চল তবে শূন্যতা ধরে হাঁটি পর্ব-৪

0
912

#চল তবে শূন্যতা ধরে হাঁটি
Zannatul ferdaous zannat
part:4

অন্তিকে রুমে রেখেই প্রিয়াকে ছুটে যেতে হলো হলুদ অনুষ্ঠনে।
মেয়েটা রুমে একা একাই হাসফাস করতে লাগলো। এই ছেলেটা বারবার কেনো চোখের সামনে আসছে কে জানে।
অন্তি মুখে পানি ঝাপটা দিয়ে মাথাতেও একটু পানি দিলো। আরশানের চেহারাটা চোখের সামনে ভাসছে।
আরশান যথেষ্ট লম্বা। আগের তুলনায় একটু সাস্থ্যও বেড়েছে। এখন যেনো খুব বেশি আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। গাল ভরেছে ছোট ছোট দাড়িতে আর সেই রাগী চোখ। অন্তির যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে।এতোদিন না হয় অন্তি সবটা ভুলে থাকার চেষ্টা করেছে। এখন চোখের সামনে আরশানকে দেখে আবার সব সংযম যেনো হারিয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষন চোখ বন্ধকরে বসে থাকলো অন্তি। এরপর শাড়িটা খুলতে যাবে এই সময় কলিং বেলটা বেজে উঠলো।

বিয়ে বাড়ি। সবাই গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম নিয়ে অনেক ব্যাস্ত। ঘরে এখন শুধু অন্তি।
আচলটা ঠিক করে দরজা খুলেই অন্তি অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,

-কাউকে খুজছেন?
-আমি কি ভেতরে আসতে পারি?

অন্তি এবার মেয়েটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। জিন্স টিশার্ট পড়া একটা মেয়ে। চুলে বয়কাট দেয়া, বা পাশের কানটাতে কালো এয়াররিং লাগানো, হাতে একগাদা ব্রেসলেট, গলায় চোকার। হাব ভাব পুরোটাই ছেলে ছেলে। অন্তি ভেতরে ঢুকতে দেবে কি দেবে না ভাবতে ভাবতেই মেয়েটা বললো,

-তুমি কি অয়ন্তি?অয়ন্তি হাসনাত?
-হ্যা। আমায় চেনো কিভাবে?
-আমি নুন।

নুন নামটা শুনেই অন্তি কিছুক্ষন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো,
-ভেতরে আসো।

নুন কোনো ভনিতা ছাড়াই ঘরে ঢুকে গেলো। আরশানের মুখে এই মেয়েটার কতশত গল্প যে শুনেছে অন্তি তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
অন্তি এখনো কিছু বলছে না। ওর যেনো কথা বন্ধ হয়ে গেছে। নুনকে কি আরশান পাঠিয়েছে? নুন ওকে কিভাবে চিনলো? নুন কি কোনো উত্তর চাইবে আজ? আর অন্তি নিজেও নুনকে দেখেনি কোনো দিন। আরশানের কাছে অনেক বার নুনের গল্প শুনেছে শুধু। অন্তি চিন্তা করতে করতে নুনকে বসতে বলার কথাও ভুলে গেছে।

নুন কোনো সংকোচ না করেই বিছানায় বসে গেলো।
অন্তির দিকে তাকিয়ে নুন বলতে শুরু করলো,

-ভাইয়া সবসময় বলতো তোমার চোখ আর ঠোঁটের উপরের তিলটা সুন্দর কিন্তু কখনও তো বলেনি তোমার ডান পাশে একটা গেজ দাঁত আছে। তোমার চেহারাটা কিন্তু মারাত্মক। আমিতো ছবিতে দেখেছিলাম তোমার মুখটা লম্বাটে। কিন্তু বাস্তবে একদমই অন্যরকম। বেশ মিষ্টি দেখতে তুমি(এক দমে কথাটা শেষ করলো নুন)
-অন্তি নুনের কথা শুনে একটু হাসলো।
-তুমি জানো তোমার হাসিটাও সুন্দর। আর তোমার চুলগুলো। আই উইশ আমার যদি এতো এতো চুল থাকতো তোমার গুলার মতো।

অন্তি নুনের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো
-তুমিও অনেক কিউট।কোন ক্লাসে এবার তুমি?
-এস এস সি শেষ করলাম।জানো আমার একটুর জন্য গোল্ডেনটা কেটে গেলো।
-আহা! মন খারাপ করো না।
-আমি সহজে মন খারাপ করি না।
-বাহ! বেশ তো, তা তুমি আমাকে কিভাবে চিনলে?আগে তো কখনও আমাদের দেখা হয় নি।
-বলবো তবে রাগ করবে না তো?
-বলো, রাগ করবো কেনো?

নুন বলতে শুরু করলো
-আসলে তুমি ভাইয়াকে সহ্য করতে পারো নাতো, তাই যদি ভাইয়ার ব্যাপারে বললে রাগ করো তাই।
-আমি রাগ করবো না। তুমি বলো। (অন্তির মনটাও ছটফট করছে আরশানের খরব শুনতে)

নুন অন্তির হাত দুটো ধরে বললো,

-ভাইয়া কাল যখন প্রোগ্রামে ওই গানটা করছিলো তখনই খটকা লেগেছিলো। এমন গান এমন প্রোগ্রামে বেশ বেমানান ছিলো। তার চোখ অনুসরন করে দেখলাম ও তোমাকে দেখছে। এরপর তুমি যখন উঠে চলে গেলে তখন আরও বেশি সন্দেহ হলো।

আচ্ছা তোমাকে তো ভাবি ডাকার অধিকার নেই তাই আপুই ডাকি। জানো আপু তুমি যখন চলে গেলে ভাইয়াকে ছেড়ে ও কেমন যেনো হয়ে গেছিলো। কারো সাথে মিশতো না। বাসার সবার সাথে রাফ ব্যবহার করতো। এমনকি বাবার সাথেও। যখন ওর খুব মন খারাপ থাকতো, আম্মুর কোলে মাথা রেখে কাদতো।আম্মুও কাদতো।

নুনের কথা গুলো সহজ সাবলীল। তবুও অন্তির বুকের মাঝে প্রতিটা কথা খুব করে আঘাত করছে।
অন্তি এবার নুনের হাত ধরে বললো

-আমি অনেক বড় অপরাধী নুন। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি এমন কিছু চাইনি।

নুন আবার বলতে শুরু করলো
-ভাইয়া তোমার চলে যাওয়ার ধাক্কাটা সামলাতে পারে নি। তখন পর পর দুটো সেমিস্টার ড্রপ করেছিলো। আমরা ভেবেছিলাম ভাইয়া এতোদিনে সবটা সামলে উঠতে পেরেছে..কিন্তু কাল যখন তোমার সাথে দেখা হলো এর পর থেকে ভাইয়ার আচরন কেমন যেনো হয়ে গেছে। অনেকদিন পর কাল রাতে ভাইয়া আম্মুর কোলে মাথা রেখে কেদেছে। আম্মু অনেক কারন জিঙ্গেস করেছে কিচ্ছু বলেনি। কাউকে না বলেই মাঝরাতে বাসাথেকে বেড়িয়ে গেছিলো।

ওর রুমে পোড়া গন্ধপেয়ে আমি আর আম্মু যেয়ে দেখি অনেক গুলো চিঠি আর তোমার একটা ছবি অর্ধেক পোড়া অবস্থায় পরে আছে।

অন্তি এখন আর তার চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না।

নুন অন্তির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো
-আজ আবার ভাইয়াকে দেখলাম তোমার সাথে কথা বলতে। আমার মনে হলো আমার তোমার সাথে কিছু কথা বলা দরকার, আমি জানিনা কেনো তোমার সাথে কথা বলতে আসলাম। শুধু মন বললো তাই। ভাইয়া জানলে হয়তো আমাকে মেরেই ফেলবে।

অন্তি ফুপিয়ে কাদতে লাগলো। আরশানকে দেখে যতোটা স্ট্রং মনে হয়েছিলো অন্তির, ছেলেটা ভেতরে ভেতরে ততটাই ভেঙ্গে আছে। এখনো নিজেকে সামলাতে পারে নি।

নুন অন্তির মুখে হাত দিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো
-কেনো করেছিলে এমনটা বলো আপু? আমার তোমাকে দেখে কেনো যেনো অনেক ইনোসেন্ট লাগছে। বলোনা কেনো করেছিলে? আমার ভাইটাকে একা ফেলে কেনো গেছিলে?

অন্তি চুপটি করেই থাকলো। চোখের পানিটা মুছে নুনের দিকে তাকিয়ে বললো
-থাকনা সেসব কথা, নুন যা চলে গেছে তা নিয়ে না ভাবাই ভালো।
-কিন্তু আপু আজ আমি সবটা জানতে চাই।
-নুন আমি বলতে পারবো না(অন্তি মিনতি করে বললো)
-কিন্তু,

নুন আবার বললো
-বলবে না তো। ভাইয়ার কসম। এবার বলো। আমি জানি তুমি এবার চুপ থাকবে না। বলো।

অন্তি অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকলো নুনের দিকে।

নুন আমি চট্টগ্রাম যাওয়ার পর আমাদের একদমই দেখা করা বন্ধ হয়ে গেলো। আর রোজ ওয়াশরুমে লুকিয়ে দুয়েক মিনিট কথায় যেনো আমরা দুজনই হাপিয়ে উঠেছিলাম। সম্পর্কটা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছিলো দিন দিন। টুকিটাকি কথায় ঝগড়া লাগতো। কিন্তু কেউ কাউকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতাম না।
আমাদের মাঝে সেদিনও ঝগড়া হলো। আমি ওকে সময় দিতে পারিনা, ঠিক ভাবে কথা বলতে পারিনা এসব নিয়েই কথা কাটাকাটি।ফোনটা অফ করে টেবিলে বইয়ের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলাম। তবে ভাগ্য খারাপ হওয়ার ধরা পরে গেলাম।
জানো নুন সেদিন জীবনের প্রথম আব্বু আমার গায়ে হাত তুললো। অনেক অনেক মেরেছে আমায়।(অন্তির কান্নার জন্য কথা গুলো খুব অস্পষ্ট শোনাচ্ছে)

রাতে আব্বু ফোন অন করে আরশানকে কল দিয়ে লাউড স্পিকার অন করে আমার হাতে ফোন দিলো। আর আরশানকে বলার জন্য শিখিয়ে দিলো কিছু কথা।আমি বলতে চাইনি। তবে আমাকে বাধ্য করা হলো।

আমার এখনো আরশানের বলা কথা গুলো কানে বাজে। ওকে যখন ছেড়ে যাওয়ার কথা বললাম, ওর আকুতি গুলো এখনো আমাকে ঘুমাতে দেয়না নুন।

নুন অন্তিকে হালকা জড়িয়ে ধরলো। অন্তি আবার বলতে শুরু করলো।

-এরপর তিনদিন ফোনটা অন রেখে আব্বুর কাছেই রাখলো। এর মাঝে আরশান হাজার বার কল করেছে। ওই তিনটা দিন আমি ওয়াশরুমে গেলেও আম্মু আমার সাথে থাকতো। আর তিনদিন পর আবার আমাকে দিয়ে আব্বু আরশানকে বলালো “যেনো আমাকে ও আর বিরক্ত না করে”। ফোনটাও আব্বু ভেঙ্গে ফেললো।
তিনদিন ফোন অন থাকলেও রিসিভ না করায় আরশানও এটা ভাবলো না যে আমি ধরা পরে গেছি, বরং এটাই মনে করলো যে আমি ইচ্ছা করে ওকে ছেড়ে এসেছি।

এরপর আব্বু করা গলায় বললো, “আমাকে বাবা ডাকতে হলে সব কিছু ভুলে যেতে হবে। আর সব কিছু নিয়ে থাকতে চাইলে আমাকে মেরে যেতে হবে”।

জানো নুন সেদিন আমার আর কিছু করার ছিলো না। মনটা ছটফট করছিলো আরশানের জন্য, আর শরীরটা বন্দি ছিলো আমার পরিবারে। বাসা থেকে সব ফোন সরিয়ে ফেলা হলো। আর আমাকে বন্দি করে রাখা হলো। কয়েকদিন তো কেউ আমার সাথে কথাও বলে নি। এমনকি আমার ছোট ভাই রুশ্যও না। ওকে কি বলবো আমার আম্মু নিজেও আমায় খাবার জন্যও ডাকে নি।
যখন একদম একা হয়ে গেলাম তখন সব কিছু আমার কাছে অনর্থক লাগছিলো।
আমি সুইসাইড করার চেষ্টা করলাম।
(অন্তি ওর হাতের উপর কাটা দাগটা দেখালো)
কিন্তু ভাগ্য এতোই খারাপ যে মরলাম না।

এরপর অন্তি আর কিছু বলতে পারলো না। হেচকি উঠিয়ে কাদতে লাগলো।

নুন অন্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজেও কেদে দিলো। ওর নিজেরও খুব কষ্ট লাগছে। ওর এটা ভেবে খারাপ লাগছে যে, ও ভেবেছিলো আরশান একা কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু অন্তিও কম কষ্ট সহ্য করেনি। আরশানকে সাপোর্ট করার জন্য ওর পরিবারের সবাই ছিলো। বন্ধুরা ছিলো কিন্তু অন্তি ছিলো একা। কতোটা কষ্ট সহ্য করেছে। আর ধৈর্য্যের বাধ ভেঙ্গে যেতেই মরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।

নুন অন্তিকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
-আমাকে মাফ করো আপু। আমি তোমায় ভুল বুঝেছি।
অন্তিও নিজেকে স্বাভাবিক করে একটু শান্ত হয়ে বসলো।

নুন বললো
-আপু ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।ভাইয়া রাজি হয়ে গেলেই বিয়ে।

অন্তি মুহূর্তেই কথাটাকে হজম করতে পারলো না।ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকলো।

নুন বললো
-আপু আমার মনে হয় ভাইয়ার ভুলটা ভাঙ্গানো উচিত।
-কি হবে এতে? আমি চাই ও আমাকে ভুলে থাকুক।আমার পরিবার কোনোদিনও ওকে মেনে নিবে না। আরশান নামটা আমার বাবা একদম সহ্য করতে পারে না।
-ভাইয়া ভালো জব করলেও না?
-না। সম্পর্ক মেনে নেওয়ার মতো মেন্টালিটি নেই এই ফেমিলিতে। তার থেকে ও যদি দূরে থাকতে পারে থাকুক। আমি চাইনা ওর ভুল ভেঙ্গে যাক।
ও আমাকে মাফ করে দিলে আমি ওর থেকে দূরে থাকার শক্তি পাবো না, তার চেয়ে এই ভালো। নতুন করে কষ্ট বাড়াতে চাই না।

নুন আর কিছু বলতে পারলো না।
অন্তি আবার বললো
-নুন তুমি তো তোমার ভাইয়ার ভালো চাও তাইনা?
-হ্যা।
-আমায় ছুঁয়ে কথা দাও এর একটা কথাও তুমি ওকে জানাবে না। ও যতো দূরে থাকবে ততো ওর জন্য ভালো।
-কিন্তু,
-.ওকে পেতে গেলে আমার পরিবার হারাতে হবে। এটা আমি কখনও পারবো না। আর আমি ওকে ভালোবাসি। ওর খারাপ পরিনতিও আমি সহ্য করতে পারবো না। ও যদি সত্যটা জানে, ও আমাকে আবার চাইবে। তখন ফিরিয়ে দেওয়াটার ক্ষমতাটা আমার থাকবে না। আবার আমার পরিবারও ছাড়তে পারবো না।
অন্তির কথা গুলো নুন চুপচাপ শুনলো।

অন্তির গালে হাত রেখে বললো
-তুমি অনেক ভালো। আমি চাই তোমরা দুজনই যেভাবেই থাকো ভালো থাকো। আমার বন্ধু হবে?
-নুন বন্ধুত্বটা খুবই অনর্থক।
-তবুও।
-হুম।

হঠাৎই প্রিয়া রুমে এসে বললো
-অন্তি আপু মামা তোকে ডাকছে, জলদি আয়।

অন্তি আর নুন দুজনই প্রিয়াকে দেখে চোখ মুখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে বসলো।
প্রিয়া বললো,
-ওই মেয়েটা কে?
-ওকে তুই চিনবি না।আমার এক ফ্রেন্ড এর ছোট বোন।

কেউ আর কিছু বললো না। অন্তি পাঁচ মিনিটের মাঝেই শাড়ি পালটে একটা কালো কামিজ পরে বেড়িয়ে পড়লো প্রিয়া আর নুনের সাথে।

পুনমের কিছু বান্ধবি ডান্স পারফর্ম করছে। বেশ নাচে মেয়ে গুলো। শাড়ি পড়েও এতো ভালো নাচতে পারবে ওরা অন্তি এটা ভাবতেই পাড়ে নি। পুনমের বেশির ভাগ বান্ধবি বেশ মোটা। তাই অন্তি এমনটা ভাবলেও এখন ও ভালো করেই বুঝলো মোটা হলেই যে নাচতে পারবে না এমন কিছু নেই।

অন্তির পাশে এসেই মিসেস আহমেদ দাড়িয়ে বললেন
-মেয়ে গুলো কিন্তু বেশ নাচতে পারে।
-অন্তি মিসেস আহমেদকে দেখে বললো”জ্বী আন্টি”।
-তোমার বিড়াল ছানাটা কোথায়?
-পিহু আজ রুশ্যর কোলে।আমি শাড়ি পড়ে ওকে সামলাতে পারি না তো তাই ওকে দিয়েছিলাম।
-ওহ। তোমার বিড়ালটা খুব সুন্দর।

অন্তির আর মিসেস আহমেদের সাথে কথা বাড়াতে ইচ্ছে করলো না, তাই হ্যা না কিছু না বলেই নাচ দেখতে ব্যাস্ত।

মিসেস আহমেদ আবার বললেন
-এই মেয়ে তুমি কিন্তু বেশ ঘর কুনো। একটু সবার সাথে সাথে থাকবে। দেখবে বেশ লাগছে।

অন্তি কিছু বলতে যাবে এমন সময় অন্তি মা এসে মিসেস আহমেদ কে নিয়ে গেলেন আর অন্তিকে বললেন”অন্তি আমি বাসায় যাচ্ছি, তোমার বাবা রাতের ট্রেনে চট্টগ্রাম ব্যাক করবেন তাই আমি একটু গুছিয়ে দিয়ে আসি। তুমি প্রিয়ার সাথে সাথেই থেকো।”

নাচের কিছুক্ষন বিরতি রেখে সাবাই রাতের খবারটা সেরে নিলো এর মাঝেই। মাঠের একপাশে কিছু টেবিল চেয়ার বিছিয়ে খাবার খাওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
অন্তি খাওয়ার শেষে প্রিয়ার সাথে এক কোনে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎই হাই বিটের গানের সাথে নাচ শুরু করলো কয়েকটা ছেলে। বিটের তালেতালে একবার মরিচবাতি গুলো জলছে আবার নিভছে। মুহূর্তে ই সবটা আলোকিতো হচ্ছে। মুহূর্তেই আধার, সবাই বেশ উপভোগ করছে।

অন্তি আর কিছুক্ষন থেকে প্রিয়াকে বলে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য। মাঠ থেকে অনেকটা দূরে এসে বাসার কাছাকাছি আসতেই কেউ যেনো অন্তির হাত টেনে এনে দেয়ালের সাথে অন্তিকে চেপে ধরলো। এদিকটা মোটামুটি অন্ধকার আর বাসার পিছনের সাইড হওয়ায় রোড সাইডের লাইটের আলোও পড়েনা এদিকে। তবে বাসায় সাজানো মরিচ বাতি গুলোর হালকা আলোয় অন্তি ঠিক বুঝতে পারলো মানুষটা আরশান।

অন্তি আরশানের থেকে হাত ছাড়িয়ে চলে আসতে চাইলে আরশান অন্তিকে দেয়ালের সাথে আরও শক্ত করে আটকে ধরলো।

আরশান বললো
-ভয় পাও কেনো আমায়?
-অন্তি স্বাভাবিক গলায় বললো, ভয় পাওয়ার কি আছে।
-চলে যাচ্ছো যে।
-কেনো থাকবো
-আমার কাছে কেনো থাকতে চাওনা?

অন্তি আর কোনো জবাব দিলো না। নিজেকে মনে মনে শক্ত করে নিয়ে জবাব দিলো
-আমার ভালো লাগে না তাই। আর তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আশা করি ওই মেয়েকে নিয়েই সুখি থাকবে। আমাকে যেতে দাও।
-অন্তি আমি তো ভুলে গেছিলাম। কেনো আসলে?কেনো? কেনো কাল ওভাবে আমার দিকে তাকালে। তুমি জানো তোমাকে ভোলার জন্য আমি কতোগুলা রিলেশন করছি। অনেক গুলা। দুই হাত প্রশস্থ করে দেখিয়ে বললো-এত্তোগুলা

অন্তি এতোক্ষনে বুঝে গেছে আরশান মাতাল। ও নেশার ঘোরে এসব বলছে। এতোটা অবনতি হয়েছে ছেলেটার। অবশ্য এর জন্য অন্তি দ্বায়ী তা অন্তি ভালো করেই জানে।

অন্তি কড়া গলায় বললো
-শান সড়ো তুমি। আমাকে যাতে দাও।
-কেনো দেবো?
-শান তোমার হবু বউ দেখলে বাজে ভাববে।
-ও এখানে আসবে কোথা থেকে? জানো অন্তি ও সবসময় তোমার মতো হতে চায়। এই জন্যই সৃজাকে আমার দেখতে ইচ্ছা করে না। ওকে আমি এটাই বোঝাতে পারিনা যে তুই এমা ওয়াটসন হ আমার আপত্তি নাই কিন্তু অন্তি কেনো হতে যাবি? অন্তি তো অন্তি। ওর মতো হতে চাইলেই কি হওয়া যায়? ও তো মেঘবতী, বৃষ্টি কন্যা। জানো ওকে যদি সারাদিন পানিতেও চুবিয়ে রাখা হয় না কেনো ওর মাঝে সেই স্নিগ্ধতা টা আসবে না।

আরশান আবোল তাবোল একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে। আর অন্তির ভয় লাগছে কেউ এভাবে ওদের দেখলে কি ভাববে। তাছাড়া আরশানকে কিভাবে এখান থেকে সরাবে এই সব চিন্তায় যেনো অন্তির মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে আর সাথে আছে আরশানের সেই স্পর্শ যা অন্তির স্নায়ুগুলো কে অবশ করে দিচ্ছে। আরশানের এই পাগলামি গুলো অন্তির মনটাকেই না অসংযমী করে তুলে!

বেশ কিছুক্ষন পরই আদ্র আরশানকে দেখে দৌড়ে আসলো। অন্তিও অপ্রস্তুত হয়ে গেছে আদ্রকে দেখে। কেননা এতোক্ষনে আরশান অন্তিকে জড়িয়ে ধরেছিলো। আদ্র আর সাদান আরশানকে ধরে অন্তিকে ছাড়িয়ে নিতেই অন্তি একছুটে বাসায় চলে গেলো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here