এক মুঠো প্রণয় (সিজন টু)পর্ব ১০

0
112

#এক_মুঠো_প্রণয়
#সিজন_টু
#পর্ব_১০
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ

তখন ভোর। হসপিটালের বেডেই জ্যোতির বাবার নিস্তেজ দেহটা৷ চোখ বুঝে আছে৷রিপোর্ট আর ডক্টরের কথানুযায়ী উনার হৃদপিন্ডের একটি করোনারি ধমনি আটানব্বই শতাংশ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়াতে হার্ট এ্যাটাক করেছেন। সমাধানস্বরূপ করোনারি বাইপাস সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ জ্যোতির দাদীর সঞ্চয় আর বাবার এতদিনের দেওয়া টাকা থেকে জ্যোতিরা যা সঞ্চয়ে রেখেছিল সেসব মিলিয়ে অপারেশনের খরচ মিটে যাবে।জ্যোতি এক মুহুর্ত বাবার দিকে তাকিয়েই থেকেই ফের বেরিয়ে আসল হসপিটালের করিডোরে।ঠিক তখনই মিনার এসে দাঁড়াল পাশে। মৃদু স্বরে বলল,

“ এতো চিন্তা করছিস কেন? দেখবি সবটা ঠিক হয়ে যাবে। ”

জ্যোতি নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।অন্যমনস্ত হয়ে মৃদু আওয়াজে শুধাল,

“ মিথিটা খুব কান্না করছিল মিনার ভাই। খোঁজ নিয়েছিলে ওর?”

মিনার আশ্বাস দিল। বলল,

“ দাদী আছে তো। সামলে নেবে। তুই চিন্তা করিস না।”

জ্যোতি ছোট ছট চোখে চাইল। নিজের চিন্তান্বিত মুখ কারো সম্মুখে তুলে ধরতে চাইল না হয়তো। তাই তো সামনে থেকে সরে যাওয়ার জন্য বলল,

“ ওর সাথে কথা বলা উচিত এখন।একবার কল করে আসি? ”

মিনার উত্তর দিল,

“আমি কল করেছি একটু আগে জ্যোতি। তুই শুধু শুধু এত চিন্তা করছিস।”

“ করছি না চিন্তা।”

“ তোর মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। ”

জ্যোতি সে প্রসঙ্গ বদলাতে চাইল৷মৃদু আওয়াজে মিনারের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,

“ আব্বার অপারেশনটা আজই হবে তাই না? ”

“ সব ঠিকঠাক হলে আজই হবে।”

জ্যোতির চাহনি নিষ্প্রভ। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে হঠাৎ জিজ্ঞেস করল,

“ ওহ।খেয়েছিলে কিছু মিনার ভাই? কাল রাতে নিশ্চয়ই তুমি বা চাচা কারোরই খাওয়া হয়নি। তোমরা বরং বাইরে কোথাও খেয়ে নাও মিনার ভাই।”

মিনার বাঁধ সাধল।উত্তরে বলল,

“ না,এখন খাব না । মামার জ্ঞান ফেরার পর নাহয় খেয়ে নিব।”

এরপর আর কথা হলো না মিনারের সাথে। চুপচাপ একপাশে বসে থাকল জ্যোতি।একবার তাকিয়ে দেখল মিনার, মেহেরাজ, তার চাচা আর মেহেরাজের চাচাদের। এতগুলো মানুষ এসে হাজির যে মানুষটার জন্য। অথচ সেই মানুষটাই এখন সজ্ঞানে নেই। জ্যোতি মোবাইল নিয়ে একবার মিথিকে কল দিল।ওপাশ থেকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কল তুলল মিথি। জ্যোতি নরম গলায় শুধাল,

“আব্বা ঠিক হয়ে যাবেন মিথি। চিন্তা করিস না হুহ?আব্বা খুব শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে।”

মিথি বোধহয় কথাটাতে আশ্বস্ত হলো না। চাপা ক্রন্দনরত সুরে শুধাল,

“জ্যোতি? আমি আব্বাকে দেখতে যাব।দাদী নিয়ে যাবে বলেছে আমায়। এখন রওনা দিলে আব্বার সার্জারির আগে আগেই পৌঁছে যাব না আমি?”

“তোর আসার প্রয়োজন নেই মিথি। আব্বা দ্রুতই সুস্থ…”

জ্যোতি বাকিটা বলার আগেই মিথির জেদি স্বর আসল ওপাশ থেতে,

“ আমি যাব জ্যোতি। তোর কেন নিষেধ একে?দাদী বলেছেন নুসাইবাদের বাসায় উঠবে ওখানে গিয়ে। তোর তো সমস্যা হবে না।”

“ উহ, আমি তা বলিনি মিথি। আচ্ছা দাদী নিয়ে আসলে নিষেধ নেই। খেয়ছিস রাত থেকে?”

“না। ”

“খেয়ে নে হুহ?এখানে এসে আব্বাকে দেখতে হবে না? খেয়ে তারপর রওনা দিবি হুহ?”

ওপাশ থেকে এবারে উত্তর এল না। জ্যোতি ফোন রাখল চোখ বুঝে। পরের কয়েক ঘন্টা সেভাবেই স্থির হয়ে বসে থাকল। হঠাৎ জানতে পারল তার বাবার জ্ঞান এসেছে৷ তবুও সাহস করে কে জানি না যাওয়া হলো না বাবার সামনে। অস্বস্তি, অনুতাপে স্থির বসে থেকে হাত কচলাতে লাগল কেবল। ঠিক তখনই টের পেল পাশাপাশি বসা মেহেরাজের উপস্থিতি। কানে এল তার গম্ভীর স্বর,

“ বসে আছিস কেন এখনো?চাচার জ্ঞান ফিরেছে জানিস না?”

জ্যোতি নিষ্প্রভ স্বরে উত্তর দিল,

“জানি মেহেরাজ ভাই। ”

মেহেরাজ ভ্রু কুঁচকাল। জ্যোতির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

“ দেখা করবি না?”

“আব্বা সুস্থ হওয়ার পর দেখা করব একেবারে। ”

মেহেরাজ এবারে সত্যিই বিরক্ত হলো জ্যোতির উপরে। গম্ভীর স্বরে শুধাল,

“এটা কোন ধরণের কথা? তোর বাবা অসুস্থ, সন্ধ্যার পর অপারেশন হবে অথচ তুই দেখা করে আসবি না এর আগে?”

দৃঢ়গলায় জবাব দিল জ্যোতি,

“নাহ।”

মেহেরাজ কপাল কুঁচকে নিল। শান্ত অথচ দৃঢ়স্বরে বলে উঠল,

“এটা ঘাড়ত্যাড়ামি হচ্ছে না জ্যোতি? সব জায়গায় তোর এই ঘাড়ত্যাড়া ভাব দেখানোটা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত মনে হয় তোর? ”

নিষ্প্রভ কন্ঠে উত্তর দিল জ্যোতি,

“এক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত নয় জানি আমি। তবুও যাব না। ”

মেহেরাজ দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করল এবারে,

“ কারণটা কি?তোর রাগ, জেদ নাকি ক্ষোভ?এমন একটা পরিস্থিতিতেও রাগ, জেদ আর ক্ষোভকেই প্রাধান্য দিচ্ছিস? ”

জ্যোতি ঠোঁটে ঠোঁচ চাপল। স্থির চাহনিতে মেহেরাজের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল,

“ সংকোচ। ”

“ সংকোচকে বেশিসময় গুরুত্ব দিতে নেই। ”

জ্যোতি মাথা নাড়াল এবারে। বলল,

“ আমি কয়েকবার দেখে এসেছি আব্বাকে। এই মুহুর্তে যাওয়াটা ঠিক কতোটা যুক্তিযুক্ত বুঝে উঠছি না তাই। যায় হোক আপনি কাজ ছেড়ে এখানে পড়ে আছেন। অসুবিধায় পড়ে গেলেন তাই না?”

মেহেরাজের গলা দৃঢ় হলো। উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,

“ আমার মনে হয় না কারোর বিপদে পাশে থাকলে অসুবিধায় পরতে হয়। চাচারা না থাকলেও আমি থাকতামই।”

জ্যোতি মাথা তুলে তাকাল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে। প্রশ্ন ছুড়ল,

“কেন?”

“এটুকু দায়িত্ব আমার আছে তাই৷ ”

কথাটা গম্ভীর স্বরে দিয়েই চলে গেল মেহেরাজ। জ্যোতি একবার সেদিকে তাকিয়েই নজর সরাল। চোখ বুঝল প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।আসলেই কি বাবার চোখে চোখ মেলানোর এতোটা সংকোচকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত? এতদিনকার রুক্ষ ব্যবহার গুলোতো ক্রমশ হয়ে আসছিলই ছোটবেলা থেকে৷ সে তো ইচ্ছে করেই বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করত না। তবুও এতোটা সংকোচ বোধ কেন? তবুও কেন এতোটা দ্বিধা হচ্ছে আব্বার চোখের সামনে যেতে?

.

হসপিটালে কেবল জ্যোতি আর মেহেরাজই থাকল দুপুরে। মিনার আর জ্যোতির চাচা মেহেরাজের চাচাদের সাথেই তাদের বাসায় গেল কিছুটা সময় আগে। নির্ঘুম রাত, এতদূর ছোটাছুটি তার উপর না খেয়ে থাকা। এতোটা দখলের পর খাওয়া আর গোসলের জন্যই মূলত মেহেরাজে চাচাদের সাথে আসা। সে উদ্দেশ্যে ওয়াশরুমে গিয়ে গোসলও সেরে নিল মিনার। অন্য পোশাক না থাকায় সে পোশাকই পুনরায় পরিধান করতে হলো। আর সে কারণেই সম্মুখীন হতে হলো উদ্ভট এক প্রশ্নের,

“একি, আপনার জন্য বাইরে সবাই অপেক্ষা করছেন। আর আপনি এখনো গোসল সারেননি। সে একই পোশাকেই বসে আছেন? ”

মিনার চোখ গোল গোল করে তাকাল। গোসল সেরে বের হয়েই তোয়ালে দিয়ে চুল মুঁছে নিয়ে রুমের একটা চেয়ার টেনে বসেছিল সে। সেই মুহুর্তেই রুমের মধ্যে সামান্তা আসল। অবশ্য সামান্তার আসাটা দেখে তাে অতোটাও অবাক লাগেনি যতোটা এই কথা গুলো শুনে লাগল। এখনও তার ভেজা চুল বেয়ে পানি গড়িয়ে আসছে কপাল বেয়ে। সত্যিই কি বুঝা যাচ্ছে না সে গোসল করেছে? মৃদু হেসে ভদ্র ভাবে বলল,

“ আমার মাথার চুল ভেজা। তুমি বোধহয় খেয়াল করোনি সামান্তা। ”

সামান্তা চোখ ছোট ছোট করে চাইল এবারে। সত্যিই খেয়াল করেনি সে। একই পোশাকে দেখেই ভেবে নিয়েছিল এই লোক এখনো গোসল করেনি।মৃদু স্বরে বলল,

“ ওহ যাক, গোসল করেছেন তাহলে। আপনাকে আব্বু ডেকেছেন খাওয়ার জন্য। হসপিটালে ও যেতে হবে বোধহয় তাই। ”

মিনার উঠে দাঁড়াল। উত্তরে দ্রুত বলল,

“ ওহ। আসছি এক্ষুনি। ”

সামান্তাও চলে যেতে নিচ্ছিল। পরমুহুর্তেই ঘুরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

“ আপনার নামটা ভুলে গেছি।কি যেন নাম আপনার?”

মিনার শান্ত গলায় উত্তর দিল,

“মিনার।”

সামান্তা মাথা নাড়াল দ্রুত। বলল,

“হ্যাঁ মনে পড়েছে, জ্যোতি আর মিথির মুখে শুনেছি। ”

মিনার অল্প হাসল এবারে। মাথার চুল গুলোকে হালকা ঝাড়া দিয়ে বের হয়ে আসল রুম ছেড়ে।মনে মনে ভাবল, মেয়েটা নিঃসন্দেহে সুন্দরী।ফর্সা ত্বক, বড় বড় চোখ, লম্বা চুলের অধিকারিনী। এক কথায় তাকে সুন্দরী সম্বোধন ছাড়া অন্য কোন সম্বোধন দেওয়া যায় না বটে। আর সুন্দরী মেয়েদের আশপাশে বেশিক্ষন ভদ্র ছেলেদের থাকতেও নেই বোধহয়।

#চলবে…

[ পর্ব খুব ছোট। আপাতত এই সপ্তাহটা অনিয়মিত দিব পর্ব। মানে একদিন পরপর।ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন, কেমন হয়েছে জানাবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here