কোন সুতোয় বাঁধবো ঘর পর্ব ২২

0
190

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২২

‘লাবিবার মাথার পাশে বসে আছে ইরহা৷ দ্রুত হসপিটালে নিয়ে আসার৷ কারনে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
ইরহা নরম কন্ঠে বললো, এইটুকুতেই তুই জীবন শেষ করে দেয়ার ডিসিশন নিলি! অথচ আমাকে দেখ এরচেয়ে কত খারাপ সিচুয়েশন পার করেছি৷ তখন মনে হতো আমার সাথে কেন এসব হচ্ছে! আমার সাথে তো এসব হওয়ার কথা না। আমি কতটা যন্ত্রণা সহ্য করে টিকে আছি কল্পনাও করতে পারবি না।এতো কষ্টের মধ্যেও কখনো নিজেকে শেষ করে দেবো এই চিন্তাটা আসেনি। আসলে কি জানিস, তোদের এই জেনারেশনটাই এমন, কথায় কথায় সু’ই,সা’ড। ‘তোদের কাছে জীবনটা মূল্যহীন তাই না? ভাালোবাসার মানুষকে পেলাম না আমার জীবন রেখে কি হবে? অথচ যে নিজেকে-ই ভালোবাসতো পারে না সে আবার অন্যের ভালোবাসার জন্য জীবন দেয়!বাবা কটু কথা বললো,মা শাসন করলো,বোন বকাঝকা করলো, এটা দিলো না ওটা পেলাম না। ব্যাস ঝুলে পরে নয়তো কোন না কোন ভাবে নিজেকে শেষ করেই দেয়। এটাই কি সমাধান?যারা এতো বছর ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখলো, তাদের ভালোবাসার কোন মূল্য নেই!
‘লাবিবা চুপ করে সব শুনে যাচ্ছে……
জীবনে এমন কিছু মূহুর্ত আসে,যখন অনেক কিছু বলার থাকলেও সেসব শব্দ হয়ে বের হয়না।সবটা বুঝেও আমরা চুপচাপ মেনে নেই, মানিয়ে নেই। তর্কে যাই না।এটা ঠিক, এটা ভুল এই কথাটুকুও বলতে ইচ্ছে করে না। আমরা নিশ্চুপ হয়ে যাই পুরোপুরি। বাকশক্তি থাকার পরেও যেনো আমরা বাকহীন।

এই মূহুর্তে লাবিবারও কিছু বলার ভাষা নেই।

ইরহা উঠে আসলো,নওশাবাকে নিয়ে সে এখন বাসায় চলে যাবে৷ বাকীরা সকালে আসবে। হসপিটালের গেটে এসে থমকে গেলো৷ এতো রাতে কি করে যাবে!তারচেয়ে থেকেই যাবে রাতটুকু।
রাত তখন প্রায় তিনটে হসপিটালের বাহিরের এক বেঞ্চে মেয়েকে নিয়ে বসলো। আকাশে পূর্ন চাঁদ, তারার সমারোহ, চারপাশে লাইটিং আরো কত কিছু আর কত আয়োজন এতো সব কিছুর মধ্যেও ইরহার বুকে এক আকাশ শূন্যতা। ইরহা মনে মনে বলছে….. এই তীব্র কষ্টে আমার একটা জড়িয়ে ধরে কাঁদার মত বক্ষ নেই। এই যে ইচ্ছে করছে কাউকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদি,কিন্তু আমার যে আমি ছাড়া কেউ নেই।
মানুষ যতই বলুক একাকীত্ব সুন্দর, তবুও নিজের একটা মানুষ লাগে।যার কাছে দিনশেষে নিজেকে খুচরো পয়সার মত জমা রাখা যায়।এই হাহাকার শোনার মত কোন মানুষ নেই।চোখের পানি মুছে দিয়ে বলবে,আমি আছি তো এতো চিন্তা কিসের এমন মানুষের শূন্যতা আমার এ জনমে আর ঘুচবে না।
নওশাবার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,আমি খুব সাধারণ একটা মেয়ে,আমার স্বপ্নগুলোও ছিলে খুব ছোট, ছোট। কিন্তু কখনো ভাবিনি সেই ছোট স্বপ্নগুলো কোনদিন পূর্নতা পাবে না। তবে তোর ছোট,বড় সব স্বপ্ন আমি পূরণ করবো। আমি যা সহ্য করছি, সে আঁচ তোকে লাগতে দিবো না।
‘একজন নাইট গার্ড এসে বলে,এখানে রাতে থাকা যাবেনা। আপনি বরং পেশেন্টের কাছে যান। ইরহা উঠে হাঁটা শুরু করলো।


রুবেলের মেসেজ দেখে রবিন জোড়ে জোড়ে পাগলের মত হাসতে লাগলো। রাস্তায় সময় নষ্ট না করে দ্রুত বাসায় আসলো। মনের মধ্যে পৈশাচিক আনন্দ। বাসায় ঢুকে লামা, লামা বলে ডাকতে লাগলো। লামার উত্তর না পেয়ে নিজেই রুমে আসলো। লামা হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছে। রবিন কোন কিছু না জানার ভান করে লামার কাছে এসে বলে,কি হয়েছে বাবু? পিরিয়ড তাই পেটে ব্যাথা।
‘এই মূহুর্তে রবিনের এমন স্বান্ত আচরণ লামার মনের মধ্যে ভীতি তৈরি করলো। লামা ভয়ে মাথা তুলছে না।
রবিন লামার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,আমাকে বলবা তো জান কি সমস্যা হচ্ছে।
‘লামা রবিনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। রবিনের ইচ্ছে করছে এই মূহুর্তে লামাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে কিন্তু সে তা করবে না। তার পরিকল্পনা আরো ভয়ংকর।
‘কান্না বন্ধ করে আমাকে বলো কি হয়েছে।
‘আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে রবিন’ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। জানি এই ভুলের ক্ষমা নেই তবুও ক্ষমা করে দাও সারাজীবন তোমার গোলাম হয়ে থাকবো।
‘আহা বাবু তুমি হলে রানী তুমি গোলাম কেন হতে যাবে। বলো আমাকে হয়েছেটা কি?

লামা কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের ফোন থেকে ভিডিও অন করে দেখালো।
‘রবিন বলে এই সামান্য সমস্যার জন্য তুমি এভাবে কান্নাকাটি করছো!এসব যে ফেইক ভাবে বানানো যায় আমি জানি। যাও তো উঠো ফ্রেশ হয়ে আসো,কাচ্চি নিয়ে এসেছি দু’জনে গরম, গরম খাবো।
লামা মূহুর্তের মধ্যে হেসে বলে,আমি জানতাম তুমি বুঝবে এসব ফেইক। তোমার বন্ধুরা আমাকে বাজে প্রস্তাব দিয়েছিল, আমি রাজি হইনি তাই আমার মান সম্মান নষ্ট করার জন্য এসব করেছে৷
‘বাদ দাও যাও ফ্রেশ হও খেয়ে ঘুমাতে হবে সকাল আটটার টিকিট কেটেছি আমরা কাল কক্সবাজার যাচ্ছি সব কিছু গোছাতে হবে তো।
সুন্দর ভাবে খেয়ে সব কিছু গুছিয়ে লামাকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।নারীর ছলনা যেমন ভয়ংকর তার চেয়ে বেশি ভয়ংকর পুরুষের প্রতিশোধ।

✨বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙলো রাতুলের,চোখ খুলেই ফোন অন করে দেখে অনেকগুলো মিসডকল। রাতুল দ্রুত কল ব্যাক করতেই ওপাশ থেকে লাবিবার ফ্রেন্ড রাতের ঘটনা খুলে বলে। রাতুল দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরে৷

জারিফ আজ বেশ ভোরেই বের হয়েছে আজকে একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে। মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে বসে রাতুল কে কল করলো।
বেশ খানিক ক্ষন পর রাতুল কল রিসিভ করে বলে,ভাইয়া লাবিবা সু’ই’সা’ইড করেছিল।সব দোষ আমার এসব আমার জন্য হয়েছে ভাইয়া৷
‘রিলাক্স লাবিবা এখন কোথায়? আর তুই কোথায়?
‘আমি লাবিবাকে দেখতে ওদের বাসায় যাচ্ছি তুমিও আসো। বলেই কল কেটে দিলো৷
জরিফ নিজেও দ্রুত বের হয়ে গেলো। জারিফ ভাবছে লাবিবা হয়তো আর বেঁচে নেই। জারিফের মায়া হচ্ছে ছোট বাচ্চাটার জন্য। মনে, মনে বলে,কালকেই কত ইগো দেখালো আর আজ সু’ই’সাইড! নিজের মেয়েটার কথা তো ভাববে ইশশ বাচ্চা মেয়েটা।


আজকে ইরহার জয়েনিং সবার সাথে বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে ফ্রীজ থেকে পাউরুটি বের করে কোনমত একটা খেয়ে নওশাবাকে আদর করে বের হয়ে গেলো৷
নাদিম লাবিবার সাথে কোন কথা বলেনি৷নিজের বোনদের ভালোবাসায় কোন ত্রুটি রাখেনি। যখন যা চেয়েছে নিজের সাধ্য মত তখন তাই এনে হাজির করেছে।

নিশাত নাদিমের কাঁদে হাত রেখে বলে,ছোট মানুষ ভুল করে ফেলেছে রাগ না করে বুঝিয়ে দাও। তাহলে ভুলটা বুঝতে পারবে।

নাদিম নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলে,জানো এক মূহুর্তে জন্য আমার পৃথিবী থমকে গিয়েছিলো। ছোট বেলা থেকে কোলে পিঠে করে আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছি। কখনো কোন ইচ্ছে অপূর্ন রাখিনি আর সেই বোনকে মৃত্যুর মুখে দেখে আমার কি অবস্থা হয়েছিলো একবার বুঝো।
‘শোন বয়স কম তো তাই আবেগে গা ভাসিয়ে এমন উদ্ভট কাজ করে ফেলেছে। এবার বুঝিয়ে বলে দাও আর জীবনে এমন কাজ করবে না।

‘ফরিদা বেগমও একটাও কথা বলেনি, লাবিবার সাথে।মানুষ বলে আদরে বাঁদর তৈরি হয় আজ তার তাই মনে হচ্ছে। পরিবাবের সবার নয়নের মনি সবাই ওকে বেশি ভালোবাসতো কারণ ও বাবার আদর পায়নি৷ আর সেই মেয়ে কিনা এমন একটা কাজ করলো!
লাবিবা নিজের মায়ের হাতের উপর হাত রেখে বলে,ওমা’ মা’ আমাকে ক্ষমা করে দাও আর কখনো এমন ভুল হবে না। মা’শেষ বারের মত আমাকে ক্ষমা করে দাও।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here