অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব ২৫

0
130

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৫ (ধামাকা পার্ট-
১৮+এলার্ট)

“আপনি যে এক মেয়ের পিতা সে কথা ভাবতেও ঘৃণা লাগে। আপনি পিতা নন বরং এক ন’র’পশু। সেই ন’র’পশু যার হাতে অজস্র খু’ন অব্দি হয়েছে। কি ঠিক বলেছি না মিস্টার লিয়াকত? আপনি কি ভেবেছেন আপনার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অজ্ঞাত? তাহলে বলে দেয় এই আফরাজ ফাহিম কাঁচা কাজ করে না। সে তার শত্রুর সম্পর্কে এ টু জেট খবরাখবর রাখে। হ্যা বলতে পারেন এর জন্য কম কষ্ট পোহাতে হয়নি। মনে পড়ে মৃতসম মিসেস নিপার নাম?”

মুখ বাঁধা অবস্থায় নড়াচড়া করে নিজেকে ছড়ানোর চেষ্টা করছিল জনাব লিয়াকত। কিন্তু সম্ভব না হওয়ায় নীরব হয়ে যান। আফরাজ আর তার সঙ্গী তার গাড়ি-কে ট্রাক ভাড়া করে জোরেসরে প্রতিঘাত করে। যার ফলে তার গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে তিনিও মারাত্মক আহত হোন। আঘাতের প্রতিক্রিয়ায় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আফরাজ পৈশাচিক দৃষ্টিতে তার কাঙ্ক্ষিত শিকারির ঘাতময় অংশ দেখে তার সঙ্গের দিকে তাকায়। তার চোখজোরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। দু’জন তাকে ধরে গাড়ির ব্যাক সাইডে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখল‌। তাদের গাড়ির এমুহুর্তে উপস্থিত আছে দাহাব এহসান এর গুলিস্তানে(কল্পিত)। যেখানে দূর থেকে দাহাব এহসান এর ভাড়াটে লোক দেখা যাচ্ছে। তাদের নজরে এখনো অব্দি পড়ল না আফরাজ আর তার সঙ্গী। ততক্ষণে পিটপিটিয়ে চোখজোড়া খুলে বসেন জনাব লিয়াকত। তার শরীর দড়ি বাঁধা দেখে আতংকে কাঁপছে। আফরাজ কে দেখে যতটা না ভয়ে আছে তার চেয়েও ভয়ানক লাগছে তার সঙ্গীকে। অথচ তিনি চিনেন না তাকে। তিনি না চিনলেও আফরাজ এর সঙ্গী ভালো করে তাকে চেনে। মূলত আফরাজ এর কথাটি শুনে তিনি ভয়ানক বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকান। আফরাজ বাঁকা হেসে বলে,

“আমার না তোকে সম্মান নয় লা’থি মা’রা উচিৎ। তবুও এই উত্তম কাজ আমি নয় আমার সঙ্গী করবে অবশ্য। তোকে ‘তোকে’ বলাতেই মানায়। তোর জন্য ‘আপনি’ শব্দটাও হা’রা’ম কু’ত্তার বাচ্চা কোথাকার। আচ্ছা! একটা কথা আজ বুঝতে পারলাম, তাবাসসুম তোর অংশ বলেই আমার ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেনি। জানিস কি? যাকে একপলক দেখতে গিয়েও দেখলি না। তার অবস্থা কেমন? তোর শ্বশুর আমার বিবিজান কে অপ’হর’ণ করে রেখেও তোর মেয়ের শরীরের স্বাদ নিয়ে নিজের পোষা কু’ত্তাদের কাছে বিলিয়ে দিয়ে ছিল। ছিঃ সেই তুই পিতা হয়ে খু’ন হওয়ার ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলি। এভাবেই তো নিজের প্রথম স্ত্রী-কেও হারালি। কেমন অনুভূতি ছিল? যখন নিজের স্ত্রী-কে ঐ শ’য়’তানের হাতে সঁপে ছিলি? মিসেস নিপার চরিত্র হাজারে উত্তম ছিল বলেই তার সঙ্গে বা’জে আচরণটা করেছিলি। তোর মনে এই ভাবনা ছিল যে, তুই দাহাব এর মেয়ে-কে বিয়ে করলে আজীবনের মত ধনসম্পদের সাগরে ভাসবি‌। কিন্তু আফসোস তোর সেই ধারণায় জল ঢেলে পুরো এক’বছর এর জন্য বন্দীঘরে ফেলে দিল দাহাব এ। আই এপ্রিসিয়েট দিস। বাট সরি টু সে তোর সাথেও সেই কার্যসম্পন্ন হবে যার হক তোর আছে। ঠিক বললাম না নাকিব?”

নাকিব মুনসিফ এর কপালের রগ ভেসে আছে। সে পারছে না এই মুহূর্তে লিয়াকত এর গলা ঘাড় থেকে আলাদা করে দিতে। আফরাজ এর কথায় ধর্য্য ধরে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে আছে। কিন্তু তার কথার ধরণে সে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। তার ঠোঁটের কোণায় পৈশাচিক হাসি ফুটল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)আফরাজ তার কাছে গিয়ে লিয়াকত কে দেখিয়ে বলে,

“এই নাকিব মুনসিফ কে চিনেছেন ফুপাজি? এই হলো নাদিম মুসাররাত ওরফে মোবারক আলী আর মেহজাবিন সিরাত এর বড় পুত্র। যার বর্তমান পেশার কারণে সাফল্য একজন প্রভাবশালী পুরুষ নাকিব মুনসিফ নামে পরিচিত। মনে আছে তো? সেদিন আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-কে খু’ন করার সময় নাদিম-কে পেলেন না। আমার শ্বশুর তাকে কষ্টের জীবনে ফেললেও তিনি জানতেন একদিন তার ছেলে তোদেরকে নরক দেখাবেন। সেই থেকে খবরাখবরে আমরা দু’জন একে অপরের বিজনেস পার্টনারও হয়ে গেলাম। আচ্ছা এতকথা রাখি। চলেন তো নাদিম ভাই আপনার কাজ শুরু করেন। আমি গাড়ির উপর বসে ফিল্ম দেখি। অনেকদিন হইল ফিল্ম দেখার সুযোগ পায় না। কোথায় এই কনকনে শীতে বিবিজান-কে নিয়ে বিছানায় শুয়ে রোমান্টিক হবো তা না ইঁদুরের কাছে নিজের দাম দেখাতে হচ্ছে।”

“এ শা’লা আমার বোনের নামে এসব আমার সামনেই বলছিস লজ্জা লাগে না তোর?”

“চুপ শা’লা আমি নাকি তুই হ্যা? তোরে যে মুরগি জবাই করতে দিছি, সেই শোকরিয়া কর। নাহলে হিরোগিরি থেকে জিরোগিরি নিয়েই থাকতি। আমি তো ছাগলকে শিকার করার খুশিতে বসে আছি।”

নাদিম হাসল। হিংস্র দৃষ্টিতে লিয়াকত এর দিকে তাকিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে ধারালো ছুরি বের করে। যা দেখে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল জনাব লিয়াকত এর। তিনি ঢোক গিলে মুখ নড়াচড়া করে ‘না’ বোঝাচ্ছে। কিন্তু যার অন্তরে শোধের আগুন জ্বলছে তাকে থামানো দায়। নাদিম লিয়াকতের কলার চেপে মাটিতে টেনে হেঁচড়ে ফেলল। দিকবেদিক বাদ দিয়ে কট করে আলাদা করে ফেলল মাথাটা। নিভে গেল এক জ’ল্লা’দ এর কাহিনী। আফরাজ এর বুকেও প্রশান্তি বইল। তার দাদির কথা স্মরণে আসায় চোখজোড়া পানিতে ভড়ে যায়। নাদিম বিষয়টা খেয়াল করল। আফরাজ এর কাঁধে হাত রেখে আশ্বাস দিল। সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গম্ভীর গলায় বলে,

“এবার মুখোমুখি হওয়ার জন্য এই কু’ত্তার চুল ধরে ছুঁড়ে মা’র গুলিস্তান এ।”

নাদিমও বিনাদ্বন্দ্বে কাজটি করে ফেলল।

____

নাজীবা কবে ঘুমিয়ে পড়ল তার জানা নেই। আকস্মিক শরীরে কারো হাতের স্পর্শে সে ঘাবড়ে জেগে উঠল। দেখতে পেল রুমের মধ্যে দু’জন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মুখশ্রী দেখে মনে হচ্ছে এস্থানে সবকিছু স্বাভাবিক আছে। সে কাকুতিমিনতি করে বলে,

“আপু আমায় যেতে দিন। ঐ শ’য়’তানের বুড়ো আমাকে বিয়ে করতে চাই। প্লিজ আমাকে যাওয়ার রাস্তা করে দিন।”

মেয়ে দুটো চমকে গেল। তারা আসলে বুঝতে পারেনি কনে তার হবু বর-কে বুড়ো কেনো বলল? তাদের মধ্যে একজন বিরক্তির সুরে বলে,

“দেখুন ম্যাম আপনার তো আল্লাহর কাছে শোকরিয়া করা উচিৎ ওমন হ্যান্ডসাম ছেলেকে বর হিসেবে পাবেন বলে। আমরা তো দেখে ফিদা হয়ে গেছিলাম। কিন্তু এই আপনাকে বিয়ে করার জন্য তিনি আমাদের এখানে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আনিয়েছেন। ভাবতে পারছেন কতটা লাকি আপনি হুম? আচ্ছা এসব ছাড়েন এখন। আসেন আপনাকে রেডি করতে হবে।”

নাজীবা তাদের কথায় হতবাক। সে পুরোপুরি রুমটা খেয়াল করে দেখল। সে যে বন্দী রুমে ছিল এই রুম সেই রুম নয়। বরং আলিশান সৌন্দর্যের কারুকাজে রুপিত একটি রুমের বিছানায় সে এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু তার মনে হচ্ছে সে যাবত কয়েক ঘণ্টা বোধহয় ঘুমিয়েছে‌। তাকে এই রুমে আনল কে? শরীর শিউরে উঠল। কাঁপা গলায় মেয়ে দুটোর দিকে তাকিয়ে বলে,

“আ আমাকে এখানে এনেছে কে? মানে আমি তো আরেক জায়গায় ছিলাম? আমাকে আনল কে একটু বলবেন?”

“বাহ-রে ম্যাম আপনার হবু বর ছাড়া আর কেই বা আপনাকে এখানে আনার সাহস পাবেন হুম? তিনি সকলের সামনে আপনার কোমরে হাত রেখে কোলে করে এই রুমে এনে রাখছেন।”

এসব বলে তারা মিটমিটে হাসতে লাগল‌। অন্যথায় নাজীবার শরীর ঘৃণায় ঘেমে গেল। ঠান্ডার কোনো অনুভূতিও তার মাঝে হচ্ছে না। কেমনেও বা হবে যাকে ঘৃণা করে সেই লোক কিনা তার শরীরটাকে এই রুম অব্দি এনেছে। দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করতে লাগল সে। মেয়ে দুটো অবাক হলো। তারা গিয়ে মেয়েটার পিঠে মালিশ দেয়। নাজীবার এই নিয়ে দু’বার বমির কারণে শরীর একেবারে দূর্বল হয়ে পড়েছে। মেয়ে দুটো তৎক্ষণাৎ ভিটামিন খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে। কেননা নাজীবার শরীরের অবস্থা দেখে তাদের মনে খটকা লেগে গেছে। মেয়েটি ভিটামিন রেডি করে নাজীবার মুখে দেয়। সে খেয়ে নিজেকে সামলে নেয়। তবুও হাত-পা যেন অবশ হয়ে গিয়েছে। সে কাতর দৃষ্টিতে পুনরায় বিনতি করল।
কিন্তু মেয়ে দুটো অশুনা করে তাদের কাজ আরম্ভ করে। নাজীবা বুঝতে পারল তার এখন পালানোর রাস্তা বন্ধ। অযথা শরীর নেতিয়ে পড়ছে দেখে পুতুলের মত বসে রইল। মেয়ে দুটোও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।

ঘণ্টাখানেক পরে মেয়ে দুটো নাজীবা-কে আগলে বিয়ের মঞ্চে এলো। তার চোখজোড়া জুড়ে আফরাজ কে খোঁজে চলেছে। মানুষটাকে একপলক দেখার জন্য সে কাতরাচ্ছে। তার চোখের দৃষ্টি পড়ল তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-কুসুমা ভাবীর উপর। দাদি শ্বাশুড়ি-কে না দেখে ভাবল বোধহয় অসুস্থ। তাদের অবস্থাও করুণ। গু’লি হাতে ঘেরাও করে রেখেছে তাদের। আশপাশে অন্যান্য লোকগণ দেখেও প্রতিবাদ করতে পারছে না নাজীবা। আশ্চর্যের বিষয় লোকগণও হাস্যজ্জ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। যেনো এখানে কোনো মজার অনুষ্ঠান হচ্ছে। তার পরিবারকে আড়ালে খু’ন করার দ্বায়ে হলেও দাহাব এই ব্যবস্থা নিয়েছে। এব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারল সে। নিজের স্বামীকে না দেখে আজ তিনদিন পাড় করে দিল। সেই যে মানুষটা অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের অপারেশন রুমে ছিল তার পর থেকে আর খবর অব্দি পায়নি। করুণ দৃষ্টিতে বরের বেশে বসা পাগড়ি পরা ব্যক্তিকে দেখে নাজীবার ক্ষোভে শরীর কাঁপছে। দাহাব এর পাশে নাজীবা-কে জোরপূর্বক বসানো হলো। সে উঠতে গেলেই এক হাত তার হাতকে মুঠোবদ্ধ করে নেয়। শরীরে অজানা এক শিহরণ বয়ে গেল তার। সে অবাক চোখে তার পাশে বসা ব্যক্তিকে দেখার জন্য হাঁসফাঁস করতে লাগল। কাজি ধীরস্থির ভাবে বিয়ে পড়ানো আরম্ভ করল। এ দেখে নাজীবার হৃদপিন্ড জোরে জোরে লাফাচ্ছিল। একে তো তার পরিবার বন্দিদশায় আছে তার উপর আফরাজ কোথায় সেটাও জানে না। এই বর বেশে পুরুষটাও বা কে সেটাও বুঝতে পারছে না। দ্বিধান্বিত চোখে সে নিজেকে সামলাতে হিমশিম খেতে লাগল। মেয়ে দুটো নাজীবার অবস্থা দেখে ঘাবড়ে তৎক্ষণাৎ স্যার অর্থাৎ বর-কে জানায়। কানে ফিসফিসিয়ে বলায় নাজীবা শুনতেও পেলো না। বর আড়চোখে বউয়ের দিকে তাকিয়ে কাজিকে ইশারা করল। তিনি কাছে এলে বর ফিসফিসিয়ে কি যেনো বলল। বরের কথা শুনে তিনি মাথা নেড়ে সায় দিলেন। নাজীবার কাছে এসব সহ্য হচ্ছিল না। তার মস্তিষ্ক পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে গেছে। সে করুণ দশায় নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল না আর। কাজি যখন কবুল বলতে বলল। তখনি সে বিষের শিশি খুলে মুখে নিতে গেলে ঠাস করে চ’ড় খেয়ে যায়। সকলে চমকে গেল। পাগড়ি সরিয়ে নাজীবা-কে চেপে ধরে পাশ ঘেঁষে বসিয়ে বলে,

“আরেকবার যদি গলদ কান্ড করেন তবে আপনার গাল আর গাল রাখবো না মনে রাখিয়েন বিবিজান।”

আফরাজ-কে স্বয়ং বর বেশে দেখে নাজীবার হুঁশ উড়ে গেলো যেনো। ঠোঁট কাঁপছে বেচারীর। কারো পরোয়া না করে আফরাজ-কে চেপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠে। কাজি জোর গলায় পুনরায় কবুল বলতে বলে। সেও সংকোচহীন বলে ফেলল। স্বামীর বুকে মাথা রেখে বিড়ালছানার মত চেপে রইল। আফরাজ আলতো হেসে কবুল বলে দেয়। কাজি ‘আলহামদুল্লিল্লাহ্’ বলে মিষ্টিমুখ করলেন। একে একে মিসেস ফেরদৌসী, জনাব ইসমাইল এসে দোয়া করে দিলেন। এই ফাঁকে পিতা সমতুল্য শ্বশুর ক্ষমা চাইতে গেলে নাজীবা তৎক্ষণাৎ আগলে কেঁদে দেয়। ‘বাবা বাবা’ বলে ফুঁপায়। মিসেস ফেরদৌসী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। দু’জন কে জড়িয়ে সে প্রশান্তি অনুভব করল। পুনরায় তার মনেপ্রান্তে বাবা-মায়ের মুখ বেশে উঠে। কুসুমা এসে কথা বলতে নিলে খেয়াল করল নাজীবার শরীর টলছে। সে গিয়ে হাত ধরে, জাগ্রত হলো নাজীবা। তার ঘুমঘুম পাচ্ছে খালি। আফরাজ মৃদু হেসে বিবিজান-কে কোলে উঠিয়ে নেয়। নাজীবার ঘুমের মাঝে টলছে। বিবিজান এর কপালে চুমু এঁকে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। আড়ালে নাদিম তার চোখজোড়া মুছে নেয়। বোনকে এতবছর পর কাছ থেকে দেখেছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)থাক না আজ নাহয় সুযোগ পেল না কাছাকাছি গিয়ে আলতো হাতে বোনকে আগলে নেওয়ার। পরের দিন বউভাতের অনুষ্ঠানে তো সে থাকছে। তখন নাহয় বোনকে জড়িয়ে ধরে এতবছরের সাধনা পূর্ণ করবে। বোনের সবটা আবদার কোলজুড়ে পূরণ করবে। নাজীবা-কে ফ্রেশ করিয়ে গভীরভাবে চুমু খেলো আফরাজ। নাজীবার চোখ-মুখ কান্নার কারণে ফুলে গিয়েছে। স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ বকতে লাগল। তার শরীর হাতড়ে মা’ই’রের দাগ দেখায়, তার কোন কোন স্থানে দাহাব বুড়ো হাত লাগিয়েছে তা দেখিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,

“আপনি আমাকে লুকিয়ে নেন প্লিজ আমার খুব জ্বলছে বুকটা। আপনার জন্য আমি অনেকবছর অপেক্ষা করেছি। জানেন বিয়ের মঞ্চে কবুল বলতে বলছিল যে, আমি তো মরে যেতে নিচ্ছিলাম। আপনাকে খুব ভালোবাসি জামাইজান। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আপনি যা বলবেন তাই করব। আর কখনো আপনার সাথে রা’গ দেখাবো না।”

বাচ্চাদের মত মেয়েটা বকে যাচ্ছে। আফরাজ শান্ত চোখে তার বিবিজান এর মর্মান্তিক অবনতি লক্ষ করছে। সময় ব্যয় করল না। অপেক্ষা সমাপ্তি টেনে ওষ্ঠজোড়া চেপে ধরে নেশাধায়ক গলায় আওড়ায়,

“হুসসস আর কথা নয়। ভুলে যাও সেসব কথা। যে কষ্টসমূহ ভোগ করেছো তার চেয়ে হাজার গুণ তোমায় সুখের সাগরে ভাসাবো আজ।”

নাজীবা চোখজোড়া বুজে নিল। আফরাজ আর কোনো দিক খেয়াল দিলো না। দু’নর-নারী নিজেদের মাঝে জমাকৃত কষ্ট বণ্টনে লেগে পড়ল। রাত প্রায় তিনটার কাছাকাছি হবে। রুমের মধ্যে মৃদু ঠান্ডা হাওয়ার অনুভূতিতে আফরাজ বিবিজান-কে বুকের মাঝে চেপে রাখল। চোখ খুলে দেখে তার বিবিজান ঠোঁট ফাঁকা করে বাচ্চাদের মত ঘুমাচ্ছে। কে বলবে এ মেয়েটা যুবতী নারী? এখনো বাচ্চামি গেলো না তার। বিবিজানের শরীরে আফরাজ তার গরম জ্যাকেট পরিয়ে দেয়। কম্বল দিয়ে দু’জনের শরীরকে ভালো করে চাপিয়ে নেয়। যেনো কনকনে ঠান্ডাভাব কমে। ঘুমন্ত পরীর দিকে চেয়ে আনমনে বলে,

“বিবিজান তোমার উপর হওয়া জুলুমের শোধ আমি নেবোই। দাহাব-কে হাজারো হুলের কষ্টে বিদবো।”

বিবিজান কে স্পর্শ করার স্পর্ধা বুঝিয়ে দেবে। তাদের পুনরায় বিয়ে হয়েছে। আগেরবার ধুমধাম করে না হলেও এবারের বিয়ে ছিল জনগণ সমেত অনুষ্ঠিত বিয়ে। যার কারণে সকলেই এখন অবগত আফরাজ বিবাহিত। তার নিজস্ব এক নারী আছে। সে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বিবিজান কে বলেনি। এতে তার বিবিজান এর সেসময় কার কান্ডের কথা ভেবে মুচকি হাসল। তার চোখে যদি বিষের শিশি না পড়ত তবে অঘটন ঘটে যেতো। দিব্য সাধনার পর পেয়েছে তার বিবিজান কে। তাই তো বাসর রাতে নাজীবার কান্নায় বলা কথাগুলোর সাপেক্ষে সেও আদরে ভরিয়ে দিল। দাহাবের স্পর্শিত স্থানগুলোতে আফরাজ স্বামী হিসেবে তার পবিত্র স্পর্শে নিজস্ব নারী-কে পূর্ণ করেছে।

চলবে….
(অনেক বড় দিলাম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here