও সবাই এক সাথে করলো। শাহানা বেগম তো মেয়েকে চোখে হারায়। এক সেকেন্ড এর জন্য নিজের থেকে দূরে যেতে দেয় না। নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে সাথে সবার কাছে আবদার ও করেছে আজ মা মেয়ে এক সাথে ঘুমাবে। সবার সম্মতিতে আজ ঠিক হলো শাহানা বেগম, পিয়াসা বেগম, ইয়ানা আর প্রীতি এক সাথে ঘুমাবে। পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদার এক সাথে ঘুমাবে। পারফি আর শাফিন এক সাথে ঘুমাবে।

সবার এই সিদ্ধান্ত শুনে পারফির মুখশ্রী হয়ে গেলো ফাটা বেলুনের মতো। দুদিন ধরে এই ঝামেলার জন্য ওর বিড়াল ছানার বউকে একটুও কাছে পায় নি। সব রহস্য উদঘাটন করার জন্য বেরিয়ে যেতো অনেক সকালে আবার ফেরা ও হতো অনেক রাত করে যখন ইয়ানা থাকতো গভীর ঘুমে। তাই দুটো দিন ধরে বউ এর সাথে দুটো কথা বলার ও সুযোগ হয় নাই আর আজ নাকি পুরো বউ ছাড়া এই থাকা লাগবে ভাবতেই পারফির মুখ হয়ে গেলো ফাটা বেলুনের মতো। কতো শত ইচ্ছে ছিলো আজ ওর একান্ত স্নিগ্ধ ফুলের এতো খুশিটা খুব কাছ থেকে দেখবে কিন্তু শাশুড়ী আম্মা সব বরবাদ করে দিলো। মনে মনে বলেমও ফেললো ও শাশুড়ি আম্মাজান আমার বউটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, আমার বউ ছাড়া আমি ঘুমাতে পারবো না। কথা গুলো মনে মনে ভাবলেও সামনা সামনি বলা হলো না, মান ইজ্জত বলে ওতো একটা কথা আছে।

এদিকে পারফির ফাটা বেলুনের মতো মুখশ্রী দেখে শাফিন টিপ্পনী কাটে বললো,

কি হলো মাম্মা মুখ এমন ফাটা বেলুনের মতো করে রেখেছো কেনো?

পারফি চোখ পাকিয়ে তাকালো শাফিনের দিকে কিন্তু কিছু বললো না।

পারফিকে কিছু বলতে না দেখে শাফিন পারফিকে ক্ষ্যাপানোর জন্য গান ধরলো, আহা কি কষ্ট আকাশে বাতাসে।

শাফিনের গান শুনে পারফি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

যদি নিজের কপালে শনি ডাকতে না চাস তাহলে তোর ওই খাডাইশের মতে মুখ বন্ধ কর।

শাফিন শুনলেতো পারফির কথা। টিপ্পনী কেটে এক একটা কথা বলে পারফিকে ক্ষেপাতে লাগলো। এক পর্যায়ে পারফি আর শাফিন মিলে দিলো মারামারি লাগিয়ে। দুই বন্ধু মিলে মারামারি করতে করতে বেডের সব বালিশ কাথা নিচে ফেলে দিলো। এক পর্যায়ে দুজন ক্লান্ত হয়ে বালিশ ছাড়া চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো।

কিছুক্ষণ ছেয়ে গেলো দুজনের মাঝে নীরবতা।

এদিকে পিয়াসা বেগম, শাহানা বেগম, প্রীতি আর ইয়ানা এক সাথে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করলো। তারপর আস্তে ধীরে রাত বারতে সবাই শুয়ে পড়লো। ইয়ানা শাহানা বেগমকে ঝাপটে ধরে শুয়ে রইলো। মনের ভিতর এক ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো। এতো বছর পর মায়ের ভালোবাসা পেয়ে যেনো দুই বছরের বাচ্চা হয়ে গেলো। বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি হয়ে শাহানা বেগমকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো।
চোখজোড়া যখন লেগে আসছিলো তখন হঠাৎ টুং করে একটা মেসেজ আসলো ফোনে। মেসেজের আওয়াজে ঘুম ছুটে গেলো ইয়ানার। এই সময় মেসেজ আসায় বিরক্ত হলো বেশ। ইয়ানা বিরক্ত নিয়ে আবার চোখ বুজতে যাবে তখন আবার টুং করে আরেকটা মেসেজ আসলো।
এতো রাতে কে মেসেজ দিয়েছে ভেবে একরাশ বিরক্ত নিয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন তুললো। ফোন হাতে নিতে ভেসে উঠলো নীলমনি নামে সেভ করা নাম্বারটা ভেসে উঠলো।

নীলমনি নামটা চোখে পড়তে বুকের ভিতর ধড়াস করে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ অপেন করতে বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো।
প্রথম মেসেজটা ছিলো…. বিড়াল ছানা
দ্বিতীয় মেসেজটা ছিলো ঘুমিয়ে পড়েছো?

মেসেজ দুটি দেখে ইয়ানার বুকের ভিতর ধুকপুকানি বাড়তে লাগলো। সাথে চোখজোড়া চিকচিক করে উঠলো। আজ দুটো দিন পর কাঙ্ক্ষিত মানুষটার মুখে বিড়াল ছানা নামটা শুনলো। বলা বাহুল্য মানুষটার মুখে বিড়াল ছানা ডাকটা এই দুইদিন খুব মিস করেছিলো ইয়ানা। দুটি দিন ধরে কাঙ্ক্ষিত মানুষটার জন্য অপেক্ষা করতে রকতে কখন ঘুমিয়ে যেতো টের ও পেতো না। আবার সকালে ঘুম ভাঙলে শুনতো অফিসে চলে গেছে। কেনো যেনো পারফির এতো ব্যস্ততা দেখে মনের ভিতর কোনো অজানা এক অভিমান ভির করেছিলো। পারফির এই মেসেজ দুটো দেখে যেনো তীর তীর করে আবার হানা দিলো মনের মাঝে অভিমান।

ইয়ানার ভাবনার মাঝে ফের আবার মেসেজ করলো পারফি। মেসেজটা ছিলো কিছু বলছো না কেনো? ঘুমিয়ে পড়েছো? নাকি জেগে আছো?

প্রিয় মানুষটার মেসেজ পেয়ে ইয়ানার চোখ ভোরে উঠলো। ছোট করে বললো, জেগে আছি।

ইয়ানার মেসেজ দেওয়ার সাথে সাথে পারফি রিপ্লাই করলো সবাই ঘুমিয়ে গেলে একটু ছাঁদে আসতে পারবে বিড়াল ছানা?

মেসেজটা পড়ে ইয়ানার বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। কেনো যেনো মনে হলে মেসেজটার মাঝে লুকিয়ে ছিলো গভীর আকুলতা। কেনো এতো আকুলতা?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো ইয়ানা কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না, আবার মনে হলো উত্তর খুঁজে পেয়ছে ভাবতেই ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো এক চিতলে হাসি। দুদিনের জমে থাকা অভিমান মুহূর্তের মাঝে গলে পানি হয়ে গেলো। ফেলতে পারলো না কাঙ্ক্ষিত মানুষটার আকুলতায় ভরা ছোট একটা অনুরোধ।

ঠোঁটের কোনো সুপ্ত হাসি নিয়ে রিপ্লাই করলো ১০ মিনিট পর আসছি।

ইয়ানার শেষের এসএমএসটা দেখে পাফির ঠোঁটে ফুটে উঠলো এক অমায়িক হাসি। মনে মনে ভেবেছিলো ওর স্নিগ্ধ ফুল ওর আকুলতা ফেলতে পারবে না আর হলোও তাই, তা দে বুকের ভিতর এক প্রশান্তি কাজ করলো।

অনেক সময় শুয়ে গুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম ধরা দেয় নাই চোখে। দুটো দিন স্নিগ্ধ ফুলের সাথে কথা না বলতে পেরে বুকের ভিতর এক হাহাকার লাগছিলো। আর আজ স্নিগ্ধ ফুলের সবচেয়ে খুশির একটা দিন। এই খুশিটা কাছ থেকে দেখার তিব্র ইচ্ছে জাগলো মনে। কাছ থেকে অনুভব করতে চাইলো প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীর এই সুখ টুকু।

ছাঁদে বসে প্রহর গুনতে লাগলো কখন আসবে ওর বিড়াল ছানা। কখন দেখা মিলবে ওই স্নিগ্ধ মুখশ্রী। শীতের রাত হওয়াতে বেশ ঠান্ডা লাগছে ছাঁদে তবুও সেই ঠান্ডাটা যেনো গায়ে লাগলো না। কোনো এক অজানা ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো মন মস্তিষ্ক।

অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষটা গুটিগুটি পায়ে বিড়াল ছানায় ন্যায় এসে উপস্থিত হলো ছাঁদে। সেই আদুরে বিড়াল ছানা উপর চোখ পড়তে এক ভালোলাগায় টইটুম্বুর হয়ে গেলো বুকের বা পাশটায়।

ইয়ানা ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো পারফির পাশে। ইয়ানার আজ যেনো মনটা একটু বেশি ফুরফুরে। হাস্যজ্জ্বল মুখে একবার তাকালো আকাশে গোল আকৃতির হলদে চাঁদটার দিকে। আজ যেনো চাঁদ টাকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। মন ভালো থাকলে মনে হয় সব কিছুই এক অন্যরকম সুন্দর লাগায় ভোরে ওঠে। এই যে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ওকে দেখতে ব্যস্ত সেওটাও যেনো এক অন্যরকম ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো মন। সাথে আস্তে আস্তে ভীর করতে লাগলো লজ্জারা। রক্তিম হতে লাগলো গুলুমুলু গাল দুটো সাথে নুয়ে গেলো মাথা।। ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো কিঞ্চিৎ লজ্জা মিশ্রিত হাসি।

এদিকে ইয়ানাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো পারফি। আজ যেনো মেয়েটাকে একটু বেশি খুশি লাগছে। এর আগে এতোটা খুশি কখনো দেখেছে বলে মনে হলো না। সাথে মনের ভিতর শান্তি অনুভব করলো স্নিগ্ধ ফুলের এই হাসিখুশিময় মুখশ্রী দেখে। তখন হঠাৎ সেই হাসিখুশি মুখশ্রী আস্তে আস্তে ফুটে উঠতে লাগলো লজ্জায় রাঙা লালআভ রক্তিম মুখশ্রী যা দেখে হার্টবিট মিস করে ফেললো পারফি। বুকের বা পাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলে উঠলো আজ আমি শেষ।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here