এক_চিলতে_রোদ বোনাস_পর্ব

0
2321

এক_চিলতে_রোদ বোনাস_পর্ব
#Writer_Nondini_Nila

ইহান ঊষা কে খাইয়ে বাসায় চলে এসেছে। ফ্রেশ হয়ে সোজা এয়ারপোর্টে যাবে।সেখানে থেকে ফারিয়ার বাবা মাকে আনতে।
ফারিয়াকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ও ঘুম থেকে উঠার আগেই আনতে পারবে। ঊষার কাছে ইমা আছে।
ইহান ফারিয়ার বাবা মাকে নিয়ে বাসায় আসলো এগারোটায়। তারা এসেই মেয়ের জন্য পাগল পায়। আমি রাস্তায় সব বলে এনেছি এজন্য ফারিয়ার মা গম্ভীর হয়ে আছে। কিন্তু তার বাপের কোন হেলদোল নাই‌। মেয়ে বলতে অজ্ঞান তিনি এসব তার কাছে ম্যাটার করে না।
ফারিয়াকে ডেকে আনলো লতা। ফারিয়া তাদের কাছে আসতেই আচমকা ফারিয়ার মা মেয়ের গালে চর মেরে বসলো। ফারিয়া সাথে সাথে কেঁদে উঠলো আর ফারিয়ার বাবা চিৎকার করে ফারিয়ার মাকে ধমক দিলো,

‘ তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত তুললে?’

‘ হ্যা তুললাম। আর ও তোমার একার মেয়ে না আমার ও মেয়ে। তাই আমি ওকে মারতেই পারি।ও যা করেছে সেটার কাছে এসব কিছুই না‌।’

দুজনের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেলো।লতা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা। কি সব ইংরেজিতে গড়গড় করে বলে যাচ্ছে। দিহান দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে এই ভয়ংকর মেয়েকে দেখেছে।( ওর কাছে ভয়ংকর মেয়েটা হলো ফারিয়া।)
কালকে ওর সামনেই তো সব ঘটলো। মেয়েদের এতো তেজ কালকেই ফাস্ট দেখেছে। তখন থেকেই ওর বুক কাঁপছে।
এইতো কালকেই তো এই বিদেশি মেয়েকে নিয়ে কতো কিছু ভেবেছিলো আর এখন এটাকে দেখলেই ভয়ে মিইয়ে যাচ্ছে।

লতার চোখ গেলো দিহানের দিকে। ও তীক্ষ্ণ চোখে দিহানের দৃষ্টি মিলাচ্ছে। দিহান রুমে থেকে খুব কম বের হয়। কারো সামনে কম আসে। খালি খেতে আসে এখন দূরে দাঁড়িয়ে ফারিয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

দিহান চোখ সরিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।ওই খানে গেলে যদি আবার ওর খারাপ কথা বলে দেয় না না থাক।
ফারিয়া জেনে গেছিলো ওর যে খারাপ নজর আছে ঊষা উপর। তাই ও ফারিয়াকে ভয় পায়। যদি বলে দেয় ইহান তো আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে।

ইহান তাদের ঝগড়া অনেক কষ্টে থামিয়ে বললো,

‘ আপনারা এখন রেস্ট নেন। অনেকটা জার্নি করে এসেছেন!’

বলে লতার দিকে তাকিয়ে বললো তাদের কোন রুমে নিয়ে যেতে হবে।

ফারিয়ার মা বললো,’ আমাদের তিনটায় ফ্লাইট আছে। এখন একটু রেস্ট নেই। না হলে আবার জানি করতে পারবোনা।’

‘আজকে চলে যাবেন?’

‘ হুম।’

‘এতটা পথ এসে একদিনের না চলে গিয়ে দুদিন থেকে যেতে পারতেন!’

‘এতকিছুর পর তোমাদের এখানে থাকাটা মানায় না। তুমি আমাদের ক্ষমা করে দিও আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু কিভাবে যে চলে এলো।’

‘আন্টি আপনি কেন ক্ষমা চাইছেন আপনার এখানে কোন দোষ নাই?’

‘আমাদেরই দোষ আমরাইতো সন্তান মানুষ করতে পারি নাই! একটা মাত্র মেয়ে আমাদের এজন্য বেশি আদরে তাকে বাঁদর বানিয়ে ফেলেছে। না হলে এসব করে কিভাবে?’

আমি আর কিছু বললাম না তারা নিজেদের রুমে চলে গেল। দুপুরের খাবারটা তাদের নিজে দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়ালো। ইহান কিছু খেলো না।
ফারিয়া কিছুতেই যাবে না যাওয়ার সময় পাগলামি ইহানকে ছাড়া কিছুতেই যাবে না।
মেয়েকে পরপর আরো দুইটা থাপ্পড় মারলেন ফারিয়ার মা।গাড়িতে উঠার পর আমি ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা কথা বলেছি।

‘আমি তোমাকে বলেছিলাম আমরা ভালো ফ্রেন্ড হয়ে থাকবো সারা জীবন। কিন্তু আমি তুমি তোমার ব্যবহারে সেইটা ও হাড়ালে।’

ফারিয়া তার অশ্রুসিক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কাদচ্ছিলো শুধু। গাড়িতে মিলিয়ে যেতে আমি বেরিয়ে গেলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে। একা বাসায় পড়ে রইল দিহান আর লতা।

লতা পেছনে এসে বললো,
‘ যাক শাকচুন্নী বিদায় হয়েছে। আর ঊষাকে কষ্ট দিতে পারবে না শয়তানি।’

বিরবির করে বকে ভেতরে আসতে যাবে তখন গেটের বাইরে ওর বয়ফ্রেন্ড দেখে চমকে উঠে। দরজা বাইরে থেকে আটকে লজ্জায় কাঁচুমাচু মুখ করে এগিয়ে আসে।

দিহান উপর থেকে সব খেয়াল করলো। শেষ পর্যন্ত এটাও চলে গেলো। রাগে ও দেয়ালে আঘাত করলো।

বিকেলে ভাইয়া এলো আমি ওই অবস্থায় ও উঠে চাচির কাছে বসে আছি। আহারে কি অবস্থা হয়েছে? চাচির দিকে তাকিয়ে আছি চাচি কিছু বলছে না চুপ করে বসে আছে। একটু পর পর আমার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। ইহান আগে মায়ের কাছে এসে এখানে ঊষাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।

‘ ঊষা তুই এখানে কেন?’

আমি চমকে পেছনে ফিরে তাকিয়ে ভাইয়াকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।

আমি ঢোক গিলে বললাম, ‘ চাচির জন্য মন কেমন করছিলো তাই দেখতে এলাম।’

‘ এই জন্য তোর উপর আমার এতো রাগ হয়। তোর নিজের‌ই এই অবস্থা তার উপর আবার আরেকজন কে দেখতে চলে এসেছিস।’

আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। ভাইয়া রেগে আমার কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে দাড় করিয়ে বললো,

‘ চল এখনি।’

‘ আমি ওতোটা অসুস্থ না আমি ঠিক আছি একদম।’

‘ তোর থেকে আমি কিছু জানতে চাইনি।’

বলে জোর করে আমাকে আমার কেবিনে নিয়ে এলো।

আমি গাল ফুলিয়ে বসে আছি। ভাইয়া আমার পাশে বসে বললো,

‘ একদম গাল লাল করে ফুলিয়ে বসে থাকবি না।’

আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছি। ভাইয়া ফট করেই আমার গালে চুমু দিয়ে বসলো। আমি চমকে উঠে রেগে তাকালাম।

‘ রাগছিস কেন? এইভাবে কিউট করে রাগ করলে আমি এই সব‌ই করবো। আরো অনেক কিছু করতে পারি যেমন…

ভাইয়া আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলল। আমি চমকে ঠোঁটে হাত দিয়ে ফেললাম,,

‘ একদম কাছে আসবে না আমি অসুস্থ।’

ভাইয়া আমার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,

‘ কিহহ তুই অসুস্থ?’

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।

‘একটু আগে না বললি তুই এখন ঠিক আছিস।’

আমি নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেছি বুঝতে পেরে বোকা চোখে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমার দিকে নিজের মুখ এগিয়ে আনছে। তখন দরজায় কারো শব্দ শুনে চমকে ভাইয়া উঠে দাঁড়ালো।

তাকিয়ে দেখি নার্সটা দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে বড়সড় চোখ করে।

আমার লজ্জা মাথা কাটা গেল। আমি লজ্জা নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।

উনি এগিয়ে এসে বললো,

‘ এই ঔষধ টা খুব ইম্পর্টেন্ট তাই এই অসময়ে ও আসতেই হলো ভেরি সরি।’

বলেই ঔষধ এগিয়ে দিলো আর পানি আমি ওনার কথা শুনে আরো লজ্জায় নূইয়ে গেলাম। ঔষধ খেতেই উনি যেভাবে এসেছিলো সেভাবে চলে গেলো।

ভাইয়া আবার আমার পাশে বসলো আমি বললো,

‘ দূরে থাকুন আমার থেকে ছিঃ উনি কিভাবে বললেন।’

ভাইয়া বললো, ‘ আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ তাই এতো লজ্জায় কি আছে ওনার যা খুশি বলুক।’

‘ আপনার লজ্জা শরম নাই‌’

ভাইয়া কিছু বললো না অন্য কথা বললো।

ভাইয়া বললো, ‘আমার খুব খিদে পেয়েছে তুই দুপুরে খেয়েছিস?’

‘ হুম। আপনি এখনো কিছু খাননি‌।’

‘ না এখন খাবো।’

“আচ্ছা খান।’

একটু পর ইমা আপু খাবার নিয়ে এলো আর ভাইয়া খেতে লাগলো আমার সামনে। আমাকেও কয়েকবার সাধলো আমি না করে দিছি।
দুপুরে পর এখন চারটার সময় কি আর খাওয়া যায়।
বিকেল থেকেই চাচি চেঁচামেচি করতে লাগলো তিনি হসপিটালে থাকবেন না। তা নিয়ে ঝামেলা‌। কোন ভাবেই তাকে রাখা যাচ্ছে না তাই বাসা যাওয়ার অনুমতি দিতেই হলো।

এসব শুনে আমি জেদ ধরে বসলাম আমিও বাসায় চলে যাবো। এবার ভাইয়া রাগে গজগজ করতে করতে আমার কাছে এসে বললো,

‘ এবার আমি পাগল হয়ে যাব। তোদের যন্ত্রণায়।’

আমি শোয়া থেকে বসে পরলাম। আর ভাইয়ার বাম হাত আঁকড়ে ধরে বললাম,

‘ প্লিজ ভাইয়া আমাকে নিয়ে চলেন। আমি এখানে থাকবো না। হসপিটালে আমার একটু ও ভালো লাগে না।আমি সুস্থ আছি আর যতটুকু অসুস্থতা আছে তাও কেটে যাবে বাসায় গেলেই।এখানে থাকলে আমি আরো অসুস্থ হয়ে যাব।’

আমার প্রতি রাগ হলেও ইহান ভাই আমাকে বকতে পারলো না। আর ফেলতেও পারলো না কথা। গম্ভীরতা বজায় রেখেই বললো,

‘দেখছি।’

ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ মুখ ঝলমল করে উঠল তা দেখে ভাইয়া রাগী চেহারা কেটে গেলো আমার গালে হাত রেখে কপালে কিস করলো।
রাত আটটায় আমরা হসপিটালে থেকে বাসার উদ্দেশ্যে র‌ওনার দিলাম। চাচির সাথে একজন নার্স এসেছে ইমা আপু আমাদের সাথে এলো তিনি দেখাশোনা করবে বলেছে।আমি আর ভাইয়া আমাদের গাড়িতে এলাম। চাচি কে ইমা আপুদের গাড়িতে আনা হলো।
ড্রাইভার সামনে আর আমি ও ভাইয়া পেছনে। ভাইয়া আমার মাথা বুকের মাঝে চেপে ধরে আছে। আর তার হাত আমার মাথায়। আমি চোখ বন্ধ করে আছি আর একটু পর পর চোখ খুলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাচ্ছি।

‘ মাথা ব্যাথা করছে?’

আমি মৃদু স্বরে বললাম, ‘ একটু একটু!’

‘ করবেই এজন্য আজ থাকতে বলেছিলাম। এখন কি এইভাবে গাড়িতে চলাচল করার সময়।’

‘ বকছেন কেন?’

‘ তো কি আদর করবো।’

আমি চমকে গেলাম। খালি আজেবাজে কথা বলে।
ভাইয়া আর কিছু বললো না। আমি ও কিছু বললাম না। বাসার কাছাকাছি আসতেই লতাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম একটা ছেলের সাথে। ওরা কিছু খাচ্ছে। ছেলেটাকে পাশ থেকে দেখেও চিনে ফেললাম এটা তো। তার মানে এর সাথে প্রেম করে আর আমাকে বললো না। ওকে সামনে পাই তারপর ধরবো।

লতা ইহান ভাইয়ের গাড়ি দেখেই তারাতাড়ি ছুটে বাসায় চলে এলো। সবাই গাড়ি থেকে নামতে নামতে লতা ভেতরে চলে গেলো।ইহান ভাই চাচি কে কোলে তুলে বাসার ভেতরে দিয়ে গেলো চাচির সে কি চিৎকার। তার পায়ে স্পর্শ লাগলেই নাকি ব্যাথা করে। আমাকে ইমা আপু ধরে নিয়ে এলো।
ইহান ভাই চাচি কে রুমে দিয়ে এসে আমার কাছে আসে আমি কেবল আমার রুমে এসেছি তখন ভাইয়া এসে আমাকে ইমা আপুর সামনেই কোলে তুলে নেয়। আমার চোখ দুটো রসগোল্লার মত বড় হয়ে যায়। ইমা আপুও অবাক।

ইহান ভাই ইমা আপুর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ ঊষা আমার ব‌উ তাই এখন থেকে ও আমার রুমেই থাকবে।’

ইমা আপু কিছু বলে না। ভাইয়া আমাকে তার রুমে নিয়ে চলে আসে। আমি লজ্জা তখন কিছু বলতে না পারলেও পরে বলবো ঠিক করেছি।
লতা বাসায় এসে হাফ সেড়ে বাঁচে। তখন ইলিনা বেগম চেঁচিয়ে পানি চায়। লতা দৌড়ে পানি নিয়ে যায়।

চাচা রাত নয়টায় আসে বাড়ি। তিনি অফিসে গেছিলো তার ইম্পর্টেন্ট মিটিং ছিলো। বাড়ি এসেই সবাইকে এখানে পায়। তিনি আজ এসেই সবার আগে ঊষার কথা জিজ্ঞেস করে লতা অবাক হয়। ঊষার চাচা এসেই আগে ঊষার রুমে গেছিলো কিন্তু ঊষা নাই তাই লতাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে লতা বলে,

‘ ঊষা তো ভাইজানের রুমে।’

চাচা যখন ভাইয়ার রুমে আসে আমি ভাইয়াকে বকছিলাম। তখন আপুর সামনে কোলে নেওয়ার জন্য। চাচাকে দেখে দুজনেই অবাক হয় চাচা এগিয়ে এসে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে আমি এখন কেমন আছি?

চাচার দিকে থেকে নিজের জন্য এটাই আমার জন্য অনেক ছিলো। কখনো এই মানুষটি আমার খোঁজ নেয় না। আমি ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকি। চাচা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়।
চাচার এই টুকু আদরে আমি হু হু করে কেঁদে ওঠে। ভাইয়া ভয় পেয়ে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে কাঁদছি কেন?

আমি বলি।

‘আমার কান্না পাচ্ছে কিন্তু কেন জানিনা।’

ভাইয়া আমার চোখ মুছিয়ে দিয়ে কাঁদতে মানা করে মাথায় চাপ পরবে এখন কান্না করা ভালো না।
আমি ফুপাতে থাকি।

তিনদিনের মধ্যে আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠি। ভাইয়া খুব কেয়ার করেছে। সব সময় করে এই সময়ে আরো বেশি করেছে। চাচির পা কিছু হয়নি। তেমনি আছে।তার মলিন মুখ টা দেখলেই কষ্ট লাগে।
আমার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া হলো না। তাই প্রাইভেট কলেজে ভর্তি হলাম।
চাচির কাছে আমি বিকেল হলেই যাই। তারপর মলম পায়ে মালিশ করে চলে আসি। চাচি আমার দিকে তাকায় আবার অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে কথা বলে না।
আমিও কিছু বলিনা।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here